ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যা মামলায় ডিবি পুলিশ সাতজন মাদক কারবারির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে চলতি বছরের ১৩ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একদল দুর্বৃত্ত হত্যা করে।
মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলার বাদীর আপন ভাই এসএম শাহরিয়ার আলম সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। অপরদিকে আসামি মেহেদী হাসান, রিপন, কবুতর রাব্বি, পাপেল, হৃদয়, রবিন, সোহাগরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা। আসামি মেহেদী হাসান তাদের দল নেতা। উল্লেখিত আসামিরা মেহেদী হাসানের কাছ থেকে মাদকদ্রব্য গাঁজা নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝখানে মন্দির গেট এলাকায় খুচরা বিক্রি করে। গাঁজা বিক্রি শেষে সবাই মেহেদীর কাছে গাঁজা বিক্রির টাকা জমা দিতো। ঘটনার পূর্বে আসামি রিপন ও রাব্বি মেহেদীকে ঠিকমত গাঁজা বিক্রির টাকা না দিয়া বলে যে, তাদের গাঁজা বিক্রির টাকা কিছু মাস্তানরা জোর পূর্বক নিয়ে যায়। যার কারনে তারা মেহেদীকে নিয়মিত গাঁজা বিক্রির টাকা দিতে পারেনা। আসামি মেহেদী হাসান তখন তার লোকজনদের এরকম পরিস্থিতি হলে সবাইকে একসঙ্গে প্রতিহত করার জন্য বলে এবং কয়েকজনকে সুইচ গিয়ার (চাকু) ও ইলেকট্রিক ট্রেজারগান কিনে দেয়। আসামি মেহেদী, কবুতর রাব্বি ও রিপনরা যেন উদ্যানে গাঁজা বিক্রি না করে সেই লক্ষ্যে সাম্য ও তার বন্ধুরা নিষেধ করেছিল। এর কারনেই তাদের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়।
মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা আখতার মোর্শেদ উল্লেখ করেন, শাহবাগ থানাধীন মুক্ত মঞ্চের কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা কবুতর রাব্বি চলতি বছরের ১৩ মে রাতে প্রতিদিনের মতো মুক্তমঞ্চের কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বিক্রি করছিল। তখন তার হাতে একটি ইলেকট্রিক ট্রেজারগান ছিল। চিহ্নিত মাদক কারবারি মেহেদীর ছত্রছায়ায় কবুতর রাব্বি ট্রেজারগান ও সুইচ গিয়ার নিয়ে সব সময়ে চলাফেরা করে ও মাদক বিয়ি করে। কবুতর রাব্বির সঙ্গে পাপেল ও রিপন সব সময়ে থাকতো। ঘটনার দিনও তারা কবুতর রাব্বির সঙ্গে ছিল। ঘটনার দিন রাতে সাম্য একটি মোটর সাইকেলে তার দুই বন্ধুসহ মুক্ত মঞ্চের দিকে আসলে কবুতর রাব্বিকে ইলেকট্রিক ট্রেজারগান হাতে দেখতে পেয়ে সাম্য তাকে থামতে বলে। কবুতর রাব্বি মুক্ত মঞ্চ হতে ৩০/৩৫ গজ দূরে ঘটনাস্থল গোল পুকুর (পুরাতন ফোয়ারা) দিকে দৌড় দেয়। সাম্য তাকে মোটর সাইকেল করে ধাওয়া করলে গোল পুকুরের (পুরাতন ফোয়ারা) কাছে ধরে ফেলে এবং ইলেকট্রিক ট্রেজারগানটি নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন ট্রেজারগানটি না দিলে সাম্য কবুতর রাব্বিকে চড়-থাপ্পর মারে। তখন কবুতর রাব্বির চিৎকারে পাপেল, মন্দিরের পাশে ক্যান্টিন থেকে রিপন, মেহেদী, সোহাগ, হৃদয় ও রবিনরা ঘটনাস্থলে এগিয়ে এসে সাম্য ও তার বন্ধুদের সঙ্গে তর্কা-তর্কি ও হাতা-হাতিতে জড়িয়ে পড়ে। তাদের ধস্তাধস্তিতে ঘটনাস্থল কালো পুকুর পাড়ে (পুরাতন ফোয়ারার) পাশে পূর্ব থেকে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারির একটি মোটরসাইকেল পড়ে গিয়ে লুকিং গ্লাস ভেঙ্গে গেলে উক্ত মোটরসাইকেলের একজন (পলাশ সর্দার) অন্যত্র গিয়ে মারামারি করতে বলে। মেহেদী মোটরসাইকেলের উক্ত ব্যক্তিকে (পলাশ) চোখে মুখে ঘুষি মেরে অজ্ঞান করে ফেলে।