সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীর শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয় বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা বলেছেন গাজীর ভাল এবং নেতৃত্বের গুণগুলো পরবর্তী প্রজন্মের ধারণ করা জরুরী। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক হিসেবে তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।

গতকাল বুধবার জাতীয় পেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মরহুম রহুল আমিন গাজীর স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজে এই স্মরণসভার আয়োজন করে।

স্মরণসভায় সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ , ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরদার ফরিদ আহমদ, বাকের হোসাইন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন, সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, মোরসালিন নোমানি, বিএফইউজের সহসভাপতি একেএম মহসিন ও রফিক মুহাম্মদ, ঢাকা মেইলের নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল, বিএফইউজের সহসভাপতি খায়রুল বাশার, দপ্তর সম্পাদক আবু বকর, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোদাব্বের হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদারুল ইসলাম, দিনাজপুর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাফিজুল ইসলাম রিপন, মুন্সীগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী বিপ্লব হাসান, জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য শাহনাজ পলি ও সাংবাদিক নেত্রী লাবিন রহমান প্রমূখ। সভা পরিচালনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম। স্মরণসভায় মরহুম রুহুল আমিন গাজীর স্ত্রী ও সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া পেশা সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ স্মরণসভায় অংশ নেন।

কাদের গণি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিক নেতা হিসেবে রুহুল আমিন গাজী ছিলেন সৎ, নির্ভিক এবং সাহসিকতার প্রতীক। গণতন্ত্র রক্ষা আন্দোলনের নেতৃত্বে সবার সামনে থাকতেন গাজী ভাই। কোন অপশক্তির কাছে তিরি মাথা নত করেননি। তিনি সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলার সাহসের কারণে তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে তিনি ছিলেন আপসহীন। সাগর-রুনি হত্যার ব্যাপারেও তিনি সবসময় সোচ্চার ছিলেন। জেল থেকে বের হয়েও তিনি চুপসে যাননি। অনেককে দেখেছি জেল থেকে বের হয়ে চুপসে যেতে। কিন্তু তিনি হাসপাতাল থেকে বের হয়েই রাজপথে নেমেছিলেন। এখন এরকম ত্যাগী নেতা কমই দেখেছি জীবনে। অসুস্থ হওয়ার পরও তিনি আন্দোলনে ছিলেন।

রুহুল আমিন গাজীর সাহসিকতার কথা উল্লেখ করে কাদের গণি চৌধুরী আরও বলেন, ২০১৩ সালে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে পেশাজীবীদের সম্মেলনে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু রুহুল আমিন গাজী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মহাসম্মেলন করেছিলেন এবং সেই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি উল্লেখ করেন, রুহুল আমিন গাজী ছিলেন মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ। সকলের বিপদ-আপদে তিনি পাশে থাকতেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। মাথা নত করেননি। প্রতিকুল পরিস্থিতিতে পেছনে কে আছে খেয়াল করেননি। তার আদর্শগুলো সামনের দিনে পথ চলার পাথেয় হয়ে থাকবে।

সভাপতির বক্তব্যে শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীকে হত্যা করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। ট্রিটমেন্ট করার পর তিনি যখন ফলোআপে ছিলেন, তখনই তাকে গ্রেফতার করা হয়। আমরা তার মুক্তি চেয়ে আন্দোলন করেছি। সরকার আমাদের কথা শোনেনি। তবে যারা তাকে হত্যা করেছে, যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের বিচার হয়েছে বলেই মনে করি। তাদের দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা সম্পন্ন। তার একুশে পদক পাওয়ার বিষয়ে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা করার আশ^াস দেন তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কবি হাসান হাফিজ বলেন, সাংবাদিক নেতা হিসেবে রুহুল আমিন গাজীর সাহস, ত্যাগ ও নিষ্ঠা ছিল বিরল। তার জীবনী বই বের করা দরকার। তার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আপসহীনতা বাদ দিয়ে পথ চলতে হবে।

কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে সামনের কাতারে ছিলেন রুহল আমিন গাজী। তার মতো দৃঢ়চেতা সাহসি মানুষ আমি আসলে দেখিনি। সাংবাদিকদের শৌর্যবীর্য নিয়ে কথা বললে গাজীর কথা আসবেই। নেতৃত্ব দানের ট্রাডিশনাল ইতিহাস পাকিস্তান আমল থেকে শুরু হওয়া লাইনের শেষ ব্যক্তি রহুল আমিন গাজী। তাকে কেন্দ্র করে আমরা একত্রিত হতে পেরেছি। তিনি জানতেন ট্রেড ইউনিয়ন কাকে বলে।

সরদার ফরিদ আহমদ বলেন, আসলে রুহুল আমিন গাজীর শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়। তার অবর্তমানে আমাদের মধ্যে নানা মতভেদ তৈরি হয়েছে। কিন্তু তাকে কেন্দ্র করে আজ আমরা একত্রিত হয়েছি। তিনি আমাদের একত্রিত রাখার ব্যাপারে দৃঢ় ছিলেন। নেতৃত্বের গুণ ও সাহস ছিল রুহুল আমিন গাজীর। যা আর কারো মধ্যে নাই। আদর্শের ব্যাপারে তিনি কোন আপস করেননি।

বাকের হোসাইন বলেন, গাজী ভাইয়ের জীবন ছিল সংগ্রামমূখর। তার অনুপস্থিতিতে আমরা খাপছাড়া হয়ে গেছি। মানুষ হিসেবে তিনি কোন মহামানব ছিলেন না। দোষত্রুটি থাকবেই। তিনি ছিলেন সহজাত নেতা। তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ট্রেড ইউনিয়নকে জাগ্রত রাখতে হবে।

সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, গাজী ভাইয়ের মৃত্যুতে আমরা অভিভাবক হারিয়েছি। তার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। ট্রেড ইউনিয়নে তার যে ভূমিকা তা অতুলনীয়। তিনি একজন সংগ্রামী মানুষ ছিলেন। ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন মূখ্য চরিত্র। বড় বড় সব আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন। জুলাই আন্দোলনেও তিনি জড়িত ছিলেন। একুশে পদক পাওয়ার যোগ্য তিনি।

আবু সালেহ আকন বলেন, আজকে যখন আমাদের মধ্যে অনৈক্যৈর সুর। তখন গাজী ভাইয়ের দরকার ছিল। তার ভাল কাজগুলো আমরা অনুসরণ করবো।

স্মরণসভায় রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আফফান আবরার আমিন বাবা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেন । তিনি বলেন, বাবা আর আমি বন্ধু ছিলাম। বাবা সব সময় সত্য বলতেন। বাংলাদেশের জন্য কথা বলতেন। কোন দলের জন্য কথা বলতেন না। তিনি আমাদের হৃদয়ে থাকবেন সব সময়।