রাজধানীর মৌচাকে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের বেজমেন্ট পার্কিংয়ে একটি গাড়ির ভেতর থেকে দুই জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে মেডিকেল কলেজের নিরাপত্তারক্ষীরা গাড়ির ভেতর দুজনের লাশ দেখে রমনা থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদ আলম জানান। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমরা দুজনের লাশ পেয়েছি। নিহত দু‘জনই পুরুষ। একজনের নাম জাকির হোসেন (৪০), পেশায় গাড়িচালক। অপরজন হলেন মিজান (৪২)। তাঁদের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল এলাকায়। এর মধ্যে জাকিরের লাশ ছিল চালকের আসনে। পাশের আসনে ছিল মিজানের লাশ।
হাসপাতালকর্মীদের বরাত দিয়ে উপ কমিশনার সাংবাদিকদের জানান, সাদা রঙয়ের ওই প্রাইভেটকার রোববার রোগী নিয়ে আসার কথা বলে মেডিকেলের পার্কিংয়ে প্রবেশ করে। পরে চালক গাড়ি থেকে নেমে চলে যান। এরপর থেকে গাড়িটি সেখানেই ছিল। গতকাল সোমবার দুপুরে বিষয়টি নিরাপত্তাকর্মীদের নজরে আসে। ভেতরে লোক দেখে ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে তারা থানায় খবর দেয়।
ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সিআইডির ফরেনসিক টিম গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করেছে। লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রাইভেটকারটির নম্বর প্লেটে ‘ঢাকা মেট্রো গ ৩৬-৩৭৪৫’ লেখা ছিল। এ নম্বর যাচাই করে পুলিশ জানতে পেরেছে, গাড়ির মালিকের নাম জোবায়ের আহমেদ সৌরভ এবং চালকের নাম নিজাম।
পুলিশ বলেছে, নিহত দুজনেই পুরুষ। তাঁদের মধ্যে একজনের লাশ গাড়ির চালকের আসনে ও আরেকজনের লাশ পেছনে যাত্রীর আসনে পাওয়া গেছে। যাত্রীর আসনে থাকা লাশের মুখ থেঁতলানো অবস্থায় ছিল। গাড়ির দরজা সব খোলা ছিল। পার্কিংয়ের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, রোববার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে গাড়িটি সেখানে ঢোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গাড়ির ভেতরে দুজন কখন, কীভাবে মারা গেলেন, গাড়িটি কে বা কারা সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। হাসপাতালে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, জাকির ও মিজান নামের ওই দুই ব্যক্তি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীকে এলাকায় নেওয়ার জন্য তাঁরা ঢাকায় এসেছিলেন। দুজনেরই শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে গেছে। তাঁদের হত্যা করা হয়েছে, নাকি অন্য কোনো কারণে দুজনের মৃত্যু হয়েছে, এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলছে না পুলিশ।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, হাসপাতালের রেকর্ড বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, রোববার ভোর ৫টা ৩৫ মিনিটের দিকে গাড়িটি গ্যারেজে প্রবেশ করে। এর পর থেকে সেটি বেজমেন্টের (ভূগর্ভস্থ) তৃতীয় তলার এক কোনায় পার্ক করা ছিল।
সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলের সিকিউরিটি ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে পার্কিংয়ের জায়গা খালি আছে কি না, দেখার জন্য তিনি বেজমেন্টের তৃতীয় তলায় যান। এসে দেখেন, গাড়ির ভেতরে দুজন আছেন। বাইরে থেকে কয়েকবার ডাকাডাকি করলেও সাড়া না পেয়ে দরজা খোলেন। তখন দেখেন, তাঁরা মারা গেছেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা পুলিশে খবর দেয়।
মিজানুর রহমান বলেন, দুজনের মধ্যে একজন চালকের আসনে, আরেকজন চালকের পেছনের আসনে ছিলেন। চালকের সিট পেছন দিকে হেলানো ছিল।
নিহতদের মধ্যে জাকির গাড়ির চালক এবং মিজান তাঁর আত্মীয় বলে পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার মাসুদ আলম জানিয়েছেন। তিনি বিকেলে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা গাড়ির মালিককে শনাক্ত করতে পেরেছি। মালিক সৌরভের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল এলাকায়।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছে জানিয়ে উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য দুজনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী যুবক নিহত, আহত ১
পল্লবীর মিরপুর-১২ নম্বরে বাসের ধাক্কায় মো. ইমন মোল্লা (২৬) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তাঁর বন্ধু মো. সিয়াম (২৪) সামান্য আহত হয়েছেন। রোববার রাত প্রায় ১১টার দিকে মিরপুর-১২-এর চৌরঙ্গী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাঁদের প্রথমে নিকটস্থ একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে ইমনকে আগারগাঁও নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত ইমন মোল্লার ফুফাতো ভাই আলমাস মাতবর বলেন, ইমন ও সিয়াম উত্তরার একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেলে করে ফিরছিলেন। পথে পেছন থেকে একটি বাস ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে আইল্যান্ডে মাথায় গুরুতর আঘাত পান ইমন। সিয়াম সামান্য আহত হন ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেন।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, নিহত ইমন মোল্লার লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে। মিরপুর-১২ আলোকদি ক্যান্টনমেন্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ইমন মৃত মোহাম্মদ আলী মোল্লার ছেলে।