বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণের পথে এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে সমৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা ও সামাজিক সহযোগিতা ও সহনশীলতা নিশ্চিত করতে শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় সহায়তা ঘোষণা করার সময় ইইউ রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষা মানে হলো সম্মান, মর্যাদা ও সহনশীলতা।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা মানুষকে জীবনের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে। এটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনসাধারণের আস্থা পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখে।’
বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়তা হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশ সরকারকে ২ কোটি ৩৫ লাখ ইউরো দিয়েছে। এই অনুদান দেশের জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল বাস্তবায়নের অগ্রগতিকে স্বীকৃতি দেয় এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত করে।
যদিও পোশাক খাতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও চাকরি হারানোসহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বাংলাদেশ। ইইউ দীর্ঘমেয়াদি বাংলাদেশের উন্নত সামাজিক সুরক্ষা খাতের অংশীদার, যা দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার।
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাস জানায়, ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইইউ সামাজিক সুরক্ষা খাতে ২৮ কোটি ৫০ লাখ ইউরো অনুদান দিয়েছে, যার মধ্যে ২ কোটি ইউরো এসেছে জার্মানি থেকে। সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে সহায়তার জন্য অতিরিক্ত দেড় কোটি ইউরো প্রযুক্তিগত সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এই অর্থায়নের মাধ্যমে সরকার ‘গভর্নমেন্ট-টু-পারসন’ (জিটুপি) ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে ৯০ শতাংশের বেশি নগদ ভাতা সরাসরি উপকারভোগী জনগোষ্ঠীর অ্যাকাউন্টে দিয়েছে।
একক নিবন্ধনব্যবস্থা (সিঙ্গেল রেজিস্ট্রি) চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৩০টিরও বেশি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সংযুক্ত করা হয়েছেÑযা স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, পুনরাবৃত্তি কমানো ও সঠিকভাবে লক্ষ্য অর্জনকে নিশ্চিত করতে সহায়তা করছে।
‘ইম্পলয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম‘ বা কর্মস্থল দুর্ঘটনা পেনশন স্কিম পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে, যা কর্মক্ষেত্র বা যাতায়াতকালে দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের আজীবন পেনশন দিচ্ছে। এ স্কিমটি এখন এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনসহ আরও বিভিন্ন খাতে সম্প্রসারিত হচ্ছে।
প্রথমবারের মতো একটি কারখানার ১ হাজার ২০০-এর বেশি বেকার শ্রমিক সরকারের বেকারত্ব সহায়তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পেয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকারকে ২০২৬ সালের পর নতুন করে জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল নিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে ইইউ।
ইইউ জানিয়েছে, সংশোধিত কৌশলটিতে উন্নত লক্ষ্যমাত্রা, নগর ও জলবায়ু-সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আরও দক্ষ ব্যবস্থাপনা, টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন নিশ্চিত করা উচিত।
এছাড়াও, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর করতে বাস্তব পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে ইইউ।