'শ্রমিক-মালিক এক হয়ে গড়বো এ দেশ নতুন করে' স্লোগানের মধ্য দিয়ে গত বৃহস্পতিবার পালিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। দিবসটি পালন উপলক্ষে র্যালি শোভাযাত্রা, শ্রমিক সমাবেশ, আলোচনা সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল এবার। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন এসব কর্মসূচি সফল করে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি পালন করে।
দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীতে 'শ্রমিক সমাবেশ' করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। এদিন দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সমাবেশ। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
এদিন সকালে রাজধানীর পল্টন মোড়ে বিশাল শ্রমিক সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান। অংশ নেন কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। অন্যান্য রাজনীতিক দলগুলোও আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করে।
১৮৮৬ সালের ১লা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমের মর্যাদা, শ্রমের মূল্য ও দৈনিক (সর্বোচ্চ) আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে শ্রমিকেরা যে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন তাদের সেই আত্মত্যাগের সম্মানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দিবসটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়।
দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে সকল গণমাধ্যম বিভিন্ন লেখা প্রকাশ ও অনুষ্ঠান প্রচার করে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে জাতীয় ছুটির দিন ছিল। আরো অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়।
দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বিশ্বজুড়ে শ্রমিক শ্রেণির মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্কে এই দিবসের তাৎপর্য ও প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এর ফলে শ্রমিকদের দৈনিক কাজের সময় নেমে আসে আট ঘণ্টায়। সারা বিশ্বের শ্রমিকরা তাদের শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা পেতে শুরু করেন। তারা নিজেদের অধিকার আদায়ে সফল হন।
জেলা সংবাদদাতাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে দেশব্যাপী সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, পথ নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করে। শ্রম অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, শ্রমিক সংগঠন এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে সারাদেশে দিবসটি পালিত হয়।
এ উপলক্ষে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরের মোক্তারপাড়া মাঠ থেকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি জেলা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় পাবলিক হলে এসে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। আলোচনা সভার শুরুতে জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে নিহত সকল শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পটুয়াখালীতে আন্তর্জাতিক শ্রমিক এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা দিবস পালিত হয়। এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
‘শ্রমজীবী মানুষের অধিকার, বৈষম্যহীন বাংলাদেশের অঙ্গীকার’ এই প্রতিপাদ্যে নরসিংদীতে আন্তর্জাতিক শ্রমিক এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র নরসিংদী এর আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঝালকাঠিতে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলসমূহ আন্তর্জাতিক শ্রমিক উপলক্ষে নানা কর্মসূচি আয়োজন করে। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রা শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর এবং শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র কুষ্টিয়ার আয়োজনে কুষ্টিয়া ডিসি কোর্ট চত্বর থেকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এসে শেষ হয়। পরে জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে শ্রমিক সমাবেশ, আলোচনা সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
এছাড়াও জেলার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ও জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে বগুড়ায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। জেলা প্রশাসন, শ্রম অধিদপ্তর এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বগুড়ার যৌথ উদ্যোগে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন এবং খুলনার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আয়োজনে দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহিদ আসিফ চত্বর ঘুরে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, পিরোজপুর, ঝিনাইদহ, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, মাগুরা, বাগেরহাট, রাঙ্গামাটি, টাঙ্গাইল, লালমনিরহাট, নীলফামারী, জয়পুরহাট, মানিকগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, মেহেরপুর, ভোলা, চাঁদপুর, ফেনী, জামালপুর, কুমিল্লাসহ সারাদেশে নানা আয়োজনে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হয়।
