অন্তর্বর্তী সরকার গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সই করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ আমলের গুমের বিচারে উদ্যোগ নিলেও ‘গুমের সংস্কৃতি’ আবার ফিরে আসছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। সাম্প্রতিক দুটি ঘটনার উল্লেখ করে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানায় বাংলাদেশ পলিটিক্যাল থিংকারস (বিপিটি)। তারা বলছে, এ কারণে জনমনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিপিটি’র কো-অর্ডিনেটর ইঞ্জিনিয়ার মোঃ নুর নবী। সংগঠনের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হোসেন এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুইবার গুম হওয়া লেঃ কর্নেল হাসিনুর রহমান বীরপ্রতিক এবং বক্তব্য রাখেন বিপিটি সদস্য ও গুম বিরোধী এক্টিভিস্ট রায়হান চৌধুরী।
লেঃ কর্নেল হাসিনুর রহমান বীরপ্রতিক তার বক্তব্যে বলেন, দেশে গুমের পুনরাবৃতি দু:খজনক। ইস্কনের প্রতি নানা উস্কানীমূলক কর্মকান্ডের কথা শোনা গেলেও এবার গুমের অভিযোগ উঠেছে যা খুবই আপত্তিকর। এই দেশে আর গুমের ঘটনা চলতে দেওয়া যাবে না। তদন্তে ইস্কন যদি দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে তাদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানাবো আপনি দেশের নাগরিকদের গুম বন্ধে কি উদ্যোগ নিয়েছেন? আগষ্ট বিপ্লবের পর গুমের ঘটনায় আপনার পদত্যাগ করা উচিত।
লিখিত বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার মোঃ নুর নবী বলেন, গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের অভিযোগে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাপক সমালোচনার মুখে ছিল। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে সাত শ’র বেশি মানুষ গুম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৫০ জনের বেশি মানুষের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। এ সকল গুমের ঘটনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ভারতের জড়িত থাকার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। গুম সম্পর্কিত তদন্ত কমিশন মোট ১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগের মধ্যে ৭৫৮টি অভিযোগের প্রাথমিক পর্যালোচনা করেছে কমিশন। সে মোতাবেক তাদের দাবি গুম করা ব্যক্তিদের অনেকেই বেঁচে নেই।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় গুমের সেই সংস্কৃতি বছর না ঘুরতেই আবার চালু হয়ে গেছে! বিশেষ করে সম্প্রতি দুইটি ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। একটি হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তুরাগ থানার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কে এম মামুনুর রশিদ এবং চলতি সপ্তাহে গাজীপুরের টঙ্গী টিঅ্যান্ডটি এলাকার বিটিসিএল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানীর গুমের ঘটনা।
তিনি আরো বলেন, পূর্বের ন্যায় গুমের সংস্কৃতি ফেরত আসার ঘটনায় দেশের নাগরিকদের মাঝে উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২৪ এর জুলাই বিপ্লবের পর দেশে গুমের ঘটনা কোনভাবেই সমীচিন নয়। তাহলে গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেই লাভ হলো কি! অভিযোগ যার দিকেই আসুক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঘটনা তদন্ত করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পলিটিক্যাল থিংকারস আরো গুরুত্ব আরোপের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। স্বাধীন দেশে কোন মানুষ গুমের শিকার হবে না এটাই আমাদের প্রত্যাশা। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিপিটি মিডিয়া সেলের সদস্য সদস্য জাফর আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মুহিবুর রহমান, মো: মোরশেদ আলম, মাওলানা কামাল উদ্দিন উল্লেখযোগ্য।