আজ ২৬ জুলাই শনিবার । ২০২৪ সালের এই দিনটি ছিল শুক্রবার। এদিন এলাকা ভাগ করে ‘ব্লক রেইড’ দেওয়া হয়। সারা দেশে অভিযান চলে। সারা দেশে অন্তত ৫৫৫টি মামলা হয়। গ্রেফতারের সংখ্যা ৬ হাজার ২৬৪। চট্টগ্রামে ৩০ শিক্ষার্থী গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়। এদিন আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে যান শেখ হাসিনা। পুলিশের গুলীতে শত শত মানুষের হতাহত হওয়া নিয়ে দুঃখপ্রকাশ না করে শেখ হাসিনা ওখানে গিয়ে কেঁদে দেন। তার এ ভূমিকাকে ‘নাটক’ আখ্যা দেন অনেকে। কান্নারত শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে বানানো মিম ছড়িয়ে পড়ে, যার ক্যাপশন ছিল ‘নাটক কম কর পিও’। এদিনও জাতিসংঘ ক্র্যাকডাউন বন্ধ এবং ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানায়।

জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ, সংঘাত, ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ভাগ করে ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে চলছে অভিযান।

অভিযান সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যখন কোনো এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয় তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শত শত সদস্য গিয়ে এলাকাটি ঘিরে ফেলেন। ওই এলাকা থেকে কেউ যেন বের হয়ে যেতে না পারেন, এ জন্য সব পথে তাঁরা অবস্থান নেন। এরপর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়। এটিকেই মূলত তাঁরা ‘ব্লক রেইড’ বলেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো বলছে, আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় জড়ানো ব্যক্তিদেরকেই তারা গ্রেপ্তার করছে। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এদের বড় অংশ বিএনপি জামায়াত ও তাঁদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতা-কর্মী। এর বাইরে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশি সহিংসতা হয়েছে এমন এলাকায় তাঁরা জোরদার অভিযান চালাচ্ছেন। তা ছাড়া সহিংসতার মদদদাতা হিসেবে সন্দেহভাজন বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে থাকার নির্দেশনাও পেয়েছেন তাঁরা। এসব নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) লিটন কুমার বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতাকারীদের ধরতে আমদের অভিযান চলছে। প্রতিটি সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত না করা পর্যন্ত এ অভিযান চলবে।

দেশের বিভিন্ন মহানগর, জেলা ও থানা-পুলিশ গত ১০ দিনে ঢাকাসহ ৫৩টি মহানগর ও জেলায় ৫৫৫টি মামলার তথ্য পাওয়া যায়। ঢাকার বাইরে নতুন ২২টি ও ঢাকায় আরও আটটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকায় এ নিয়ে মোট মামলার সংখ্যা ২০৯।

সারা দেশ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১০ দিনে (১৭-২৬ জুলাই) সারা দেশে মোট গ্রেপ্তার হন অন্তত ৬ হাজার ২৬৪ জন। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত ৭৬৫ জন। এই সময়ে রাজধানীতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ২০৭ জন। শুধু রাজধানীতে ১০ দিনে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা অন্তত ২ হাজার ৪১৬ জন। আটককৃতদের অনেককে পুরনো মামলাতেও গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।

আগের দিন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর শাহিনবাগ এলাকায় ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে যৌথ অভিযান চালানো হয়। এ সময় ওই এলাকার আকাশে হেলিকপ্টার উড়তে দেখেন এলাকাবাসী ও আশপাশের বাসিন্দারা। হেলিকপ্টার থেকে নিচে আলো ফেলতে দেখে অনেকে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন বলে জানিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ–কমিশনার (ডিসি) এইচএম আজিমুল হক জানান, ‘আমরা একেক দিন একেক এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছি। তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার শাহিনবাগ এলাকায় অভিযান চালানো হয়।’ হেলিকপ্টার উড়লেও সেটি পুলিশের বিষয় ছিল না বলে জানান এই কর্মকর্তা।

বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায়ও ‘ব্লক রেইড’ এর খবর পাওয়া যায়। অভিযান শুরু করার আগে বিকেল পাঁচটার পর কাউকে বাইরে না থাকতে পুলিশের পক্ষে ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলেই সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এ সময় ভবনের ওপর থেকে অভিযানের ভিডিও করতে গেলে নিচ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপরে গুলি ছুড়েছেনÑ এমন একটি ভিডিও ফুটেজ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার রাজন কুমার সাহা বলেন, ‘সহিংসতাকারীদের ধরতে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহায়তায় আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। শুধু দুষ্কৃতকারীদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ অভিযানের ভিডিও করার কারণে গুলীর কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি।

এদিন বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরকার দলীয় সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে হামলা চালিয়ে এখন তা আড়াল করতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষকে ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেককে আটকের পর আদালতে না নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে বিএনপি দাবি করেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জহিরউদ্দিন স্বপন, আমান উল্লাহ আমান, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রুহুল কবির রিজভী, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, রশিদুজ্জমান মিল্লাত, সুলতান সালাউদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, আমিনুল হক, নাসিরউদ্দিন আহমেদ অসীম, নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমুখ।

জামায়াতের গ্রেপ্তার হন সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, মিয়া গোলাম পরওয়ার, মোবারক হোসাইন। এ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান (পার্থ), জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র এহসানুল হুদা, দন্ত চিকিৎসক সাখাওয়াত হোসেন।

এ দিন পর্যন্ত বিএনপির প্রায় তিন হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকারি দলের সন্ত্রাসী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে গুলী, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের মাধ্যমে শত শত নিরীহ শিক্ষার্থীকে গণহারে হত্যা এবং হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে আহত করেছে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে। এখন ব্লক রেইড দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

বনানীর সেতু ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হককে এদিন আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। শুনানির সময় আইনজীবীরা আদালতের কাছে অভিযোগ করেন, রিমান্ডে নিয়ে নুরুলকে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে নুরুল হকের স্ত্রী মারিয়া আক্তার সাংবাদিকদের কাছে একই অভিযোগ করেন।

গ্রেপ্তার অভিযান ও ‘ব্লক রেইডের’ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন বলেন, সহিংসতার ঘটনার ভিডিও ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এলাকাভিত্তিক ‘ব্লক রেইড’ চলছে। সেনাবাহিনী ও বিজিবি সহযোগী ফোর্স হিসেবে মাঠে আছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। অভিযানের সময় হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, অভিযানে সহযোগিতার জন্য র‌্যাব হেলিকপ্টার উড়িয়েছে।

এদিন চট্টগ্রামে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থীকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংস ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়। ১৬ থেকে ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের দুজন, সিটি কলেজের একজন, চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের ১৪ জন এবং বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসার ১৩ জন রয়েছেন। অনেকের নাম মামলার এজাহারে না থাকলেও সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তবে পুলিশ বলছে, ফুটেজ ও বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের স্বজনদের দাবি, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নাশকতার সঙ্গে জড়িত না থাকলেও শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ, নিহতের ঘটনায় চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় ২৯টি মামলায় গত বৃহস্পতিবার রাতে আরও ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

২৬ জুলাই নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অপর দুই সমন্বয়ক হলেন আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার। এঁরা তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

একদল ব্যক্তি সাদাপোশাকে শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ধানমন্ডির ওই হাসপাতাল থেকে তাঁদের তুলে নিয়ে যান বলে জানা যায়। সে সময় ওই ব্যক্তিরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দেন। সেখানে উপস্থিত এক সমন্বয়কের স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এ তথ্য জানান। পরে রাতে তিনজনকে হেফাজতে নেওয়ার কথা স্বীকার করে ডিবি। ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম রাত সাড়ে ১১টার দিকে বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তিন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে। সহিংসতার বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনো তথ্য আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হবে।

এই তিনজনকে এর আগেও একবার তুলে নেওয়া হয়েছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা দাবি আদায়ে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার পর ১৯ জুলাই মধ্যরাতে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়া থেকে নাহিদকে তুলে নেওয়া হয়। ২১ জুলাই ভোরে পূর্বাচল এলাকায় তাঁকে ফেলে যাওয়া হয়। নাহিদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল আঘাতের চিহ্ন। এর পর থেকে তিনি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অপর দুই সমন্বয়ক আসিফ ও বাকেরকেও ১৯ জুলাই তুলে নেওয়া হয়েছিল। পাঁচ দিন পর ২৪ জুলাই আসিফকে হাতিরঝিল ও বাকেরকে ধানমন্ডি এলাকায় ফেলে যাওয়া হয়। এর পর থেকে আসিফও গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে থাকছিলেন বাকের। শুক্রবার তিনজনকে তুলে নেওয়ার খবর জানাজানি হলে গণমাধ্যমকর্মীরা বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে যান। নাহিদ হাসপাতালের ৭০৩ নম্বর কক্ষে এবং আসিফ ৩১১ নম্বর কক্ষে ভর্তি ছিলেন। নাহিদের সঙ্গে তার স্ত্রী আর আসিফের সঙ্গে বাকের ছিলেন।

হাসপাতালে উপস্থিত নাহিদের স্বজনেরা জানান, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে একদল লোক এসে প্রথমে নাহিদকে তুলে নিয়ে যান। পরে আসিফ ও বাকেরকে নিয়ে যান।

নাহিদকে তুলে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সঙ্গে থাকা তাঁদের স্বজন ফাতিমা তাসনীম বলেন, বিকেলে তিনি নাহিদের কক্ষেই ছিলেন। হাসপাতালের যে ছেলেটি খাবার দিত, তাকে আটক করা হয়েছে, এমন খবর শুনে তিনি নাহিদের কক্ষ থেকে আসিফের কক্ষে যান। তখন চারজন ব্যক্তি আসিফ ও বাকেরকে ধমকাচ্ছিলেন।

ফাতিমা তাসনীম বলেন, ‘ওই ব্যক্তিরা আসিফ ও বাকেরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য টানাহেঁচড়া শুরু করলে আমি ও হাসপাতালের নার্সরা তাঁদের বলি, রোগীদের ডিসচার্জ (ছাড়পত্র) দেওয়া হয়নি। তখন ওই ব্যক্তিরা নার্সদের ইনচার্জকে বলেন, আমাদের চেনেন? কাউন্টার টেররিজম সম্পর্কে আপনাদের ধারণা আছে? এরপর কোনো কথা না শুনে তারা আসিফ ও বাকেরকে নিয়ে যান। দুজনের মুঠোফোনও নিয়ে যান। এরপর জানতে পারি, নাহিদকেও তুলে নেওয়া হয়েছে।’

আসিফ মাহমুদের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত একজন চিকিৎসক বলেন, সকাল সাতটার দিকে হাসপাতালে এসে তিনি আসিফ মাহমুদের কক্ষের সামনে অপরিচিত তিন ব্যক্তিকে দেখতে পান। পরে আরও সাত-আট ব্যক্তি আসেন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ডিবি ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্য পরিচয় দিয়ে কয়েকজন এসে আসিফকে তাঁদের সঙ্গে যেতে বলেন। এ সময় চিকিৎসককে সরে যেতে বলেন। ওই চিকিৎসক বলেন, ‘আমি তাদের বলি, ডিসচার্জ না করে কোনো রোগীকে আমরা ছাড়তে পারি না। আসিফের শারীরিক অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে তিনি ডিসচার্জের উপযোগী ছিলেন না। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও কিছু একটা ইনজেক্ট করা হয়েছিল। তিনি হাসপাতাল থেকে যেতে চাননি। আমরাও ছাড়তে চাইনি। কিন্তু তাঁদের চাপাচাপির কারণে বাধ্য হয়ে তাঁকে ডিসচার্জ অন রিস্ক বন্ড করতে হয়। ওই ব্যক্তিদের চাপের মুখে আসিফের মতো নাহিদ ইসলামকেও তাঁর নিজ দায়িত্বে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।