আগের চেয়ে লোডশেডিং বেড়েছে। শহরের যেমন তেমন গ্রামাঞ্চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। একদিকে বাড়ছে গরম অন্যদিকে লোডশেডিং হওয়ায় কোন কোন স্থানে ভোগান্তি বেড়েছে। বিশেষ করে শিল্প এলাকাগুলোতে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিল্পমালিকরা।
জানা গেছে, দেশে এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত তীব্র গরম অনুভূত হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৮ হাজার মেগাওয়াট। লোডশেডিং হতে পারে ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গরম বাড়তে থাকায় সামনের দিনে পরিস্থিতি মোকাবিলা কঠিন হবে। সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি চাহিদা হলেই সারা দেশে লোডশেডিং মারাত্মক আকার ধারণ করবে। গরম যত বাড়বে, এসির ব্যবহার তত বাড়বে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে বিদ্যুতের সংকট। এ কারণে সরকার নির্দেশ দিয়েছে, এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে না নিতে। লোডশেডিংয়ের মাত্রা ৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হবে
সূত্র বলছে, গরম বাড়লেই বেড়ে যায় বিদ্যুতের চাহিদা। এই চাহিদা সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট ছুঁলেই বাড়ে লোডশেডিং। তরল জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ঘাটতি মেটানো হচ্ছে। গত সপ্তাহে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তখন লোডশেডিং বেড়ে যায়। তবে আদানির দুটি কেন্দ্রই সচল হয়েছে, এখন ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত সরবরাহ করা হচ্ছে। তারপরও দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি মেটাতে খরচে জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো হচ্ছে। কখনো কখনো ৪ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন করা হচ্ছে।
পিজিসিবি ও পিডিবি সূত্র বলছে, রমযানের আগে থেকে আদানি ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় বিদ্যুতের ঘাটতি হয়নি। তাপমাত্রা অনুকূলে থাকায় চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াটের ঘরে ছিল। এ জন্য পুরো রমযান মাস সামাল দেওয়া গেছে। লোডশেডিং করতে হয়নি। যা হয়েছে তা কারিগরি কারণে হয়েছে। কিন্তু রমযানের পর তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তাপমাত্রা যত বাড়বে বিদ্যুতের চাহিদা তত বাড়বে। আপাতত চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত থাকলে আর আদানির বিদ্যুৎ পুরোপুরি পাওয়া গেলে দেশবাসীকে লোডশেডিংয়ে ভুগতে হবে না। পাশাপাশি গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যাকআপ হিসেবে জ্বালানি তেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। কিন্তু চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেলে লোডশেডিং করে সামাল দিতে হবে।
পিজিসিবির তথ্যানুযায়ী, গত সপ্তাহে প্রতিদিনই লোডশেডিং করতে হয়েছে। সর্বোচ্চ গত শনিবার ছুটির দিন বেলা ৩টায় ৪২৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়। এ সময় চাহিদা ১৪ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ছুঁয়ে যায়। এই চাহিদা মেটাতে ২ হাজার ৫০০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ জ্বালানি তেল দিয়ে উৎপাদন করা হয়। তবে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হওয়ার পর ঘাটতি কমেছে। তবে চলতি গ্রীষ্মে দৈনিক ১১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা করতে পারছে না পেট্রোবাংলা। শুক্রবার মাত্র ৯৭ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হয়।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, গ্রীষ্মকালে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। এ জন্য সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পদক্ষেপ নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এলএনজি আমদানি করা হবে।
বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সম্প্রতি বলেছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। তাপমাত্রা বাড়লে চাহিদা স্বাভাবিকভাবে বাড়ে। তবে এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রিতে রাখলে এক থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। কিন্তু অনেকে সেটা করছেন না। জনগণকে সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, দুই কারণে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে। এর প্রথমটি হলো- উৎপাদন কম হলে লাইন বন্ধ করে দেওয়া। এটিকে লোডশেডিং বলে। আর দ্বিতীয়টি হলো, ঝড়-বৃষ্টিসহ কোনো কারণে ফিউজ চলে যায় বা ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হওয়া। এটিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাট বলে।
উপদেষ্টা বলেন, গরমে রমযানের মতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়তো সম্ভব হবে না। তবে আমরা চেষ্টা করব। কেবল গ্রামে লোডশেডিং হবে এমনটা নয়। ঢাকাতে প্রথমে লোডশেডিং হবে। এরপর হবে অন্য জায়গায়।