ঈদুল ফিতরের টানা নয় দিনের ছুটি কাটিয়েছে নগরবাসী। বরাবরের মতো ঈদের ছুটিতে ঢাকার সড়ক ছিল ফাঁকা। ছুটির নবম দিন শনিবারও ঢাকার মধ্যে সড়কগুলো অনেকটা ফাঁকাই দেখা গেছে। তবে কিছুটা চাপ ছিল ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে। এছাড়া ফাঁকা সড়কে বরাবরের মতো দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো। গণপরিবহন কম থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি ছিল প্রায় সব সড়কেই।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ঢাকার সড়ক এখনও প্রায় ফাঁকা। নেই চিরচেনা যানজটের তেমন ভোগান্তি। বিভিন্ন মোড়ে সিগন্যালে পড়লেও খুব বেশি সময় আটকে থাকতে হচ্ছে না।
অন্য সময়ে গুলশান-১ এর মতো জায়গায় কিছুটা সময় হলেও সিগন্যালে পড়তে হয়, কিন্তু শনিবার তেমনটি দেখা যায়নি। মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই পার হয়ে যাচ্ছে গাড়ি। বলাই চলে রাজধানী ঢাকার সড়কে এখনো ঈদের ছুটির আমেজ বিরাজ করছে।
রাজধানীর গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দূরপাল্লার পরিবহনগুলো যাত্রী বোঝাই করে ঢাকায় প্রবেশ করছে। গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে বাসগুলো থামলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল, রিকশা যাত্রীরা ঢাকার মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে হাঁকডাক দিচ্ছেন। গাবতলীতে কিছুটা চাপ রয়েছে গাড়ির।
গাবতলী এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা দিলবার হোসেন জানান, শুক্রবার এবং শনিবার কিছুটা চাপ বেড়েছে গাড়ির। প্রায় ২৪ ঘণ্টায় গাড়ির চাপ রয়েছে। আগামী দুএকদিন এই চাপ থাকবে। এদিকে শনিবার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। সকাল থেকে লঞ্চযোগে আসা মানুষের চাপ বেড়েছে সদরঘাটে।
লঞ্চকর্মীরা বলছেন, গত দু’দিনের চেয়ে আজ ভিড় বেশি। ঢাকায় ফেরা প্রায় সব লঞ্চ যাত্রীদের রেখে আবার বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। ফলে টার্মিনালে মানুষের ভিড় ও কিছুটা দুর্ভোগ লক্ষ্য করা গেছে। টার্মিনাল থেকে নেমে দীর্ঘ পথ হেঁটে যানবাহনে উঠতে হয়েছে যাত্রীদের।
শনিবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দেখা যায়, সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কমলাপুর অভিমুখী প্রতিটি ট্রেনে ছিল যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ। অর্থাৎ ট্রেনযোগে ঢাকায় ফেরা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। সড়কপথে বাড়তি ভোগান্তি (যানজট) এড়াতে কর্মজীবীরা ট্রেনকেই বেছে নিয়েছেন। ঈদের আগে-পরে শিডিউল বিপর্যয়ও ছিল না। এতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করেছেন যাত্রীরা।
এদিকে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাচল করলেও অধিকাংশ গণপরিবহনে আসন ফাঁকাই থাকছে। চেনা ঢাকার মতো নেই যানজটও। সেই সঙ্গে গণপরিবহনের গেটে যাত্রী ঝুলার চিত্রও চোখে পড়েনি। এছাড়া যাত্রীর অভাবে গণপরিবহনগুলো রাজধানীর বিভিন্ন বাস পয়েন্টে এসে কিছু সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকতেও দেখা যায়।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কথা হয় মামুন নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। মিরপুর-১১ নম্বর থেকে আগারগাঁও এসেছেন তিনি। মামুন বলেন, সাধারণত অফিস চলাকালীন মিরপুর এলাকায় যানজটে বের হতেও ভয় লাগে। কিন্তু ঈদের পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো যানজটে পড়তে হয়নি।
আলিফ পরিবহনের কন্ডাক্টর জাকির শেখ জানান, রাস্তায় যাত্রীই নেই। মাঝে মাঝে এক’দুজন পেলেও তারা কাছাকাছি নেমে যাচ্ছেন। খরচের টাকা তুলতেই হিমশিম খেতে হয়েছে গত কয়েকদিন। আগামীকাল থেকে হয়তো ঈদের আগের মতো যাত্রী পাবো।
বাড্ডা সড়কে চলাচলরত ভিক্টর ক্যাসিক পরিবহনের বেশ কয়েকটি বাসে দেখা যায় অর্ধেকের কম যাত্রী নিয়ে চলছে বাস। ভিক্টর ক্যাসিকের চেকার রাসেল আহমেদ জানান, ঈদের ছুটিতে যাত্রী কম। তবে আজ সন্ধ্যা থেকে হয়তো যাত্রী ধীরে ধীরে বাড়বে।
মৌমিতা পরিবহনের চালকের সহকারী মো. জীবন বলেন, খুব একটা যাত্রী নেই। যাত্রী না থাকার কারণে দুইদিন গাড়ি নিয়ে বেরই হইনি। আজও একই অবস্থা। রোববার থেকে শুরু হলেও, অধিকাংশ বেসরকারি অফিসের ছুটি ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। জীবিকার তাগিদে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন রাজধানীবাসী।
তবে এবারের ঈদযাত্রা ছিল গত বছরের তুলনায় অনেক মসৃণ এবং সুবিধাজনক। রাজধানীর প্রবেশমুখে যানজটের কোনো বড় সমস্যার সৃষ্টি হয়নি।
সকাল হওয়ার সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রীরা রাজধানীর উদ্দেশে আসতে শুরু করে। দূরপাল্লার বাসগুলো একে একে টার্মিনালে এসে থামছিল এবং যাত্রীরা ক্লান্ত কিন্তু শান্ত চেহারায় নামছিলেন। তবে এবারের ঈদযাত্রা ছিল তুলনামূলকভাবে মসৃণ। দীর্ঘদিন পর মানুষ কোন টানা হেঁচড়ায় না পড়ে নির্বিঘ্নে কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন।
গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রীদের উপস্থিতি বেড়েছে, তবে দূরপাল্লার পরিবহনগুলোতে যাত্রী চাপ কম ছিল। বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. জুবায়ের মাসুদ বলেন, “এই ঈদযাত্রায় বাস মালিকদের খুব ভালো অবস্থা ছিল না। তবে যাত্রীদের স্বস্তি দিতে পেরে আমরা সন্তুষ্ট।”
কমলাপুর রেলস্টেশনে সার্ভার জটিলতার কারণে অনলাইনে ট্রেন টিকিট বিক্রি বন্ধ ছিল, তবে ১৫ ঘণ্টা পর এটি স্বাভাবিক হয়ে যায় এবং শিডিউল বিপর্যয়ও কাটতে শুরু করে। এদিকে, পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে হাজার হাজার যাত্রী ফেরি ও লঞ্চে করে পদ্মা নদী পার হচ্ছেন। তবে কোথাও কোথাও বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তা সালাম হোসেন বলেন, “ঈদযাত্রায় সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমানে যাত্রীদের চাপ রয়েছে। তবে নৌপথে কোনো বড় সমস্যা দেখা যায়নি। এবারের ঈদে সরকারি কর্মকর্তাদের টানা ৯ দিনের ছুটি ছিল, যা সরকারি আদেশে ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছিল।