রোজার মধ্যে দু’একটি পণ্য ছাড়া অধিকাংশ সবজির দাম ছিল সহনীয়। তারই ধারাবাহিকতায় ঈদ পণ্যের দামেও স্বস্তি বিরাজ করছে। পোলাওর চাল ও চিনির দাম কমেছে। তবে ব্রয়লার মুরগীর বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগীর দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সবজির বাজারে বেগুন ও শশার দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিকেজি বেগুন ও শশা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় ।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, অধিকাংশ ঈদ পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। গত বছর রোজার ঈদের তুলনায় প্রতিকেজি পোলাও চাল ৪০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। কেজিপ্রতি চিনির দাম কমেছে ২০ টাকা। গতবারের তুলনায় সেমাইও বিক্রি হচ্ছে কম দামে। আর দুধ ও ঘি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি এলাচ বাদে সব ধরনের মসলা পণ্যের দামও স্থিতিশীল। তবে মুরগির বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্রতিকেজি মুরগির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, গত বছর রোজার ঈদের আগে ২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট চিকন সেমাই বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা। যা এবার ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিকেজি খোলা চিকন সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা। যা গত বছর বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৮০ টাকা। ২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। যা আগে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিকেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা। যা আগে ১৪০-১৬০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা। যা গত বছর ঈদের আগে বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা।

বিক্রেতারা আরও জানান, প্রতিকেজি মিল্কভিটা ঘি বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকা। যা এক মাস আগেও ৬০ টাকা কম ছিল। এছাড়া প্রতিকেজি প্রাণ ঘি বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকা ও আড়ং ব্র্যান্ডের প্রতিকেজি ঘি বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকা। তাছাড়া ডিপ্লোমা দুধ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৯০ টাকা। প্রতিকেজি ডানো ও মার্কস বিক্রি হচ্ছে ৮৮০ ও ৮৬০ টাকা। প্রতিকেজি কিশমিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা। যা গত বছর একই সময় ৬৮০-৭০০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪৫ টাকা। যা গত বছর ঈদের আগে বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-১৬০ টাকা। যা আগে ১২০-১৪০ টাকা ছিল। দেশি শুনকা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। যা আগে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকা। ছোট দানার এলাচ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০০-৫০০০ টাকা। এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা। যা আগে ৭৫০-৭৮০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৩০ টাকা।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন জানান, সরকারের একাধিক পদক্ষেপের কারণে এবার রোজায় দু-একটি পণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দামে ভোক্তারা স্বস্তিতে ছিল। ঈদেও যাতে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে। এতে বাজারে ঈদ ঘিরেও ক্রেতারা স্বস্তি পাবে।

এদিকে বৃদ্ধি পাওয়া চালের দাম এখনো কমেনি। গত এক মাসের ব্যবধানে মান ও জাতভেদে ৫০ কেজির চালের বস্তায় ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা এবং নাজির শাহ ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা, নাজির ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি করা ভারতীয় চালের দাম কিছুটা কমলেও মৌসুমের শেষ দিকে হওয়ায় দেশীয় চালের দাম বাড়ছে। করপোরেট সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ বাজারে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে বলে দাবি তাদের। বোরো মৌসুমের নতুন চাল বাজারে এলে দাম কমবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

অপরদিকে সবজি বাজারে দেখা গেছে, কিছু কিছু সবজির দাম বেড়েছে। বেগুন ও শশার কেজি ৮০ থেকে একশত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিম ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস, বাঁধা কপি বড় সাইজের ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, পাকা টমেটো কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মটরশুটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, খিরাই ৭০-৯০ টাকা এবং শশা ৮০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকায়, পটল ১০০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দুল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর মুখী ১২০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, সাজনা ১৬০ টাকা ঝিঙ্গা ৮০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে লেবুর হালি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, ধনে পাতা ১৪০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, চাল কুমড়া ৮০ টাকা পিস, কেপসিকাম ৮০-১২০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মূলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১০-১৫ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ৫০ টাকা এবং ডাঁটাশাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাজারে আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে। নতুন আলু ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বগুড়ার লাল আলু ৩৫ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন দেশি ১০০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে মুরগির বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এসব বাজারে সোনালি কক মুরগি কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বেড়ে ৩৩০ টাকায় এবং সোনালি হাইব্রিড কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ৩২০ টাকা, সাদা লেয়ার কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ৩০ টাকা বেড়ে ২২০-২৪০ টাকা এবং দেশি মুরগি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৬৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে গরুর গোশত কেজি প্রতি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা, গরুর মাথার গোশত ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির গোশত কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে চলতি সপ্তাহে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এসব বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১১০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ১৭০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা , মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকায়, বোয়ালমাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, মাছের বাজারে দেখা গেছে, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কই মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রুপচাঁদা ১২০০ টাকা, বড় বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, সোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কুড়াল মাছ ৭০০ টাকা, কাজলি মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।