স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যদের রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে থেকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বুধবার এসএসএফ'র ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এই নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্র ঘোষিত ভিআইপিদের নিরাপত্তা প্রদানে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি চারিত্রিক দৃঢ়তা, শৃঙ্খলা, সততা, দায়িত্বশীলতা এবং মানবিক গুণাবলি অপরিহার্য। রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে থেকে এসএসএফকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।
ড. ইউনূস বলেন, “এসএসএফ একটি ক্ষুদ্র বাহিনী হলেও এর দায়িত্ব অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে এই বাহিনী। গত ১০ মাসে দেশ ও বিদেশে এসএসএফ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করেছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “কক্সবাজার, রোহিঙ্গা ক্যাম্প, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনগুলোতে এসএসএফ অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সফলভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। বিদেশ সফরের সময়ও এসএসএফ বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা সংস্থা ও দূতাবাসের সঙ্গে কাজ করে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছে।”
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে নিরাপত্তা হুমকি আরও জটিল আকার ধারণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এসএসএফ ইতোমধ্যেই যমুনার সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করেছে এবং কার্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও যুগোপযোগী করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জনদুর্ভোগ লাঘবেও এসএসএফকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বলেন, “ভিআইপি ফ্লাইটের জন্য অতীতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় এক ঘণ্টা ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখা হতো। আমি এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছি, যাতে সাধারণ যাত্রীরা ভোগান্তিতে না পড়েন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, এসএসএফ সদস্যদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও সরঞ্জামাদির আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। গত ৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া ক্ষয়ক্ষতির পুনরুদ্ধার দ্রুত সম্পন্ন করা হয়েছে। বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উন্নত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার অব্যাহত থাকবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এসএসএফ সকল সহযোগী বাহিনী ও সংস্থার সঙ্গে নিবিড় সমন্বয়ের মাধ্যমে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব আরও সফলভাবে পালন করবে।
প্রকল্প পরিকল্পনায় নদীর পানিপ্রবাহ নিরবচ্ছিন্ন
রাখার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
স্টাফ রিপোর্টার : উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনার ক্ষেত্রে নদীর পানিপ্রবাহ যাতে নিরবচ্ছিন্ন থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ‘টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সমন্বিত অর্থনৈতিক করিডোর উন্নয়ন’ প্রকল্প নিয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি এ নির্দেশ দেন তিনি।
বৈঠকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জোং ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তাদের একটি দল এই প্রকল্পের বিস্তারিত রূপকল্প, কৌশল এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া উপস্থাপন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি–বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে আমাদের নদীপ্রবাহকে। বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ। আমরা কোনোভাবেই আমাদের পানিপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করতে চাই না।’ ‘আরেকটি বিষয় হলো, যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ওই এলাকার জনসংখ্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। আমাদের দেশ বন্যাপ্রবণ। তাই পানিপ্রবাহ বন্ধ করে এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলবে। বন্যার সময় আমাদের দেশের মানুষ উঁচু রাস্তা, সেতু এবং রেলপথে আশ্রয় নেয়। সুতরাং সেতু শুধু নির্মাণ করলে হবে না, এটি জনগণের জন্য আশ্রয় হচ্ছে নাকি বিপদ ডেকে আনছে সেটাও বিবেচনা করতে হবে,’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন।
‘এবং তৃতীয়টি হলো আন্তর্জাতিক সংযোগ। আমরা এ অঞ্চলে একটি ইনভেস্টমেন্ট হাব তৈরি করতে চাই। সেজন্য প্রকল্প এমন হতে হবে যা নেপাল, ভুটানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোকেও সংযুক্ত করবে,’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন। বৈঠকে এ উন্নয়ন প্রকল্পে পানি বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করতে এবং একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির নির্দেশ দেন তিনি। উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘এর আগে হাওর এলাকায় বিশাল সড়ক নির্মাণ হয়েছে কিন্তু পরে দেখা গেল সেটি ওই অঞ্চলের পুরো ইকোসিস্টেমকে ধ্বংস ভেঙে দিয়েছে। মানুষ মারাত্মকভাবে বন্যার কবলে পড়েছে। সুতরাং যেকোনো প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করতেই হবে।