ইউটার্ন বা ইউলুপগুলো নির্দিষ্ট স্থানে তৈরি করা হয়, যা চালকদের দ্রুত ও নিরাপদে ঘুরতে সাহায্য করে। যেসব স্থানে ঘন ঘন যানজট হয়, সেখানে ইউটার্ন বা ইউলুপ পদ্ধতি ব্যবহার করলে যানবাহনগুলো সিগন্যালে আটকে না থেকে সহজেই দিক পরিবর্তন করতে পারে, ফলে যানজট কমে। এটি বড় ধরনের অবকাঠামোগত নির্মাণ ছাড়াই দ্রুত কার্যকর করা যায়, যা যানজট নিরসনে একটি সহজ উপায় বলে জানান মো. আকরাম হোসেন নামে একজন ড্রাইভার। ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জের গাড়ি চালাক দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় গাড়ি চালান। সেই সুবাদে জামে পড়ে ভোগান্তি থেকে তিনি মুক্তি উপায় খোঁজতে থাকেন গাড়ি চালক আকরাম হোসেন। সেই চিন্তা থেকে ঢাকার শহরের মোড়ে মোড়ে ঘুড়ে যানজট নিরসনের জন্য একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির নতুন এবং চমৎকার ম্যাপ তৈরি করেন।
গাড়ি চালক আকরাম হোসেন বলেন, রাজধানী ঢাকায় যানজটের তীব্রতা প্রকট। এর কবলে পড়ে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের মূল্যবান সময় হারাচ্ছে। গাড়ি চলার জন্য যতটা জ্বালানির প্রয়োজন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি জ্বালানি অকারণে পুড়ছে। বাতাসে কার্বনসহ ক্ষতিকর পদার্থ মিশে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। রাজধানী ঢাকায় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বছরে এ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া জ্বালানি অপচয়ে ক্ষতি হচ্ছে আরও ১১ হাজার কোটি টাকার।
গাড়ি চালক আকরাম হোসেন বলেন, যানজট চক্রাকারে বৃদ্ধি পেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। রাস্তার যানজট নিরসনের জন্য একদিকে চলাচল করে দিলে এ এলাকার যানজট থাকবে না। আমার আবিস্কার করা ম্যাপের ছক অনুযায়ী রাস্তা এবং মোড়গুলো ইউটার্ন করে দিলে যানজট মুক্ত হবে। কিছু স্থানে ২০ ফিট, কিছু স্থানে ২৫ ফিট কিছু স্থানে ৩০ ফিট পর্যন্ত চওড়া রাখতে হবে রাস্থার জায়গার পরিমান বুঝে। যেসব জায়গায় ইটার্ন আছে সেখানে ১৫০ ফিট জায়গা ইউটার্ন করে দিলে গাড়িগুলো সহজে ইউ করে টার্নিং নিয়ে চলে যেতে পারবে। এর আরও একটি সমাধান হচ্ছে ১। প্রচলিত বিপজ্জনক মোড় (উধহমবৎ ঈৎড়ংং) বন্ধ করতে হবে। এজন্য ১ নং চিত্রের (ঋরমঁৎব-১) প্রচলিত মোড়কে ২ নং চিত্রের (ঋরমঁৎব-২) মত মোড়ে রূপান্তরিত করতে হবে। ২। মোড় থেকে কিছু দূরে (১ কিমি, ১/২ কিমি বা অন্য কোন সুবিধাজনক দূরত্বে) একমুখি প্রশস্ত ইউটার্ন তৈরি করতে হবে। এই ইউটার্ন এর মধ্য দিয়ে গাড়ি শুধু লেন ‘এ’ থেকে ‘ই’ অথবা ‘ই’ থেকে ‘এ’ তে যেতে পারবে। উভয়টিতে যেতে পারবে না। কোন গাড়ি যদি ডানদিকে কিংবা বিপরীত দিকে ঘুরতে চায় তবে তাকে শুধুমাত্র ইউটার্ন এর মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বিভাজক (জড়ধফ উরারফবৎ বা ওংষধহফ) বিশিষ্ট কোন দীর্ঘ রাস্তার মাঝে মাঝেও এই ইউটার্ন তৈরি করা যেতে পারে। দুইটি রানওয়ে (লেন) যখন একে অপরের সাথে মিলিত হয় তখন তারা পরস্পর সমান্তরাল ভাবে মিলিত হবে।
যানজট নিরসনের নতুন ম্যাপের আবিস্কারক আকরাম হোসেন বলেন, ঢাকায় এখন কোনো যন্ত্রচালিত গাড়ি ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলতে পারে না। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ এই গতি ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটারে নেমে আসবে, যা পায়ে হেঁটে চলার সমান। কেননা মানুষ কমবেশি এই গতিতে চলে। যানজটের ফলে একদিকে যেমন মূল্যবান সময়ের অপচয়সহ মানসিক ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে, অন্যদিকে অর্থনীতিরও বিরাট ক্ষতি সাধন করছে। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকায় শুধু যানজটের কারণে প্রতিবছর ক্ষতি হয় অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকা।
যানজট নিরসনের নতুন ম্যাপের আবিস্কারক আকরাম হোসেন তার গবেষণা প্রবন্ধে বলেন, গাড়ি যানজট নিরসনের জন্য এক দিক চলাচলের কৌশল ইউটার্ন পদ্ধতি চালু করার জন্য ম্যাপ চিহ্নিত করে দেখানো হলো, এই ম্যাপ চিহ্নিত অনুযায়ী ইউটার্ন পদ্ধতি ব্যবহার করলে কোন যানজট হবে না। কি ভাবে গাড়িগুলো যাবে সেই পদ্ধতি চিহ্নিত করে ম্যাপে বিস্তারিত ভাবে দেখানো হয়েছে। এই ম্যাপের মধ্যে এই সিস্টেম অনুযায়ী যদি ইউটার্ন ও আইল্যান্ড করে দিলে কোন যানজট হবে না। গাড়িগুলো কিভাবে ঘুরে ঘুরে যাবে রাস্তা মাঝে দিয়ে (ম্যাপের মধ্যে নকশা করে) তীর দিয়ে চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। চিহ্ন অনুযায়ী গাড়িগুলো ঘুরে ঘুরে যাবে কোথায়ও গাড়ি থামবে না। চলতে থাকিবে, চলতে থাকবে, এই ভাবে রাস্তা গুলো করলে রাস্তায় কোন যানজট থাকবে না।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যেমন গাড়িগুলো বাংলামটর থেকে গুলিস্থান যাবে শাহাবাগ ডানে রেখে সোজা যাবে মৎস্য ভবন বামে রেখে সোজা যাবে। যে গাড়িগুলো ইউনির্ভাসিটি যাবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সামনে ইউটার্ন ঘুরে শাহাবাগ মোড় বাম দিক দিয়ে সোজা টিএসসি’র ইউটার্ন ঘুরে যাবে সোজা গুলিস্থান দৈনিক বাংলার মোড় ঘুরে গুলিস্থান আসবে।
যানজট নিরসনের নতুন ম্যাপের আবিস্কারক আকরাম হোসেন তার গবেষণা প্রবন্ধে আরও বলেন, এলিফ্যান্ট রোড থেকে যেসব গাড়িগুলো গুলিস্থান যাবে, সেই গাড়িগুলো শাহবাগ বাম হাতে রেখে ডান দিক দিয়ে টিএসসি হইতে শিক্ষা ভবন। জাতীয় ইদগাঁও বামে রেখে সোজা পল্টন হয়ে দৈনিক বাংলামোড় হয়ে গুলিস্থান যাবে, পল্টন মোড়ের ডানে রেখে জিরো পয়েন্টের দিক দিয়ে রাস্তা দিয়ে সচিবালয় শিক্ষা ভবন যাবে। মতিঝিল শাপলা চত্বর হতে যেসব গাড়িগুলো ফার্মগেট ও বেইলিরোড যাবে, সেইসব গাড়িগুলো গুলিস্থান হয়ে শিক্ষা ভবনের সামনে দিয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে ইদগাঁও পাশ দিয়া ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এর সামনে দিয়া সোজা শাহবাগ হইয়া যাবে, যে সব গাড়িগুলো বেইলিরোড যাইবে, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সামেন ইউটার্ন ঘুরে মৎস্য ভবন ডান দিকে রেখে কাকরাইল মসজিদের সামনে ইউটার্ন ঘুরে বেইলিরোড যাবে, যেসব গাড়িগুলো মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে শান্তিনগর যাবে শাপলা চত্বর থেকে সোজা যাবে যেসব গাড়িগুলো রাজারবাগ শাহজাহানপুর যাবেন ইউটার্ন ঘুরে ঘুরে শাহজাহানপুর যাবে, যে সব গাড়িগুলো মতিঝিল দৈনিক বাংলা যাবে সেই সব গাড়ি গুলো ইউটার্ন ঘুরে ঘুরে যাবে, ইউটার্ন এর মাঝ বরাবর যে জায়গার পরিমান হওয়া দরকার যেমন ইউটার্ন গুলোতে দরকার শাহবাগ ইউটার্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ইউটার্ন গুলো মাঝখানের জায়গা ৩০ ফুট চওড়া সাইডে ২৫ ফুট চওড়া হতে হবে, যাহাতে একসাথে কাকরাইলের সামনে ইউটার্ন জিরো পয়েন্টের সামনের ইউটার্ন শিক্ষা ভবনের সামনের ইউটার্ন দুইটা গাড়ি যেতে পারে। যে সব জায়গা গুলো মোড় মোড়ে রাস্তা বাড়ানো দরকার সেইসব জায়গা গুলো কতফুট রাস্তা বাড়ানো দরকার সেই জায়গা গুলোতে কতফুট রাস্তা বাড়ানো দরকার সেই সব চিহ্নিত দেওয়া আছে। যেমন টি এনটির সামনে মসজিদ এর পশ্চিমে পার্শ্ব দিয়ে ২৫ ফুট বাইপাস করলে গাড়িগুলো বাইপাস দিয়ে চলে যাবে সহজে। বাংলাদেশ সরকার যদি ইউটার্ন পদ্ধতি উদ্যোগ নেন তাহলে এ দেশে যানজট নিরশন হওয়া সম্ভব।
নতুন এই ইউটার্ন পদ্ধতির আবিস্কারক মো: আকরাম হেসেন বলেন, আমি ড্রাইভার হিসেবে রাস্তার চলতে গিয়ে যানজটে পড়ে ২০০৭ সালে থেকে ইউটার্ন পদ্ধতি তৈরির কাজ বা ম্যাপ তৈরির করছি। আমার তৈরি এই ইউটার্ন পদ্ধতি আমি জামায়াত ইসলামী অফিস থেকে প্রথম তৈরির কাজ শুরু করি তখন আমি সেখানের গাড়ি চালক ছিলাম। আমার এই ইউটার্ন পদ্ধতি তৈরি করে বিভিন্ন অফিসে পাঠিয়েছি। তারপর দুটো রাস্তা মিলে মতিঝিল থেকে উত্তরা প্রধান রাস্তাগুলো বেইলিরোড নিয়ে মহাখালি সহ রাস্তাজুড়ে ২০১৭ সালের দিকে দ্বিতীয়বার তৈরি করিয়াছি। এই ম্যাপ তৈরি করে প্রথম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রেজভি মহোদয়কে প্রথম দেখাই রেজভি মহোদয় আমাকে বললেন তুমি ইনঞ্জিনিয়ার আক্তার মহোদয়ের সাথে দেখা করো। আক্তার মহোদয়কে দেখালাম। আক্তার মহোদয় দেখলেন, দেখে বললেন তুমি কখনো বিদেশ গিয়েছো, আমি বললাম না, আমি এটা নিজে থেকে বানিয়েছি, আক্তার মহোদয় আমাকে বললেন তুমি গ্রীনরোডের সোবহান সাহেবের সাথে দেখা করো। আমি সোবহান সাহেবের সাথে দেখা দেখা করে ম্যাপটি দেখালাম। তিনি ম্যাপ দেখেই বলল তুমি বুয়েটের সামসুল হক স্যারকে দেখাও।
যানজট নিরসনের নতুন ম্যাপের আবিস্কারক আকরাম হোসেন তার গবেষণা প্রবন্ধে বলেন, যানজট নিরসনের জন্য সাধারণত উড়াল সেতু, বিকল্প রাস্তা, পার্শ্ব রাস্তা, পাতাল পথ, মেট্রো রেলপথ ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এসব তৈরি করতে বিপুল অংকের অর্থ, সময় ও ভূমি প্রয়োজন হয়। বিনিময়ে যানজট নিরসনে এগুলো কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারছে কিংবা আদৌ কোন ভূমিকা রাখতে পারছে কিনা তা ভেবে দেখার বিষয়। কিন্তু আমার প্রস্তাবিত পদ্ধতি অনুসরণ করলে আশা করা যায়, নগণ্য যোগানের বিনিময়ে স্বল্প সময়ে রেল ক্রসিং পয়েন্ট ব্যতীত সম্পূর্ণ নগরী যানজট মুক্ত হবে। এক সেকেন্ডের জন্যও থামতে হবে না কোন গাড়িকে। তদুপরি নি¤œলিখিত আনুষঙ্গিক সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে। ক) জ্বালানি সাশ্রয় হবে খ) পরিবেশ দূষণ কমবে গ) সড়ক দুর্ঘটনা কমবে ঘ) রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ লাগবে না ঙ) যানবাহনে স্বস্তি ফিরে আসবে।