গোপালগঞ্জে এনসিপির উপর ফ্যাসিস্ট ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ১৭ জুলাই দেশের সকল জেলা ও মহানগরীতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল বুধবার এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বুধবার গোপালগঞ্জ জেলায় এনসিপির পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে পতিত স্বৈরাচারের দোসর নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নৃশংস হামলা চালিয়েছে। তারা এনসিপির নেতৃবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের গাড়িতে হামলা করে এবং তাদের অবস্থানস্থল এসপি’র অফিসেও হামলা চালায়। সন্ত্রাসীদের হামলায় এনসিপির বহু সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ আহত হয়েছেন। সন্ত্রাসীরা অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। তাদের সৃষ্ট সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে ১৭ জুলাই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দেশের সকল জেলা/মহানগরীতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হল। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি এ কর্মসূচি পালনের জন্য সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তি ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
অপর এক বিবৃতিতে গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। বিবৃতিতে তিনি বলেন, বুধবার গোপালগঞ্জ জেলায় এনসিপির পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সন্ত্রাসী দোসররা হামলা চালিয়েছে। এনসিপির নেতৃবৃন্দ স্বাভাবিক নিয়মে প্রশাসনের সঙ্গে পূর্ব থেকেই আলাপ আলোচনা করে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা চেয়েছে। যে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা প্রশাসনের দায়িত্ব। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। এটি উদ্বেগজনক। গোপালগঞ্জ বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো জেলা নয়। এটি বাংলাদেশেরই অংশ। সরকারকে গোপালগঞ্জসহ বাংলাদেশের সর্বত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে খুনি শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন হয়েছে। কিন্তু দেশ এখনো ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়নি। পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন চালিয়েছে। তারা দেশকে আবারো অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নানা অপতৎপরতা চালিয়ে ফায়দা হাসিল করতে চায়। তারই অংশ হিসেবে এনসিপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, ভাঙচুর চালিয়েছে। আওয়ামী দুর্বৃত্তরা ইউএনওসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর করে তাতে অগ্নিসংযোগ করেছে। এই সন্ত্রাসী ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আমি তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি এবং আওয়ামী দুর্বৃত্তদের এই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সরকার ও প্রশাসন দায় এড়াতে পারবে না: জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, গোপালগঞ্জে জুলাই যোদ্ধাদের সমাবেশের মঞ্চ ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে জুলাই যোদ্ধাদের অবরুদ্ধ করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। গোপালগঞ্জের ঘটনায় সরকার ও প্রশাসন দায় এড়াতে পারবে না। প্রশাসনকে এর জবাব দিতে হবে, কিভাবে তাদের উপস্থিতিতে আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসররা এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, গোপালগঞ্জ বাংলাদেশের অংশ এটা মনে রাখতে হবে। গোপালগঞ্জ আধিপাত্যবাদী দিল্লির অংশ নয়। মহান স্বাধীনতার রক্তে অর্জিত বাংলাদেশের ভূখন্ডের একটি অংশ গোপালগঞ্জ। এখানে আধিপাত্যবাদের দোসররা রাজত্ব কায়েম করতে পারে না, পারবে না। বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পল্টন থানা আয়োজিত গণসংযোগ ও প্রচার মিছিল পূর্বক বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইটে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ১৯ জুলাইয়ের জাতীয় সমাবেশের গুরুত্ব অপরিসীম। এই সমাবেশ থেকে জাতীয় নেতৃবৃন্দ আগামীর বাংলাদেশের দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন। তাই এই সমাবেশে সারাদেশ থেকে দলে-দলে যোগ দিতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, বিগত ১৫ বছরে অত্যাচার, অনাচার, জুলুম, নির্যাতন, অর্থনৈতিক নিপীড়ন, খুন, গুম, ক্রসফায়ার, সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক, মানবিক সকল অধিকার লুণ্ঠিত করায় জনগণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সেই প্রতিরোধে আওয়ামী লীগের বিদায় হওয়ায় আমরা একটি নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। দেশের মানুষ সব দলের শানস ব্যবস্থা দেখেছে। এবার মানুষ নতুন পরিবর্তন চায়। সেই পরিবর্তনের ক্ষুধা, দারিদ্র, অনাহার, দুর্নীতি মুক্ত ও বৈষম্যহীন একটি সুবিচারপূর্ণ বাংলাদেশ চায়। যেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জাতিকে উপহার দিতে প্রস্তুত রয়েছে। পরিবর্তনের জন্য নির্বাচনের প্রয়োজন। তবে নির্বাচনের আগে বিগত ১৭ বছরের সকল গণহত্যার বিচার নিশ্চিত, রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, শহীদও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোট প্রদানেরব্যবস্থা এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিরকরণের দাবিতে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দীতে ১৯ জুলাই জাতীয় সমাবেশ। এই ৭ দফা দাবি আদায় হলে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সহজ ও সম্ভব হবে। তাই তিনি ৭ দফা দাবি আদায়ে দেশবাসীকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, জামায়াতে ইসলামীর উত্থাপিত ৭ দফা দাবি আদায়ে দেশবাসীকে ১৯ জুলাইয়ে জাতীয় সমাবেশে যোগদানের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই দাবি জামায়াতে ইসলামীর দলীয় কোন দাবি নয়। এই দাবি দেশের প্রয়োজনে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণমানুষের দাবি। তিনি সমাবেশ থেকে গোপালগঞ্জে জুলাই যোদ্ধাদের পদযাত্রায় আওয়ামী দোসরদের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, জামায়াতে ইসলামী বারবার বলেছে ফ্যাসিবাদের দোসর গণহত্যাকারীদের বিচার করতে হবে। রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হবে। কিন্তু কেউ কেউ বিচার ও সংস্কার এড়িয়ে গিয়ে শুধু নির্বাচন, নির্বাচন করছে। বিচার ও সংস্কার হলেই রাষ্ট্রের শৃংঙ্খলা ফিরিয়ে আসবে। নতুবা হাজার বার নির্বাচন দিলেও রাষ্ট্রের শৃংঙ্খলা ফিরবে না। বরং ফ্যাসিবাদের দোসররা নতুন রূপে আবির্ভূত হবে। ফ্যাসিবাদের পথ বন্ধ করে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে জামায়াতে ইসলামী ৭ দফা দাবি উত্থাপিত করেছে। এই দাবি আদায় হলেই মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে।
সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর, ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, মহানগরীর সহকারী প্রচার সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন সহ মহনগরী ও পল্টন থানা জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে নেতৃবৃন্দ পল্টন এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচার মিছিল করেন।