বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)'র মধ্যে গতকাল শুক্রবার চারটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ঋণচুক্তি চারটির মোট অর্থমূল্য এক দশমিক তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঋণ সহযোগিতার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো আধুনিকায়ন, আর্থিক ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির উদ্যোগ বেগবান হবে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোঃ শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং এডিবি'র পক্ষে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর Hoe Yun Jeong এ ঋণচুক্তি চারটি স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তিপত্র স্বাক্ষরকালে বাংলাদেশ সরকার ও এডিবি'র উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্বাক্ষরিত চুক্তিসমূহ বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকিং খাত সংস্কারে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট সাপোর্ট। এ কর্মসূচি অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। এর মাধ্যমে দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালী হবে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ঋণ ব্যবস্থাপনাকে আরো কার্যকর করবে। কর্মসূচির প্রধান নীতি-সংস্কার ক্ষেত্রসমূহ হলো অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও সহনশীলতা বজায় রাখা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যাংকগুলোকে ঋণ প্রদানের উপযোগী করে গড়ে তোলা। ঋণের সুদের হার SOFR+ শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং তিন বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ১৫ (পনেরো) বছরে পরিশোধযোগ্য।
এছাড়া, জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধিতে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট সাপোর্ট রয়েছে, যা অর্থ বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, কার্যক্রম বিভাগ-পরিকল্পনা কমিশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। এ কর্মসূচির প্রধান নীতি-সংস্কার ক্ষেত্রসমূহ হলো টেকসই ও জলবায়ু-কেন্দ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতের ঝুঁকি মোকাবিলা, বিপদাপন্নতা হ্রাস ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করা এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো ও নিম্ন-কার্বন অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হওয়া; ঋণের সুদের হার দুই শতাংশ এবং পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ২৫ (পঁচিশ) বছরে পরিশোধযোগ্য।
এসব চুক্তির মধ্যে আরো আছে ঝঅঝঊঈ ঢাকা-উত্তর পশ্চিম করিডোর ২য় পর্যায় (ট্রাঞ্চ ৪) প্রকল্পে ২০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ঝঅঝঊঈ ঢাকা-উত্তর পশ্চিম করিডোর ২য় পর্যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক উন্নয়ন করা হবে। ট্রাঞ্চ ৪ ঋণসহ এ প্রকল্পে এডিবির মোট বিনিয়োগ ২০১৭ সাল থেকে এক দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাল। ঋণের সুদের হার SASEC শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ২৫ (পঁচিশ) বছরে পরিশোধযোগ্য।
চুক্তির আওতায় আরো আছে, ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের জ্বালানি আধুনিকায়ন প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নয়টি আপগ্রেডেড সাবস্টেশন ও ১৪১ কিলোমিটার নতুন ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ গ্রিডকে আধুনিকায়ন করা হবে, যা দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে নবায়নযোগ্য শক্তি সংযোজনের পথ সুগম করবে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড ২০৩০ সালের জুনের মধ্যে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের মূল উপাদান বিদ্যুৎ অবকাঠামো আধুনিকায়ন, নবায়নযোগ্য শক্তি সংযোগ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি। ঋণের সুদের হার SOFR + শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ২৫ (পঁচিশ) বছরে পরিশোধযোগ্য।
এডিবি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ১৯৭৩ সাল থেকে সহায়তা দিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত এডিবি বাংলাদেশকে ৩৩ দশমিক ৮০১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ ও ৫৭১ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান প্রদান করেছে। এডিবির উন্নয়ন সহায়তা প্রধানত বিদ্যুৎ, জ্বালানি, স্থানীয় সরকার, পরিবহন, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, পানি সম্পদ, গভর্নেন্স ও আর্থিক খাতকে অগ্রাধিকার দেয়।