দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ২৭৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান থাকায় বাংলাদেশী ফার গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের ফারুক ও ৯ বিদেশী নাগরিকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ সাব্বির ফয়েজের আদালত এই আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া অন্যরা হলেন, সুং ওয়েন লি অ্যাঞ্জেলা, সুং জাই মিন, মিসেস শিয়াও লিউ ই চি, ম্যাডাম চুক কোয়ান, ম্যাডাম শেয়াও ইয়েন শিন, সুং চুং ইয়াও, ম্যাডাম হ্যাং সিউ লাই, শিয়াও হাই হে এবং সুং ওয়ে মিন।
এ দিন দুদকের পক্ষে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। দুদকের আবেদনে বলা হয়, মো. আব্দুল কাদের ফারুকের চেয়ারম্যান বিদেশি কোম্পানি ‘রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেড’ (ডিইপিজেড)-এর ওয়াকিং ক্যাপিটাল না থাকা সত্ত্বেও কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার জন্য ভুয়া শেয়ার হোল্ডার ও সব ধরনের কাগজপত্র ফেবরিকেটেড করে শেয়ার বাজারের আইপিওতে অন্তর্ভুক্ত করে ২৭৫ কোটি টাকার সংঘবদ্ধ আর্থিক জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাৎ করেন। আবদুল কাদের ফারুক ওই কোম্পানির সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করে জালিয়াতি করে অর্জিত অর্থের ৪০/৬০ শতাংশের বিনিময়ে। অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। আসামিরা বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন মর্মে জানা যাচ্ছে। এজন্য কোম্পানির বৈদেশিক চেয়ারম্যান, নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালকসহ ১০ জনের দেশত্যাগ নিষেধাজ্ঞা করা একান্ত প্রয়োজন।
নাসিমের স্ত্রী-সন্তানের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ : আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু, ছেলে সাবেক এমপি তানভির শাকিল জয়সহ পরিবারের সদস্যদের হিসাব অবরুদ্ধ করার তথ্য দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি জয় এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ১ হাজার ২০৮ কোটি টাকার ‘অস্বাভাবিক’ লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আদালতের মাধ্যমে ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট সিরাজগঞ্জ-১ আসনের জয়, তার মা, স্ত্রী সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী ও ভাই তমাল মনসুরসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করেছে। জয় ও পরিবারের সদস্যদের নামে মোট ৯৬টি ব্যাংক হিসাব থাকার তথ্যও দিয়েছে সিআইডি।
প্রাথমিক অনুসন্ধানের বরাতে সিআইডি বলছে, জয় প্রতারণা, জালিয়াতি, চাঁদাবাজি, সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন। তার আগে মঙ্গলবার প্রয়াত মন্ত্রী নাসিমের পরিবারের এই চার সদস্য ও তার একান্ত সচিব মীর মোশাররফ হোসেনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনে বলা হয়, তানভির শাকিল জয় ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে নিজ ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করেন। তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগের অনুসন্ধানে তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে তথ্য মিলছে। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে বিলম্ব হবে এবং অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য তাদের বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত প্রয়োজন।
সিআইডি বলছে, তানভির শাকিল জয় ও তার ভাই তমাল মনসুর ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকল্পে টেন্ডার জালিয়াতি, চাঁদাবাজি, বালু উত্তোলন ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর অবৈধ বিত্ত-সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে আসে।
সেই অবৈধ অর্থ দেশের বাইরে পাচার করার পাশাপাশি তার পরিবারের সদস্যদের নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হিসেবে বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের’ অভিযোগ অনুসন্ধান করছে তুলে ধরে ধরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির সন্ধান করা হচ্ছে। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।