রাজধানীসহ সারাদেশে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিকম্পের তীব্রতায় পুরোদেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ড থেকে কম্পন শুরু হয়। আবহাওয়া অফিস জানায়, ঢাকার আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অফিস থেকে ১৩ কিলোমিটার পূর্বে নরসিংদীর মাধবদীতে ভূকম্পনটির উৎপত্তি। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৭। এটি মূলত মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছে, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী এবং ঢাকার আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিসমিক সেন্টার হতে ১৩ কিলোমিটার পূর্বে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব জরিপ (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মরণকালের মধ্যে বাংলাদেশে এতো তীব্রতার ভূমিকম্প আর কখনও হয়নি। এটির গভীরতা ছিল প্রায় ১০ কিলোমিটার।
সর্বশেষ রাত ৯টা পর্যন্ত খবর অনুযায়ী মাঝারি মাত্রার এই ভূমিকম্পে তিন জেলায় অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং সারাদেশে কয়েক শত আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশালে ৫ তলা ভবনের রেলিং ধসে ৩ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গতকাল দুপুরের আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান জানান, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজন মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তার নাম রাফিউল ইসলাম। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সকালে বলেন, ভূমিকম্পের সময় পুরান ঢাকার কসাইটুলি এলাকার একটি ভবনের রেলিং ধসে পড়ে তিনজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তারা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ভূমিকম্পে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ জন আহত হয়েছেন। গাজীপুরের তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত হয়েছেন ১০ জন। নরসিংদী জেলা হাসপাতালে আহত ৪৫ জনের মধ্যে তিনজনকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। নরসিংদী ১০০ শয্যা হাসপাতালে আহত হয়েছেন ১০ জন। টেলিফোনে হতাহতের এসব খবর জানা গেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। ভমিকম্পের সময় সবাই ছুটাছুটি করছিল। পরে এখানে একজন শিশুসহ তিনজন গুরুতর আহত হয়। তাদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস ঢাকা সদর জোন ১ এর জোন কমান্ডার এনামুল হক বলেন, ভবনের ভেতরে কেউ আটকা আছে কি না তাঁরা খোঁজ করছেন।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় ভূকম্পের ঘটনায় দেয়াল ধসে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন তার মেয়ে। একই উপজেলায় ভূমিকম্পে একটি টিনসেড বাড়ির দেয়াল ধসে পড়লে ফাতেমা (১) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ সময় শিশুর মা কুলসুম বেগম ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগম আহত হয়েছেন। এছাড়া ওই জেলায় অনেকে আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর সদর উপজেলার গাবতলী এলাকায় বাড়ির সানসেড ভেঙে ওমর (১০) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় তার বাবা দেলোয়ার হোসেন উজ্জল গুরুতর আহত হন। একই উপজেলায় ভূমিকম্পে মাটির দেওয়াল ধসে চাপা পড়ে কাজম আলী (৭৫) নামে এ বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। জেলার পলাশের মালিতা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়াও ভূমিকম্পে জেলাজুড়ে অন্তত ৫৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ছাদের রেলিং ভেঙে একসঙ্গে ৩ জন আহত হন।
বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, রাজধানী ঢাকার প্রায় সব ভবনই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আরও তীব্রমাত্রার ভূমিকম্প হয়ে পরিস্থিতি খারাপ পর্যায়ে চলে যাবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়, ভূমিকম্পে অনেকে বাসার দেয়াল ফেটে যাওয়ার ভিডিও শেয়ার করেছেন। আসবাবপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেÑএমন ছবিও অনেকে শেয়ার করেছেন। মিরপুর, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকাসহ প্রায় সব এলাকায়ই কম্পন অনুভূত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের রেডিও মেকানিক ইকবাল আহমেদ জানান, ঢাকার আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অফিস থেকে ১৩ কিলোমিটার পূর্বে নরসিংদীর মাধবদীতে ভূকম্পনটির উৎপত্তি। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছে, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী এবং ঢাকার আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিসমিক সেন্টার হতে ১৩ কিলোমিটার পূর্বে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব জরিপ (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫।
এর আগেও বাংলাদেশে গত তেসরা জানুয়ারি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। তবে সেটি ছিল মাঝারি মাত্রার, শুক্রবারেরটার মতো এতটা তীব্র ছিল না। চলতি বছরের শুরুতেই হওয়া ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলও ছিল বাংলাদেশের বাইরে। রিখটার স্কেলে পাঁচ মাত্রার ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের হোমালিন এলাকায়, ঢাকার সাথে যার দূরত্ব ৪৮২ কিলোমিটার।
আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল উল্লেখ করে বলেন, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মাÑএ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান এবং বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে বড় বড় ফল্ট আছে।
মূলত, পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ আলাদা আলাদা বিট বা প্লেট টেকটোনিক দিয়ে তৈরি হয়েছে যা নিচের নরম পদার্থের ওপরে ভাসছে। সারা পৃথিবীতে এরকম বড় সাতটি প্লেট এবং অসংখ্য ছোট ছোট সাব-প্লেট রয়েছে। এগুলো যখন সরে যায় বা নড়াচড়া করতে থাকে বা একটি অন্যদিকে ধাক্কা দিতে থাকে, তখন ভূ-তত্ত্বের মাঝে ইলাস্টিক এনার্জি শক্তি সঞ্চিত হতে থাকে। সেটা যখন শিলার ধারণ ক্ষমতা পেরিয়ে যায়, তখন সেই শক্তি কোনো বিদ্যমান বা নতুন ফাটল দিয়ে বেরিয়ে আসে। তখন ভূ-পৃষ্ঠে কম্পন তৈরি হয়, সেটাই হচ্ছে ভূমিকম্প।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ অঞ্চলে ভূমিকম্পের অন্যতম উৎস হলো ডাউকি ফল্ট, যেটি শেরপুর থেকে শুরু জাফলং হয়ে ভারতের করিমগঞ্জ থেকে বিস্তৃত। এসব কারণে বাংলাদেশ খুবই ভূমিকম্পপ্রবণ। তাই ভূমিকম্প অনুভব করার জন্য যে নিজের দেশেই উৎপত্তি হতে হবে, এমন না। এর প্রমাণ তো এবার পাওয়াই গেল। ৬১৮ কিলোমিটার দূরের ভূমিকম্পে বাংলাদেশ ভালোই ঝাঁকুনি খেয়েছে। মিয়ানমারের পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্পও ঢাকার মানুষ টের পাচ্ছে। তার মতে, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন, ভারত, নেপালের অবস্থান ওই তিন ফল্ট লাইনের আশেপাশে। ‘তাই, মিয়ানমারের পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প আমরা অনুভব করি। আর যদি সেখানে সাত মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তখন আমাদের ওপর সেই প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা আছে। আর ভারত বা নেপালে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ওই সম্ভাবনা আরও বেশি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, আমরা কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গে ২০০৩ সাল থেকে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। যেহেতু বাংলাদেশ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত এবং প্লেটগুলোর ত্রিমাত্রিক গতি নির্ণয় করার জন্য আমরা জিপিএস স্থাপন করি। এর মাধ্যমে আমরা ১৪ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্লেটের গতির পরিমাপ নির্ণয় করি। প্রতিটি প্লেট এক স্থান থেকে আরেক স্থানে প্রতি বছর সরে যাচ্ছে। প্লেটগুলো কোন দিকে যাচ্ছে দুটি প্লেটের সংযোগ বা পরস্পরমুখী যে গতি এবং সাবডাকশন জোনে প্রতি বছর কী পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে, সেটিও আমরা পরিমাপ করি। এগুলো পরিমাপ করে আমরা ২০১৬ সালে প্রতিবেদন প্রকাশ করি।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সিলেট থেকে কক্সবাজার অঞ্চলে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তিসম্পন্ন ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার মতো শক্তি জমা হয়ে আছে। যেকোনো সময় এ শক্তি বের হয়ে আসতে পারে। এ শক্তি একবারে বের হতে পারে আবার ধীরে ধীরেও বের হতে পারে। তবে, পৃথিবীর বিভিন্ন সাবডাকশন জোনে যেসব ভূমিকম্প হয়েছে, সেগুলো থেকে ৬৫ থেকে ৮০ ভাগ শক্তি একবারে বের হয়েছে। বাকিটা ধীরে ধীরে বের হতে থাকে। একই রকম অবস্থা আমাদের এখানে বিরাজ করছে।
এর আগে, ৮০০ থেকে এক হাজার বছর আগে কুমিল্লার ময়নামতিতে ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্লেটগুলো জমাটবাঁধা শক্তি বের করেছিল। এরপরই নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করে এ অবস্থায় এসেছে। তার মানে, গত এক হাজার বছর ধরে শক্তি জমা হতে হতে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার মতো শক্তি জমা হয়েছে। এ শক্তিই যেকোনো সময় বের হয়ে আসতে পারে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত সিলেট, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জসহ দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিকম্পগুলো হয়েছে সাবডাকশন জোনের মধ্যে। এগুলোই বড় ভূমিকম্প হওয়ার আলামত। বড় ভূমিকম্প আজ হতে পার, কালও হতে পারে, আবার ৫০ বছর পরেও হতে পারে।
বড় ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকায় কেমন প্রভাব পড়তে পারেÑ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা হচ্ছে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকে ভূমিকম্পের উৎস ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে হলেও ঢাকাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি জনগণের বাস। এখানে অপরিকল্পিত, অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ এবং ভূমিকম্পের বিষয়ে মানুষদের মধ্যে চরম সচেতনতার অভাব রয়েছে। এ শহরের মানুষ জানে না ভূমিকম্পের সময় কী করতে হবে বা আগে কী কী প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। তারা এটিও জানে না যে ভূমিকম্পের সময় মানুষ কীভাবে নিরাপদে অবস্থান করবে। সরকারেরও এ বিষয়ে প্রস্তুতির অভাব রয়েছে।
সরকার যদিও ২০০৮ সালে সিবিএমপি’র মাধ্যমে প্রস্তুতি নিয়েছে, কিন্তু সেটি যথেষ্ট নয় বা তার ধারাবাহিকতা নাই। সরকারের পক্ষ থেকে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির কাজটি করতে হবে। ঢাকা থেকে দূরে ভূমিকম্পের উৎস হলেও ঢাকাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয় তাহলে ঢাকা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হতে পারে। যেহেতু আমাদের কোনো পরিকল্পনা নাই সেহেতু ভূমিকম্পের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যাবে।
এজন্য পরিকল্পনা করে ঢাকার ওপর চাপ কমিয়ে দেশের জনবসতি পশ্চিমাঞ্চলের দিকে নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত হবে রেজিলিয়েন্স সোসাইটি গঠনের মাধ্যমে কার্যকর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া এবং তার বাস্তবায়ন করা।
সরকারের নির্দেশনা : সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে অবিলম্বে মাঠপর্যায়ে নেমে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শুক্রবার দুপুরে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ নির্দেশনা দেন তিনি। এতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার ঘটনায় সৃষ্ট জনমনের উদ্বেগ ও আতঙ্ক সম্পর্কে সরকার অবগত। পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে অবিলম্বে মাঠপর্যায়ে নেমে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে। এতে আরও বলা হয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তাৎক্ষণিকভাবে যেসব ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুততার সঙ্গে রেসপন্স করছেন। পাশাপাশি, এ নিয়ে কোনো ধরনের গুজব বা বিভ্রান্তিতে কান না দিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রয়োজনে হটলাইনসহ সরকারি চ্যানেলে পরবর্তী দিকনির্দেশনা জানানো হবে। নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত পার্বত্য এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মণিপুর, মিজোরাম, মিয়ানমারের পার্বত্য এলাকাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া, কিশোরগঞ্জের হাওর দিয়ে মেঘনা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামানের পাশ দিয়ে দক্ষিণে যদি একটি রেখা কল্পনা করা যায়, এলাকাটি হচ্ছে দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল। এ দুটি প্লেটের মধ্যে পূর্বে অবস্থিত বার্মা প্লেট, পশ্চিমে অবস্থিত ইন্ডিয়ান প্লেট। এর সংযোগস্থলের উপরের ভাগটি অর্থাৎ সুনামগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে পূর্বে মণিপুর, মিজোরাম পর্যন্ত অঞ্চলটি ‘লকড’ হয়ে আছে। অর্থাৎ এখানে শক্তি জমা হয়ে আছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত (১৭ সেপ্টেম্বর) ১০টি হালকা ও মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে দেশে। এতে জানমালের তেমন ক্ষতি না হলেও বড় ধরনের ভূমিকম্পের আভাস পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।