জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হচ্ছে আজ সোমবার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সংলাপের উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর বেইলী রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় ধাপের প্রথম দিনে কেবল প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য দিতে পারেন। এরপর, মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে কমিশন। সোমবারের অনুষ্ঠানে ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের একজন করে প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
প্রথম ধাপে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনে সংলাপ করে। গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্নে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য এবং আংশিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ হবে বিষয়ভিত্তিক। যেসব মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেনি সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
সংস্কারপ্রক্রিয়া ও নির্বাচন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নাগরিক সমাজ ও তৃণমূলের সংগঠনগুলোকে সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতা বাড়িয়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। ঐকমত্য কমিশনের সভায় অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন তাঁদের ভূমিকা তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জনগণকে নির্বাচনমুখী করতে হবে। কেউ যেন ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিতে না পারে, সে বিষয়ে নাগরিকদের সচেতন করতে হবে। শৃঙ্খলা আনতে হবে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপদ ভোটের আয়োজন করতে হবে। এত বড় অভ্যুত্থানের পর যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছিলাম, এটা যেন তেমন বাংলাদেশই রয়ে না যায়।’
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, এ বিষয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যে একমত প্রকাশ করেছে।
কমিশনের সদস্য আইয়ুব মিয়া অবিলম্বে জনপ্রশাসন সংস্কার বাস্তবায়ন কমিশন গঠনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে এনাম কমিশন বিভিন্ন সরকারি সংস্থার যে অরগানোগ্রাম তৈরি করেছিল, সেটাই তাদের এখনো রয়ে গেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে এবং নতুন অনেক সংস্থা গঠন করা হয়েছে। এ কমিশন গঠন করা হলে এই অরগানোগ্রামগুলো পুনর্গঠন করা যাবে। এনবিআর সংস্কারে জনপ্রশাসন কমিশনের সুপারিশ ছাড়া আরও দুটি কমিশন কাজ করেছে, যার ফলে একধরনের সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে।
বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রতিনিধি এমদাদুল হক রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগে যে কমিশন গঠন করা হয়েছে, তা যেন স্বচ্ছভাবে কাজ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে আহ্বান জানান।
দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন প্রতিনিধি ইফতেখারুজ্জামান প্রাথমিকভাবে গঠিত ছয়টি কমিশনের বাইরে গণমাধ্যম, শ্রম, স্থানীয় সরকার, নারী ও স্বাস্থ্যবিষয়ক যে সংস্কার কমিশনগুলো গঠিত হয়েছে সেগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নে একটি রোডম্যাপ প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার ২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য প্রণীত খসড়া প্রস্তাবটি অধ্যাদেশ আকারে প্রকাশ করার আহ্বান জানান।