বাংলাদেশের লোকসংগীত অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র, একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীন মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। ঢাকা ও কুষ্টিয়াতে জানাজা এবং আনুষ্ঠানিকতা শেষে দাফন করা হয় কুষ্টিয়া পৌর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরে। ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এর আগে রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ ফরিদা পারভীনকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। বৃষ্টির কারণে কিছুটা সময় বিলম্ব করে দুপুর ১২টার পর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয় শিল্পীকে। মুষলধারে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে প্রিয় শিল্পীকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছুটে আসেন অগুণতি মানুষ।

দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন ফরিদা পারভীন। কয়েক মাস ধরে সপ্তাহে দুবার ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে হচ্ছিল তাকে। সর্বশেষ ২ সেপ্টেম্বর ডায়ালাইসিসের জন্য তাকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে চিকিৎসা গ্রহণের পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে তখনই ভর্তি করে আইসিইউতে রাখা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হলে গত বুধবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই গুণী শিল্পী।

ফরিদা পারভীন বাংলা লোকসংগীত, বিশেষ করে লালনগীতি ও আধ্যাত্মিক গানের জন্য ছিলেন বিখ্যাত। তার কণ্ঠে ‘আমি বাংলা মায়ের ছেলে’, ‘নিন্দা করো মন্দ করো’, ‘তোমার ভাঙার কাহিনী’Ñএসব গান হয়ে উঠেছে কালজয়ী। ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে নজরুল সংগীত গাইতে শুরু করেন ফরিদা পারভীন। ১৯৭৩ সালের দিকে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সাধক মোকসেদ আলী শাহের কাছে লালন সংগীতের তালিম নেন ফরিদা পারভীন।

সংগীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান তিনি। এছাড়াও অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা রয়েছে তার। এছাড়া ২০০৮ সালে তিনি জাপান সরকারের পক্ষ থেকে ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কারও পেয়েছেন। সেরা প্লে-ব্যাক গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন ১৯৯৩ সালে।