২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনে বৃহৎ পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর পরিকল্পনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০০৮ সালের পর প্রথমবারের মতো এটাই হতে যাচ্ছে ইইউর পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন। গতকাল মঙ্গলবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ তথ্য জানান বাংলাদেশের ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ইইউ পর্যবেক্ষক মিশনের চূড়ান্ত অনুমোদন এখনো বাকি রয়েছে, তবে এতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য থাকতে পারেন। তাদের মধ্যে কিছু পর্যবেক্ষক নির্বাচনের ছয় সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন এবং বাকিরা ভোটের প্রায় এক সপ্তাহ আগে যোগ দেবেন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের পর এই প্রথম ইইউ বাংলাদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে। নির্বাচনের সময় দেশীয় পর্যবেক্ষক নিয়োগেও সহায়তা করবে ইইউ। এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বাংলাদেশের শাসন ও সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচন প্রস্তুতি, বিচার বিভাগ ও শ্রম খাতের সংস্কার, বাংলাদেশ-ইইউ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক এবং সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়াসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
রাষ্ট্রদূত মিলার জুলাই মাসের জাতীয় সনদকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং একে দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি সদ্য অনুমোদিত শ্রম আইন সংস্কার এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জোরদারের পদক্ষেপগুলোকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য বলে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এসবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, এবং ইইউর পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনের প্রচেষ্টার প্রতি অব্যাহত সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রদূত মিলার আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে দেশের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের একটি সুযোগ' হিসেবে অভিহিত করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় ইইউর অব্যাহত সহায়তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
উভয়পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও গভীর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। এর মধ্যে ছিল একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির সম্ভাবনা এবং বিমান ও নৌপরিবহন খাতে নতুন সুযোগ অনুসন্ধান। তাঁরা মানবপাচার ও অবৈধ অভিবাসন রোধেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে একমত হন। প্রধান উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া টার্মিনাল উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য বিশ্ববিখ্যাত শিপিং কোম্পানি এ.পি. মোলার-ম্যার্সকের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে।
রাষ্ট্রদূত মিলার জানান, ড্যানিশ কোম্পানিটি প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে, যাতে লালদিয়াকে এই অঞ্চলের অন্যতম আধুনিক টার্মিনালে পরিণত করা যায়। এসময় উভয় পক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ, প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই এবং মানবাধিকার রক্ষায় যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার বিষয়েও আলোচনা করেন।