সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডার ৮২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯২৫ টাকা করার প্রস্তাব
আবারও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি এলপি গ্যাস লিমিটেড। ১২.৫ কেজির বিদ্যমান দর ৮২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯২৫ টাকা নির্ধারণের আবেদন দিয়েছে। এলপি গ্যাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ইউসুফ হোসেন ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত ওই আবেদন গত ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এলপি গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোন আবেদন আমার নজরে আসেনি এখনও।
এলপি গ্যাস লিমিটেড তার আবেদনে ক্রসফিলিং বন্ধ, ডিলার পর্যায়ে স্থানীয় পরিবহন, অপরেশন খরচ ও চার্জ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এতে বেসরকারি কোম্পানির এলপিজির দাম অনেক বেশি (১৩২৩ টাকা) হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
সর্বশেষ চলতি বছরের ৪ মে গণশুনানি ছাড়াই ১২.৫ কেজির দাম ৬৯০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮২৫ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি। আর সেই ঘোষণার পর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভোক্তাদের সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
এক সময় এলপি গ্যাসের দাম বেসরকারি কোম্পানিগুলোর ইচ্ছাধীন ছিল। ক্যাবের এক রিটের কারণে অনেকটা বাধ্য হয়ে ২০২১ সালের ১২ এপ্রিলে এলপিজি দর নির্ধারণ করে বিইআরসি। প্রায় ৯৯ শতাংশ আমদানি নির্ভর এলপিজির দর ঘোষণা সময় বলা হয় সৌদি সিপিকে (চুক্তি মুল্য) ভিত্তিমূল্য বিবেচনা করা হবে। সিপির দর উঠা-নামা করলে ভিত্তিমূল্য উঠানামা করবে অন্যান্য কমিশন অপরিবর্তিত থাকবে। ঘোষণার পর থেকে প্রতিমাসে বেসরকারি এলপিজির দর ঘোষণা করে আসছে বিইআরসি।
তখন বলা হয়েছিল বেসরকারি কোম্পানিগুলো চড়াদামে আমদানি করলেও এলপি গ্যাস লিমিটেড দেশীয় গ্যাস ফিল্ড থেকে উপজাত হিসেবে অনেক কমদামে পেয়ে থাকে। সে কারণে বিইআরসি ফর্মুলা (না লোকসান না মুনাফা) অনুযায়ী এলপি গ্যাস লিমিটেডের দর ঘোষণা করা হয়। তখন ১২.৫ কেজির দাম ৬৯০ টাকা নির্ধারিত ছিল। এরপর ২০২৫ সালের ৪ মে গণশুনানি ছাড়াই দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়।
তখন বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেছিলেন, সরকারি কোম্পানির এলপি গ্যাসের দামে কিছু প্যারামিটার রয়েছে। সেসব প্যারামিটারে পরিবর্তন এসেছে, সে কারণে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেভাবে আমরা বেসরকারি এলপি গ্যাসের দাম প্রতিমাসে সমন্বয় করছি। অতীতেও একবার সরকারি এলপিজির দাম শুনানি ছাড়া সমন্বয় করার নজীর রয়েছে।
এলপি গ্যাস লিমিটেডের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ হাজার ৭২৩ মে. টন এলপিজি বিক্রি করেছে। সেনাবাহিনীকে ৭২২ মে. টনসহ মোট ৮৩৪ মে. টন বাল্ক আকারে সরবরাহ দিয়েছে। অবশিষ্ট এলপিজি বোতলজাত করে বিক্রি করেছে কোম্পানিটি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে করপূর্ব মুনাফা করেছে ১০ কোটি ২ লাখ টাকা, ডব্লিউপিপিএফ ৫০ লাখ এবং আয়কর বাবদ ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা জমার পর করোত্তর নীট মুনাফা করেছে ৬ কোটি ৩৯ টাকা। বিইআরসি ফর্মুলা (না লোকসান না মুনাফা) অনুযায়ী দাম বাড়ানোর কতটা সুযোগ রয়েছে সে বিষয়ে রয়েছে বিস্তর বিতর্ক। এমন বিতর্কের মধ্যেই আগেও গণশুনানি ছাড়াই দাম বাড়ানো নিয়ে ক্ষুব্ধ ক্যাব রাষ্ট্রপতির বরাবরে অভিযোগ দিয়েছে।
এলপি গ্যাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ইউসুফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, এখানে কোম্পানির কোন অর্থ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়নি। প্রস্তাব করা হয়েছে ডিলারদের পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বাড়ানোর।
তিনি বলেন, বর্তমানে ডিলাররা পরিবহন খরচ ও কমিশন বাবদ ৪১ টাকা পান। তারা স্বল্প পরিমাণে সিলিন্ডার পেয়ে থাকেন এতে তাদের খরচ উঠছে না। যে কারণে আরও ১০০ টাকা বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, কোম্পানির এতো উৎসাহ কেনো! তারা ডিলারদের কাছ থেকে পয়সা পেয়েছে না-কি। ডিলাররা যদি ওই কমিশনে ব্যবসা করতে না চায়, তাহলে তারা নতুন ডিলার কল করবে। তখন দেখা যাবে আর কেউ আগ্রহী হয় কী-না। ওরা তো কতগুলো গোষ্ঠিকে দেয় ওদের এতো উৎসাহ সন্দেহজনক।
তিনি জবাবে বলেন, আগে একবার গণশুনানি ছাড়া দাম বাড়িয়ে দিয়ে বিইআরসি বেআইনী কাজ করেছে। বিইআরসি পুরোপুরি স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিয়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা প্রতিকার চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের (কমিশনের) অপসারণ চেয়েছি। এখন দেখি কি প্রতিকার হয়।
দেশে বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন এলপিজির চাহিদার বিপরীতে রাষ্ট্রীয় কোম্পানিটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাত্র ১২ হাজার ৭২৩ টন সরবরাহ দিয়েছে। যদিও সাধারণ ভোক্তা এই গ্যাস কখনই চোখে দেখতে পায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। বেশিরভাগ এলপিজি নিদিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ দেয়া হয়, অল্প পরিমাণে বাজারে ছাড়ার কথা বলা হলেও তা কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ অনেক পুরনো।