ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে কর্মচারীদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ডিএসসিসি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন এবং জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে এই সংঘর্ষ চলার সময় ভিডিও ধারণকালে এক সাংবাদিককে ছুরি দেখিয়ে হুমকিও দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ইশরাকের শপথের দাবিতে আন্দোলন চলাকালীন সময়ে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানা যায়, দুজনেই বিএনপিপন্থী হলেও আরিফ চৌধুরী এবং আরিফুজ্জামান প্রিন্সের মধ্যে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব চলমান। সম্প্রতি ইশরাক হোসেনের শপথের আন্দোলনে সক্রিয় না থাকার অভিযোগ করে ‘বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে হামলা চালানো হয় আরিফুজ্জামান প্রিন্সের পক্ষের লোকদের ওপর। পরবর্তীতে তারাও পাল্টা হামলা চালান। সংঘর্ষে মনির, জসীম, মহিদুল, জুয়েল, কাইয়ুম, দিনার, জনিসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আঘাত পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এই ঘটনার দেড় ঘণ্টা পর ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে নগর ভবনে আসতে থাকেন ইশরাকের সমর্থকেরা। তাঁরা নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা দেড়টার দিকে আরিফুজ্জামানের অনুসারী সন্দেহে নগর ভবনের এক কর্মীকে মারধর করা হয়। তাঁর নাম শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি সিটি করপোরেশনের প্রশাসন শাখার কম্পিউটার অপারেটর। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ইশরাকের অনুসারীরা তৌহিদুলকে বেদম পেটাতে থাকেন। এ সময় পুলিশ এসে তৌহিদুলকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশের কাছে তৌহিদুলকে দিতে রাজি হচ্ছিল না ইশরাকের অনুসারীরা। পরে নগর ভবনে আগত আরেক ব্যক্তিকে আরিফুজ্জামানের অনুসারী সন্দেহে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ এই দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এসব ঘটনার ভিডিও ও ছবি তোলার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর চড়াও হতে দেখা গেছে ইশরাকের সমর্থকদের।
নাগরিক টেলিভিশনের প্রতিবেদক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শিশিরের মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে সব ছবি ও ভিডিও ডিলিট করে দেন ইশরাকের অনুসারীরা। এ সময় তাঁকে হেনস্তা ও হুমকি দিতে দেখা যায়।
আসাদুজ্জামান বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় মারধরের ভিডিও করতে গেলে তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। সব ভিডিও ও ছবি ডিলিট করে দেওয়া হয়। ছুরি দেখিয়ে তাঁর জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়। এরপর ভয়ে আর কোনো ভিডি ও ছবি তোলেননি তিনি।
মারধরের ভিডিও ধারণ করার সময় এখন টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যানকে বাধা দিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া এনটিভির প্রতিবেদককেও হেনস্তা করা হয়েছে। নগর ভবনে অবস্থানরত এনটিভির প্রতিবেদক নাজিবুর রহমান বলেন, তাঁকে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হয়েছে।
নগর ভবনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার আন্দোলনে শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন আরিফ চৌধুরী। পরে আন্দোলনে যুক্ত হতে আরেক শ্রমিক নেতা আরিফুজ্জামান নগর ভবনে এলে তাঁদের ওপর হামলার চালানো হয়েছিল। অবশ্য এই দুই পক্ষের মধ্যে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব ছিল।
নগর ভবনের একাধিক কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যাঁরা ইশরাকের আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন না, তাঁদের ‘বিরোধী পক্ষ’ মনে করা হচ্ছে। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তাঁদের নগর ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না। তাই আজ এই পক্ষের লোকজন আরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে নগর ভবনে এলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
আরিফুজ্জামান নগর ভবনে এসেছেন শুনে ইশরাকের অনুসারীরা ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে থাকেন। তাঁরা নগর ভবনে অবস্থান নেন।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আরিফ চৌধুরী বলেন, ঢাকাবাসীর ন্যায্য আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি পক্ষ বহিরাগতদের সংগঠিত করে এই হামলা চালিয়েছে।
আরিফুজ্জামান প্রিন্স জানান, আন্দোলনে সক্রিয় না থাকায় ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে সোমবার কয়েকজনকে নগর ভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়। এই বিষয়টি তাঁর কানে আসলে তিনি প্রতিবাদ জানানোর জন্য নগর ভবনে যান। তিনি বলেন, ‘আমি নগর ভবনে গেলে অন্য পক্ষ আমাকে দেখে তেড়ে আসে। বাগ্বিত-ার একপর্যায়ে তাঁরা হামলা চালায়। আমিসহ আমাদের দলের পাঁচজন আহত হয়েছেন।’
এর আগে গত ২৯ এপ্রিল এই দুই পক্ষের মধ্যে আরও একবার হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সেদিনও উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজনের আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়।