নির্বাচন কমিশনের এনআইডি সার্ভার থেকে কারা ডাটা লিকআউট করে দিয়েছে তা ফরেনসিক টেস্টের মাধ্যমে বের করা সম্ভব বলে মনে করেন আইটি এক্সপার্ট এবং এক সময় নির্বাচন কমিশনের এনআইডি অনুবিভাগে কাজ করা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত ড. সালিম আহমেদ এসজিপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, টিই। তিনি মনে করেন ডাটা চুরি বন্ধে কমিশনের উচিত সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে জিরো ট্রাস্ট মনিটরিং করা।

গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে বসে দৈনিক সংগ্রামের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। ২০১৪ সালে তিনি এনআইডি অনুবিভাগের প্রজেক্টের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে প্রবাসী, নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকরা কর্মকর্তা কর্মচারী ও জেলে থাকা নাগরিকদের ভোট প্রদানের প্রকল্পে দায়িত্ব পালন করছেন।

ড. সালিম আহমেদ বলেন,ডাটা সংরক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশনের দক্ষ লোকবল তৈরি করা উচিত। সেইসাথে যারা কাজ করবে তাদের জিরো ট্রাস্ট মনিটরিংয়ে রাখা উচিত। এই কৌশল অবলম্বন করলে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি হতো না। তিনি বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরির ব্যাপারে ইনসাইডার থাকার তথ্য মিলেছে। তেমনি যেকোন অফিসে চুরির ক্ষেত্রে ইনসাইডার বা ভেতরের লোক থাকে। তিনি জানান এদের সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব। যেমন যাদের ৯টা বাজে অফিসে আসার ও ৫টা বাজে চলে যাওয়ার কথা তারা কেন অফিসে রাত ১০টা পর্যন্ত থাকবে। তাদের একটু জবাবদিহিতার আওতায় আনলে এসব চুরির ঘটনা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ অফ সময়টাতেই এসব ঘটনা ঘটে।

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন শুধু নির্বাচন কমিশন নয় সব প্রতিষ্ঠানেরই নিজস্ব ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করা দরকার। তাহলে অন্যদের চালানো যায়। নিজের যোগ্যতা না থাকলেতো আপনাকে অন্যরা চালাবে। টাইগার আইটির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। নিজের উদাহরণ টেনে বলেন, আমি যখন নির্বাচন কমিশনে এলাম। তখন আমি এই জবাবদিহিতার কাজটাই করার চেষ্টা করেছি। মাত্র সাড়ে ৪ মাস ছিলাম।

টাইগার আইটির কাছে এনআইডি সার্ভার নিরাপদ কি-না জানাতে চাইলে এই আইটি এক্সপার্ট বলেন, ওই যে বললাম ক্যাপাসিটি বিল্টআপ করা দরকার। তখন মনিটরিং ছিলো না। সেই সুযোগ ওরা নিয়েছে। তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন ডাটাতো একটা বাণিজ্যের উপাদান। বিশ্বজুড়ে ডাটা হলো ব্যবসার পূঁজি। তখনতো তারা ব্যবসার জন্য করেছে। তা হয়তো কারো নির্দেশেও করে থাকতে পারে। সেই সময়টাতো এখন আর নেই।

নিজেদের ক্যাপাসিটি তৈরি না করে হঠাৎ করে সার্ভার নিয়ে আসাটাও সমস্যার কারণ হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে নিজেদের সক্ষমতাটা বৃদ্ধি করতে হবে। দক্ষতা অর্জনটা আগে দরকার। পর্যায়ক্রমে বাদ দিতে হবে।

ডাটা মানুষের সম্পদ। এই ডাটা বাণিজ্যে কাজে লাগে। উদাহরণ টেনে ড. সালিম আরও বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ২০০০ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন। যাওয়ার সময় তার মলমূত্রও নিয়ে যাওয়া হলো বিমানে করে। তার কারণ তার পায়খানা পেশাব গবেষণা করে কেউ যদি তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে জেনে যায় ?

আওয়ামী লীগ শাসনামলের কথা টেনে তিনি আরও বলেন, এই যে আজ আপনি আমার সামনে বসে কথা বলতে পারছেন; একটা সময় ছিল এই কাজটি করার সুযোগ ছিল না। বিগত ১৫ বছরতো কোন সক্ষমতা বৃদ্ধি হয়নি। সক্ষমতার জন্য কাজ করতে চাইলে সহযোগিতার বদলে অসহযোগিতা করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. সালিম বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই সরকার এবং প্রাইভেট পিপিপি পার্টনারসিপে কাজ হয়। কিন্তু জবাবদিহিতার ব্যাপারটি থাকলে আর সমস্যা হয় না। সরকারের পক্ষ থেকে দক্ষতার সাথে মনিটরিং করতে পারলে আর সমস্যা হয় না। এজন্য দরকার সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট জনশক্তিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা। এবং তাদের জবাবদিহিতার আওতায় রাখা। তাহলে আর সরকারি তথ্য চুরির ঘটনা ঘটবে না।