চার মাস পরে আগামী সোমবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সাথে আসছেন তার দুই পুত্রবধূ জোবায়দা রহমান এবং সৈয়দা শর্মিলা রহমান। গতকাল শুক্রবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ ম্যাডাম আগামী সোমবার সকালে দেশে ফিরেন। আমরা যতদূর জানি, সাথে উনার দুই বউ‘মা আসার কথা রয়েছে।
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন যান। লন্ডনে পৌঁছেই লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। টানা ১৭ দিন লন্ডন ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তারেক রহমানের বাসায় তাদের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অর্ধযুগের বেশি সময় পরে এবারই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেছেন খালেদা জিয়া।
কেমন আছেন খালেদা জিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মোটামুটি আলহামদুলিল্লাহ আগের চাইতে ডেফিনেটলি ভালো। কিভাবে দেশে ফিরছেন সে বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ম্যাডামের দেশে ফেরার ব্যাপারে কাতারের আমিরের কাছ থেকে যে অ্যাম্বুলেন্সটা উনাকে লন্ডনে নেয়ার জন্য পেয়েছিলাম সেটা এখন একটু বিলম্বিত হচ্ছে টেকনিক্যাল রিজিয়নস, সেজন্য ম্যাডাম ঠিক করেছেন যে, ওইটা (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) যদি শেষ মুহূর্তে না পাওয়া যায় উনি বাংলাদেশ বিমানেই আসবেন। বাংলাদেশ বিমানে সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৪ তারিখ (৪ এপ্রিল) উনি রওনা হলে ইনশাআল্লাহ ৫ তারিখ সকালে ১১টা দিকে দেশে পৌঁছাবেন।
এদিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বাসা ‘ফিরোজা’কে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। তিনি বলেন, ম্যাডামের বাসভবন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হযেছে।
খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন ম্যাডাম খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন, এ সংক্রান্ত সব প্রস্তুতির কাজ আমরা করছি। ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থায় সব কিছু জানানো হয়েছে। লন্ডন থেকে দেশে ফেরার বিষয়টি জানিয়ে গত সপ্তাহে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে চিঠি দেন। বিএনপির মহাসচিবের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার লন্ডন ও দোহার বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফেরাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ২০১৮ সালে তৎকালীন শেখ সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। কোভিড-১৯ মহামারির সময় সরকার তাকে বিশেষ বিবেচনায় কারামুক্তি দেয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।
এদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারের স্বাক্ষরে এই চিঠি দেয়া হয়েছে।
আবদুস সাত্তার এই চিঠি দেয়ার কথা নিশ্চিত করে বলেন, উনার(ডা. জোবায়দা রহমান) নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই চিঠি দেয়া হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর এই চিঠিটি পাঠানো হয় ৩০ এপ্রিল।
চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা শেষে আগামী ৪ মে দেশে ফিরবেন। ডা. জোবায়দা রহমান তার সফরসঙ্গী হিসাবে দেশে আসবেন এবং ধানমন্ডিস্থ তার পিতার বাসায়(মাহবুব ভবন, বাসা নং ৪০, সড়ক নং ৫, ধানমন্ডি) অবস্থান করবেন। জিয়া পরিবারের সদস্য এবং তারেক রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে তার জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। সেই কারণে তার ঢাকাস্থ বাসায় অবস্থানকালীন এবং যাতায়াতের সময় নিম্নরূপভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
চিঠিতে একজন সশস্ত্র গানম্যান, গাড়িসহ পুলিশ প্রটেক্টশন,বাসায় পুলিশ পাহারা, বাসায় আর্চওয়ে স্থাপনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা শেষে আগামী ৫ মে সকালে দেশে ফিরবেন বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে। তার সাথে দুই পূত্রবধূ (তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান) থাকবেন। সাবেক নৌ বাহিনী প্রধান রিয়ার এ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের মেয়ে জোবায়দা রহমান ২০০৭ সালে স্বামী তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার সাথে মেয়ে জায়মা রহমানকে নিয়ে লন্ডন যান। এরপর তিনি আর দেশে ফেরেননি। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছিল।