পাঁচ শতাংশ বাড়িভাড়া দেয়ার সরকারি আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। তবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনি¤œ ২০০০ টাকা) বাড়িভাড়া ভাতা ঘোষণার পর আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্লাসে ফিরে যাবেন বলে আশা করছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার। তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষকরা যেন ফিরে যান এবং ক্লাস শুরু করেন, এই আবেদন তাদের কাছে রাখছি।
গতকাল রবিবার জাতীয় শহীদ মিনারে অষ্টম দিনের মতো অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। নতুন কর্মসূচি হিসেবে আজ দুপুরে শিক্ষাভবন অভিমুখে ভুখা মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, বাড়িভাড়া ২০ শতাংশ, মেডিকেল ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা ও উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এর আগে সকালে অর্থ বিভাগ জানায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনি¤œ ২ হাজার টাকা) বৃদ্ধি করা হবে। উপসচিব মিতু মরিয়ম স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ৬টি শর্তসাপেক্ষে এই সিদ্ধান্ত আগামী ১ নবেম্বর থেকে কার্যকর হবে। তবে এই আদেশে জারির পরপরই তা প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনি¤œ ২০০০ টাকা) বাড়িভাড়া ভাতা ঘোষণার পর আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্লাসে ফিরে যাবেন বলে আশা করছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার। তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষকরা যেন ফিরে যান এবং ক্লাস শুরু করেন, এই আবেদন তাদের কাছে রাখছি।’ রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এ আশার কথা জানান।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব সময় শিক্ষকদের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে চেষ্টা করেছে, সেই ধারাবাহিকতায় বাড়িভাড়া সংক্রান্ত যে অগ্রগতি, সেটা হয়েছে। আমরা মনে করি, শিক্ষক সমাজের অনেক বেশি পাওয়া দরকার। কিন্তু বর্তমান সীমাবদ্ধতার কারণে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ করেছে। সেটা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করেছি যথেষ্ট। আমি মনে করি, এখন আন্দোলনরত শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবেন। স্কুলগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।’ অনেক জায়গায় শিক্ষা কার্যক্রম চলছে বলেও জানান তিনি।
সি আর আবরার আরও বলেন, ‘যেসব জায়গায় (শিক্ষা কার্যক্রম) ব্যাহত হচ্ছে, আশা করি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আমরা যতটুকু করেছি, শিক্ষক সমাজ সেটাকে গ্রহণ করে যেন ফিরে যান এবং ক্লাস শুরু করেন, এই আবেদন তাদের কাছে রাখছি।’
রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে জানানো হয়, সরকারের বিদ্যমান বাজেটের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনি¤œ ২০০০ টাকা) করা হলো। এ আদেশ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে।তবে শিক্ষকরা ৫ শতাংশ হারে দেওয়া বাড়িভাড়ার আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন। একইসঙ্গে অনশনসহ সব ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বাড়িভাড়া বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবিতে টানা আটদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন। গত ১৭ অক্টোবর দুপুর ২টা থেকে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন শুরু করেন, যা এখন পর্যন্ত প্রায় ৪২ ঘণ্টা চলেছে। অনশনে অংশ নেওয়া কিছু শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
রোববার ভোরে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও তাসনিম জারা শহীদ মিনারে গিয়ে শিক্ষকদের খোঁজ-খবর নেন। তারা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রসঙ্গত, ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, এক হাজার ৫০০ টাকা মেডিক্যাল ভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপনের দাবিতে গত ১২ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাব এবং ১৩ অক্টোবর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন শিক্ষকরা। অন্যদিকে সারাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে কর্মবিরতি।