চলতি সপ্তাহে কুরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ

কামাল উদ্দিন সুমন : আসন্ন ঈদুল আযহার সময় কুরবানির পশুর চামড়ার বিষয়ে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কুরবানির পশুর চামড়া নিয়ে যে ধরনের ছিনিমিনি হয়েছে তা এবার হতে দেয়া হবে না এমন পরিকল্পনা থেকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, পশু আনা-নেওয়া, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চামড়া সন্ত্রাসীদের কঠোরভাবে প্রতিরোধ করাসহ সার্বিক বিষয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিনের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তিনি। এবার চামড়া সন্ত্রাসীদের রুখতে জেলায় জেলায় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলাপ্রশাসকরাও ইতোমধ্যে এবিষয়ে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, কুরবানির পশুর চামড়া নিয়ে চাঁদাবাজির ঘটনা আমরা ঘটতে দেব না। কেউ জোরপূর্বক চামড়া নিয়ে গেলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না। চামড়া বিদেশে রপ্তানি ও স্থানীয় শিল্পে ব্যবহৃত হয়। এটি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল। তাই চামড়া যাতে নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

এদিকে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, চলতি সপ্তাহে চামড়ার মুল্য নির্ধারন করে দিতে পারে মন্ত্রণালয়।

এদিকে সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উচ্চপর্যায়ের ঐ বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমরা দেখছি মানুষ কুরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সমাজের হতদরিদ্র মানুষেরা যারা এই চামড়া বিক্রির টাকার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এই অব্যবস্থাপনার অবসান হওয়া প্রয়োজন।’

পশুর চামড়ার দাম নিয়ন্ত্রণে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো যাতে কোন সিন্ডিকেটের বা অব্যবস্থ্যাপনার কারণে মানুষ কুরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত না হন।’

তিনি কুরবানির পশু পরিবহণ ও হাটে বিক্রির সময় যাতে পশুর প্রতি কোন নির্দয় আচরণ করা না হয় সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করার জন্য নির্দেশ দেন। এসময় তিনি চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে ইটিপির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার উপরও জোর দেন।

এদিকে চলতি বছর পবিত্র ঈদুল আযহায় কুরবানির জন্য ১ কোটি ২৪ লাখ পশু প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

তিনি বলেন, চলতি বছর কুরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্টকৃত গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। এসব গবাদিপশুর মধ্যে ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫ টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০ টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২ টি অন্যান্য প্রজাতির পশু রয়েছে। এ বছর প্রায় ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫ টি গবাদিপশুর উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফরিদা আখতার বলেন, আগামী কুরবানি ঈদের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে প্রস্তুতি নিচ্ছি, যাতে আমাদের গবাদিপশুর বাজার স্থিতিশীল থাকে। পশু যাতে আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, তা নিয়ে খামারিদের সাথে কথা হয়েছে। চাঁদাবাজির কারণে পশুর দাম যেন না বাড়ে সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছি, যেকোন সমস্যার সমাধান করা যাবে বলে মনে করছি।

কুরবানির পশুবাহী ট্রাক ছিনতাইরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে পশু পরিবহন নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (বিজিবি এবং বাংলাদেশ পুলিশ), জেলা প্রশাসন, জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের যৌথ সহযোগিতা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (হট লাইন-১৬৩৫৮) চালু থাকবে। যেকোন সমস্যা সমাধানে ফোন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবাদিপশুর চামড়া ছাড়ানো বিষয়ক প্রশিক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গবাদিপশু কুরবানির জন্য কুরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণ বিষয়ে ১৫ হাজার ৩৬৯ জন পেশাদার ও ২১ হাজার ২০৮ জন অপেশাদার মাংস প্রক্রিয়াজাতকারী (কসাই) কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চামড়া খাতে বর্তমানে ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৫১২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৪১৪৫ কোটি টাকা। মোট ঋণের প্রায় ৯১ শতাংশই খেলাপি। বাকি ৯ শতাংশ ঋণ নিয়মিত রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোয় বিতরণ করা ঋণের ৯২ শতাংশই খেলাপি। খেলাপি ঋণের ৯৬ শতাংশ অনেক পুরোনো। এগুলোর মধ্যে ২৬০০ কোটি টাকা আদায় করতে না পেরে ব্যাংক অবলোপন করেছে।

চামড়া খাতের রপ্তানিতে ঋণ দেওয়া হয়েছে ২২০০ কোটি টাকা, চামড়াজাত পণ্যে দেওয়া হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। বাকি টাকা দেওয়া হয়েছে শিল্পঋণ ও চলতি মূলধন হিসাবে।

আশির দশকে এ খাতে যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সবই এখন খেলাপি। নব্বইয়ের দশকে কিছু ভালো উদ্যোক্তা এসেছেন, তারা এখন এ খাতের সফল ব্যবসায়ী। মূলত তাদের ঋণই নিয়মিত রয়েছে।

রপ্তানি খাতে সরকারি ব্যাংকগুলো দিয়েছে ১৮২০ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো দিয়েছে ৩৪ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংক ৪০০ কোটি এবং ইসলামী ব্যাংকগুলো দিয়েছে ২৯০ কোটি টাকা।

চামড়াজাত পণ্যে সরকারি ব্যাংক ৮৩০ কোটি, বিশেষায়িত ব্যাংক ২০ কোটি, বেসরকরি ব্যাংক ৫১০ কোটি এবং ইসলামী ব্যাংক ৭৫ কোটি টাকা দিয়েছে। বিদেশি ব্যাংকগুলো এ খাতে শুধু চলতি মূলধন ও ট্রেডিং খাতে কিছু ঋণ দিয়েছে।

চামড়া খাত ব্যাপক সম্ভাবনাময়। বিদেশে এ খাতটি বেশ প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে দুর্বল হচ্ছে। বিদেশে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে দাম। কিন্তু দেশের বাজারে কাঁচা চামড়ার দাম কমছে। ৫ বছরে দেশের বাজারে কাঁচা চামড়ার দাম কমেছে ২০ শতাংশ। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রক্রিয়াজত করা ভালো মানের চামড়ার দাম বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। ফলে চামড়াজাত পণ্যের দামও বেড়েছে।

বিভিন্ন সময়ে চামড়া খাতের ওপর তৈরি জরিপ প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, এ খাতে ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তারা অন্য খাতে সরিয়ে নেন। তারা এ টাকায় অন্য ব্যবসা করছেন। সেসব ব্যবসা ভালো চললেও ঋণের টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। ব্যাংকও খেলাপি ঋণের বিপরীতে একটি মামলা করেই দায়িত্ব শেষ করেছে। যে কারণে এ খাতের খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না।

আগের চেয়ে এ খাতে জালজালিয়াতি কমলেও এখন কাঁচা চামড়া কেনার জন্য যেসব ঋণ দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর বড় অংশই ফেরত আসছে না। যে কারণে এবার ব্যাংকগুলো ঋণ দিচ্ছে কম। গত বছর এ খাতে ২৫৯ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়ছিল। ঋণ বিতরণের নয় মাসের মধ্যে এগুলো ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু ফেরত এসেছে মাত্র ৯২ কোটি টাকা। বাকি টাকা ফেরত আসেনি। এগুলো এখন খেলাপি হওয়ার অপেক্ষায়। ২০২২ সালে ৪৪৩ কোটি টাকা বিতরণের বিপরীতে ফেরত এসেছে ১২৮ কোটি টাকা, ২০২১ সালে ৬১০ কোটি টাকার বিপরীতে ফেরত এসেছে মাত্র ২১৮ কোটি টাকা। ওই তিন বছরে ব্যাংকগুলো চামড়া খাতে ঋণ দিয়ছে ১৩১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফেরত এসেছে মাত্র ৪৩৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের মাত্র ৩৩ শতাংশ। বাকি ৭৭ শতাংশ অর্থই ফেরত আসেনি। উদ্যোক্তা ঋণের টাকা ফেরত না দিয়ে ঋণসীমা বাড়িয়ে নতুন ঋণ নিচ্ছেন। ফলে আগের টাকা আর ফরত আসছে না। আর ব্যাংকগুলো রাজনৈতিক চাপে পড়ে ঋণসীমা বাড়িয়েই যাচ্ছে।

এদিকে ঈদুল আযহা হচ্ছে দেশের চামড়া শিল্পের জন্য রমরমা সময়। এসময় চামড়া সংরক্ষণে নানাবিধ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। লবণের দাম বৃদ্ধি আর সেই সাথে ভাইরাস এই দু কারণে চামড়ার বাজার অনেকটাই ঝুঁকির মুখে।

দেশের চামড়ার বড় জোগান আসে ঈদুল আযহায়। কুরবানির পর তাদের চামড়া সংরক্ষণ করা যা আমাদের চামড়া শিল্পে নতুন গতি আনে। চামড়াকে সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে লবণের বড় অবদান রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই লবণের দাম বেড়ে গেছে। সিন্ডিকেটের কারণে লবণ এখন অনেকটাই ধরা ছোঁয়ার বাইরে। লবণের হঠাৎ দাম বাড়াতে কপালে ভাজ পড়েছে চামড়া ব্যবসায়ীদের।

তাদের শঙ্কা, লবণের কারণে এবার বিপুল পরিমাণের চামড়া নষ্ট হতে পারে। আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই কুরবানির ঈদ বা ঈদুল আযহা। এই সময়ে এসে বেড়ে গেছে লবণের দাম। এতে করে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাঁচা চামড়ার বাজার নাটোরের চকবৈদ্যনাথ মোকামের ব্যবসায়ীদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।

এ ছাড়া, গরুর চামড়ায় নতুন ভাইরাসের আক্রমণ ব্যবসায়ীদের এ চিন্তা আরও বাড়িয়েছে। ভাইরাসের কারণে কেজি দরে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে লবণজাত চামড়া। গরুকে মাত্রাতিরিক্ত ফিড (প্রক্রিয়াজাত খাবার) খাওয়ানোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় গরুর চামড়ায় ভাইরাসের আক্রমণ হচ্ছে বলে দাবি তাদের।

জানা গেছে দেশে এবার পর্যাপ্ত লবণ উৎপাদন হওয়ায় চাষীদের স্বার্থে সম্প্রতি লবণ আমদানি না করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর এই সুযোগে অপরিশোধিত লবণের দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে চামড়া শিল্পে। ১০ টাকা কেজির লবণ ১৫ টাকায় কিনে চামড়ায় ব্যবহার করায় খরচ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে চামড়া ব্যবসায়ী রকিব উদ্দিন কমল জানান, গত সপ্তাহে ৭০ কেজির প্রতি বস্তা লবণের দাম যেখানে ছিল ৭শ টাকা, হঠাৎ করেই সেই লবণের দাম বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি লবণের দাম ৫ টাকা বেড়ে গেছে। অথচ দেশে এবার পর্যাপ্ত লবণ উৎপাদন হয়েছে।

তিনি বলেন, লবণের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চামড়ার খরচ বাড়বে। আর এ ব্যয় সংকোচনে খুচরা পর্যায়ে লবণবিহীন চামড়ার দাম কমে যাবে বলে ধারণা এই ব্যবসায়ীর।

চামড়া ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, খামারগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত ফিড খাওয়ানোর কারণে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় গরুর চামড়ায় ভাইরাস ও লাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিচ্ছে। এসব চামড়া লবণজাত করার পর মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার ট্যানারিতে নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে গিয়েও দেখা যাচ্ছে চামড়ায় ছিদ্র ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে। ফলে ট্যানারি মালিকরাও পড়ছেন লোকসানে।

ট্যাানারি মালিক শাহীন বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজনৈতিক প্রভাব থেকে বেরিয়ে বেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের বৃহত্তম কাঁচা চামড়ার এ বাজারটি। কিন্তু লবণের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হবে এবং চামড়া পাচারের পথ তৈরি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কর্মকর্তা রশিদ জানান, আমাদের হাজারীবাগ থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল সাভারে। আমাদের এই জায়গাগুলোকে (হাজারীবাগ) রেড জোন দিয়ে রেখেছিল। আমরা ওখানে (সাভারে) গিয়ে ব্যবসা করতে পারিনি। সিইটিপি ঠিক নেই, কোনো অবকাঠামো ঠিক হয়নি। এখন উনার (অর্থ উপদেষ্টা) কাছে জানিয়েছি। উনারা সমাধান করবেন আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।

এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, “আমাদের দাবি সিইটিপি ঠিক করে দেওয়া। ওনাদের কারণেই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। এ কারণে সুদ মওকুফ করে আমাদের ঋণ রিশিডিউল করে দেওয়ার কথা বলেছি।

অ্যাসোসিয়েশনের আরেক কর্মকর্তা বলেন, সিইটিপি অসম্পূর্ণ থাকার কারণে বর্তমানে আন্তর্জাতিক যে বাজার দর আছে, আমরা তার থেকে ৭০/৮০ শতাংশ কম দামে চীনে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। আমরা যদি এটার ভ্যালু এডিশন বাড়াতে পারি, তাহলে আগের জায়গায়, যেমন ২০১৫-২০১৬ সালে দুই হাজার টাকায় চামড়া কিনতাম, আবার সেই জায়গায় যেতে পারব।

তিনি বলেন, বিসিক শিল্প নগরীতে ট্যানারি মালিকদের যে অংশগ্রহণ, সেটা যথার্থই ছিল। ব্যর্থ যেটা হয়েছে, সেটা সরকারি প্রতিষ্ঠান বিসিকের কারণেই হয়েছে। কাজেই ব্যর্থতার দায়ভার কোনো অবস্থাতেই ট্যানারি মালিকদের ওপর বর্তায় না। অর্থ উপদেষ্টা আমাদের কথা শুনেছেন। সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।”

বিসিক এর তথ্য মতে, ২০২২-২৩ মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনে গত ৬২ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লক্ষ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ মৌসুমে ৬৩ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে ২৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। বিসিক এর তথ্যমতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের লবণের চাহিদা রয়েছে ২৬ লক্ষ ১০ হাজার মেট্রিক টন। এই চাহিদাকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন অবিরাম গতিতে চলছে বলে জানান চাষি ও ব্যবসায়ীরা।