রাজধানীর বনানীতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সদর দপ্তরের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা জেলার সিএনজি চালকরা। তাদের দাবি, ঢাকা জেলার অন্তর্গত সিএনজিগুলোকে ঢাকা মহানগরে চলতে দিতে হবে এবং এর জন্য কোনো ধরনের মামলা দিতে পারবে না ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এদিকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর রাজধানীর বনানীতে বন্ধ হয়ে যাওয়া সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে সড়ক থেকে সরে যান সিএনজিচালিত অটোরিকশা-চালকরা। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মহাখালী রুটে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

এর আগে গতকাল রোববার সকাল ১০টা থেকে বিআরটিএর সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নেওয়া শুরু করেন ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির অন্তর্গত সিএনজিচালকরা। তাদের উপস্থিতি বাড়তে থাকলে দুপুর ১২টার কিছু সময় পর থেকে প্রধান সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে মহাখালীগামী সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় তপ্ত রোদের মধ্যে দুর্ভোগে পড়েন ওই পথের সাধারণ যাত্রীরা। বিআরটিএর কোনো কর্মকর্তাকে অফিস থেকে বের হতে দেওয়া হবে না হুঁশিয়ারি করে সোসাইটির সভাপতি মো. জুয়েল মালতীয়া দুপুর আড়াইটার দিকে বলেন, আমরা সকাল ১০টা থেকে এখন পর্যন্ত অবস্থান করছি। ঢাকা জেলার ২ থেকে ৩ হাজার গাড়ি (সিএনজি) মহানগরে চালানোর জন্য বারবার স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু বিআরটিএ বারবার আমাদের মিথ্য আশ্বাস দিয়েছে। গত ২০১৬ সালে আমাদের ২৬টি ইউনিয়ন কেটে নিয়ে ওয়ার্ড বানিয়েছে। মহানগর বড় বানিয়েছে। তাহলে আমরা যাবো কোথায়। এখন আমার জায়গায়, আমাকে বলে অবৈধ। তিনি আরও বলেন, আজকে আমরা বিআরটিএ ঘেরাও করেছি। আজকে বিআরটিএর একটি লোককেও বাইরে বের হতে দেবো না। কারণ, এরাই রাষ্ট্রের দুষ্টু লোক। এরা ঘুষ খেয়ে এ ধরনের কাজ করে।

এদিকে সড়ক বন্ধ থাকায় গুলশাল ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, বনানী বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগরীর বাইরের সিএনজি চালকরা দাবি দাওয়া নিয়ে মূল সড়কে অবস্থান নিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে উত্তরা-মহাখালী রুটে ইনকামিং এবং আউটগোয়িংয়ে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। ইনকামিংয়ে যানচলাচল করার ক্ষেত্রে কাকলী হয়ে গুলশান-২-১-আমতলী অথবা গুলশান-১ হয়ে পুলিশ প্লাজা দিয়ে এবং একইভাবে বিপরীত দিকে আউটগোয়িংয়ে ডাইভারশন দেওয়া হচ্ছে। আউটগোয়িংয়ের ক্ষেত্রে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করা যাচ্ছে। এছাড়া উত্তরা থেকে তেজগাঁও বা হাতিরঝিল এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করা যাচ্ছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে অনেক যাত্রীই কড়া রোদের মধ্যে রাস্তা অবস্থান করেন। তদের অনেক জানেন ও না কি হয়েছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতেও চেয়েছেন। আবার কেউ প্রকাশ করেছেন ভোগান্তির কথাও। দুপুর দেড়টার পর থেকে আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে উঠলে মহাখালী রুটে ইনকামিং ও আউটগোয়িং সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে চালকরা বিআরটিএ ভবন ঘেরাও করেন এবং কাউকে ভবনে ঢুকতে বা বের হতে দিচ্ছিলেন না। এতে করে বনানী ও আশপাশের এলাকায় চরম যানজট ও জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকালের পর সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সেনাবাহিনীর প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন সদস্য আন্দোলনস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং চালকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। এরপর ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে। গুলশান ট্রাফিক বিভাগ জানায়, বর্তমানে সড়কের দুপাশেই যানচলাচল স্বাভাবিক আছে। চালকরা জানিয়েছেন, দাবি না মানা হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।