তিন জেলায় আরও ৯২ জনকে পুশ ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট সীমান্ত দিয়ে ১৯, সীমান্তবর্তী জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার সীমান্ত দিয়ে আবারও ভারতীয় ১৯ নাগরিক ও ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তের গেট খুলে শিশুসহ ৫৪ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়েছে। এর আগে শনি ও রোববার সিলেট, মৌলভীবাজার এবং মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে ১৭২ জনকে পুশ ইন করা হয়।

জানা গেছে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার কালেঙ্গা সীমান্ত দিয়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ১৯ জনকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে বিএসএফ। গতকাল সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করা হয়। চুনারুঘাট থানার ওসি মো. নূর আলম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বরাতে এ তথ্য দেন। পুশইন করা লোকজন বাংলাদেশের কুড়িাগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা। তারা ২০ বছর পূর্বে রুটি রুজির তাগিদে ভারতের হরিয়ানায় ইটভাটার শ্রমিকের কাজ করতেন বলে জানান। পুশইন করা ব্যক্তিরা হলেন- লোকমান হোসেন ৬৫, তার স্ত্রী কিসমন (৫৪), ছেলে ইসলাম (২৬), ইসমাইল (২৪), মেয়ে আফরোজা (২৯), ছেলে ইসলামের স্ত্রী জেসমিন (২৩), ইসলামের মেয়ে রেশমা (৫), লোকমান হোসেনের ছেলে ইসমাইলের স্ত্রী কাকলি বেগম (২২), ইসমাইলের ছেলে শাহজাহান (২), তাদের আত্মীয় নিলুফা (১১), ওবায়দুর (৫০), ফাতেমা বেগম (৪৫), ইয়াসমিন (১৪), আবুল মিয়া (৫২), জাহানারা (৪০), আলম (১১), রবিউল (১৪), ছখিনা (৬০)। ওসি মো. নূর আলম বলেন, পুশইন হওয়া সবাই বিজিবির সীমান্ত ফাঁড়িতে অবস্থান করছেন। তাদের ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে কালেঙ্গা সীমান্ত ফাঁড়ি দিয়ে টেলে দেয় বিএসএফ। চুনারুঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, ‘পুশইন হওয়া সবাই কালেঙ্গা সীমান্তে বিজিবির পাহাড়ায় রয়েছে।

মাটিরাঙ্গা সীমান্তে ফের ১৯: সীমান্তবর্তী জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার সীমান্ত দিয়ে আবারও ভারতীয় ১৯ নাগরিককে পুশ ইন করেছে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এদেরকে আটক করেছে বিজিবি। সোমবার ভোরের দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নের আচালং ডিপি পাড়া এলাকার সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন করা হয়। তাদরে মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে। তাদেরকে ভারতের হরিয়ানা রাজ্য থেকে এনে মাটিরাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন করা হয়েছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, পুশ ইন হওয়া সবাই বিজিবির কৃষ্ণ দয়াল বিওপির আওতাধীন ডিবি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান করছে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মঞ্জুরুল আলম পুশ ইনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যাদের জোরপূর্বক পুশ ইন করা হয়েছে তারা বর্তমানে বিজিবির হেফাজতে রয়েছে। তাদের পরিচয় যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। তারা যদি বাংলাদেশি নাগরিক হয় সেক্ষেত্রে তাদেরকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পরিচয় শনাক্তের কাজ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও। জেলা প্রশাসক মো. ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেছেন, পুশ ইন হওয়া সবাই স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে বিজিবি পাহারায় রয়েছে। বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশী হলে তাদের নিজ নিজ জেলায় পাঠিয়ে দেয়া হবে। এর আগে চলতি মাসে কয়েক দফায় খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৮০ জনকে পুশ ইন করেছে বিএসএফ।

মহেশপুর সীমান্তের গেট খুলে শিশুসহ ৫৪: রোববার ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তের গেট খুলে শিশুসহ ৫৪ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে বিএসএফ। বিকেল ৪টার পরে মহেশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীন কুসুমপুর ও বেনীপুর সীমান্ত দিয়ে পুশইনের এ ঘটনা ঘটে। মহেশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক ও কোয়ার্টার মাস্টার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কুসুমপুর ও বেনীপুর বিওপির পৃথক অভিযানে আটক করা হয় তাদের। আটকদের মধ্যে ১৯ জন নারী, ১১ জন পুরুষ ও ২৪ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে ৯ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন- লালমনিরহাট সদরের খোরারপুল গ্রামের শাহজাদার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩২), জাহাঙ্গীর আলমের ভাই জিয়ারুল (২৩) ও রাসেল (২১), কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থানার জয়মঙ্গল গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে ইউসুফ আলী (২৬), একই গ্রামের জাকারিয়া হোসাইন (২৮) ও একই উপজেলার তেলীপাড়া গ্রামের আইয়ুব আলী (৫০), খুলনার দাকোপ থানার কামারখোলা গ্রামের হাকিম সিকদার (৫২), তার ছেলে শাহাজান সিকদার (২১), নড়াইলের কালিয়া থানার বিষ্ণুপুর গ্রামের আপন মল্লিক (৫১) ও একই গ্রামের মালেক হাওলাদারের ছেলে মনি হাওলাদার (২৮)। আটক ব্যক্তিদের বরাতে বিজিবি জানিয়েছে, ভারতের গুজরাট থেকে নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশে ফেরার জন্য সীমান্তে আসেন ৪৫ জন। পরে শনিবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আটক হন তারা। একপর্যায়ে সীমান্ত পিলার নম্বর ৬২/২-এস এবং ৬২/৩-এস এর মধ্যবর্তী গেট খুলে দিয়ে তাদের বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয় বিএসএফ। একইভাবে মহেশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীন বেনীপুর বিওপি এলাকায় সীমান্ত গেট খুলে দিয়ে নয়জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করে বিএসএফ।

আটক ব্যক্তিদের বরাতে বিজিবি আরও জানিয়েছে, গত ২৪ মে নয়জনকে আটক করে ভারতের হরিয়ানা পুলিশ। পরে বাসে করে তাদের মহেশপুর ৫৮ বিজিবির অধীন জীবননগর সীমান্তের ওপারে বিএসএফ ক্যাম্পে রেখে যায় হরিয়ানা পুলিশ। রোববার বিকেল ৪টার দিকে সীমান্তের ৬২/২-এস এবং ৬২/৩-এস পিলারের মধ্যবর্তী গেট খুলে ওই নয়জনকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয় বিএসএফ। পরে বিজিবির হাতে আটক হন তারা। মহেশপুর খালিশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সীমান্তের গেট খুলে দিয়ে ৫৪ জনকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে বিএসএফ। পরে বিজিবির টহল দলের হাতে আটক হন তারা। আটক ব্যক্তিরা ভারতের হরিয়ানা ও গুজরাটে বসবাস করতেন।