অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৃহস্পতিবার আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। একই সঙ্গে ২৮ জুন কমপ্লিট শাটডাউনের পাশাপাশি ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়। এসময় এনবিআর ঐক্য পরিষদের সভাপতি অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও অতিরিক্ত কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতাসহ আরও নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, অর্থ উপদেষ্টা বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় বিসিএস (কর) ও সিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদের তার সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা বরাবরই আলোচনার পক্ষে। আর আলোচনার পক্ষে ছিলাম বলেই ২০ মে উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণ করি। সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ জন প্রতিনিধিসহ মোট ২৬ জন সভায় উপস্থিত ছিলেন। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দুই জন প্রতিনিধিকে মোট ১০ মিনিট সময় দেওয়া হয়। আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ার পরও ফলপ্রসূ হয়েছে বলে অর্থ উপদেষ্টা উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান। অর্থাৎ আমাদের আলোচনার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। অন্যদিকে তিনি এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিদের আলোচনার জন্য আহ্বান করেননি, চিঠিও পাঠাননি। সেহেতু এ আলোচনায় তারা অংশগ্রহণ করবে না।
সম্মেলনে আরও বলা হয়, কিছুক্ষণ আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন বিতর্কিত সদস্যের স্বাক্ষরিত সভার নোটিশ এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তবে নোটিশটি এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদকে পাঠানো হয়নি। কিন্তু মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। ধরে নেওয়া যায়, একদিন আগের তারিখ দিয়ে জারিকৃত এই সভার নোটিশটি একটি আই-ওয়াশ ছাড়া কিছুই নয়। তদুপরি, ঐক্য পরিষদ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত কমিটির সঙ্গে আলোচনা করার কোনো সুযোগ নেই মর্মে ঐক্য পরিষদ মনে করে। এ অবস্থায় আমাদের দাবি অনতিবিলম্বে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ৪৪ আমলার তালিকায় তিন নম্বরে থাকা বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের মধ্য দিয়েই সরকারের রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের যাত্রা শুরু হবে। এর আগে কোনো আলোচনা নয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের ঢাকার সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজস্ব ভবনে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম-বিরতি এবং ঢাকার বাইরে স্ব-স্ব দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম-বিরতি চলবে। পাশাপাশি, চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ চলবে।স এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে ২৭ জুন তারিখের মধ্যে অপসারণ না করা হলে আগামী ২৮ জুন আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন চলবে।
অপরদিকে গতকাল এক বিবৃতিতে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ বিকেল ৫টায় বিসিএস (কর) এবং বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদের তার সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে যার যার দপ্তরে অবস্থান করে অর্থবছরের শেষ কর্মদিবসগুলোতে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমে মনোনিবেশ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে এনবিআরে আন্দোলন চলছে এবং এতে বিগত সরকারের কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীর ইন্ধন থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এনবিআর কর্মকর্তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা আছে। তাদের ক্যারিয়ারের কোনো অসুবিধা হবে না। বরং এনবিআর একটি স্বতন্ত্র ডিভিশন হবে। তাদের স্ট্যাটাসটা বাড়বে। তাদের ক্যারিয়ারটা আরও প্রস্ফুটিত হবে। তাদের প্রমোশনটা আরও ভালো হবে। এখন তাদের কারা কী বুঝিয়েছে, ভেতরের ব্যাপার সেপার আপনারা আরও ভালো বলতে পারবেন। তিনি বলেন, তারা যেটা করছে, কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, এটা কোনো সরকারি কর্মচারী বিশেষ করে এনবিআরের কেউ কোনোদিন করেনি। এটা আপনার আমার ব্যাপার নয়। পুরো দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজস্বের ব্যাপার; বন্দর, স্থলবন্দর, আমদানি-রপ্তানির ব্যাপার। আমি বলেছি, এমন কোনো সমস্যা নেই যেটা আলোচনা করে সমাধান করা যাবে না।
আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের ইন্ধন প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এনবিআরে সংস্কার করার কারণ হচ্ছে এখানে আগে অনেক রকম অসঙ্গতি (ডিসক্রেপেন্সি) ছিল। সেখানে অ্যাকাউন্টেবিলিটি ও ট্রান্সপারেন্সি নেই। এখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগের সরকারের সময় কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী সুবিধা পেতেন, ভালো যারা তারা সুবিধা পেতেন না। এনবিআর লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের ধারে কাছেও ছিল না।
তিনি বলেন, অতএব আমি অনুমান করে বলছি, এখানে ব্যবসায়ীদের কিছু স্বার্থ আছে। না হলে ক্যারিয়ার নিয়ে তারা হঠাৎ করে এত চটে গেলেন কেন? অন্য কোনো উদ্দেশ্য যদি না থাকে তাহলে এমন হওয়ার কথা নয়। এটা হলো আমার অনুমান। আন্দোলনের মাধ্যমে এনবিআর কর্মকর্তারা চাকরিবিধি লঙ্ঘন করছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এটা তো, হ্যাঁ, আমরা একটু ধৈর্য্য ধরছি। চাকরি করতে হলে অনেক বিধিনিষেধ মানতে হবে, শৃঙ্খলা থাকতে হবে।