ফিলিস্তিনে ইসরাইলের চালানো ‘বর্বর গণহত্যা’ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর এ বিক্ষোভ মিছিল হয়। এ সময় বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল থেকে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানানো হয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরাইলের ওপর চাপ প্রয়োগ করে গণহত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ, ‘বাংলাদেশ তিসরি ইনসাফ দল’ এবং ‘জাতীয় ইমাম সমাজ বাংলাদেশ’-এর পক্ষ থেকেও পৃথক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।
এ সময় সমাবেশে ইসলামী যুব আন্দোলনের নেতারা বলেন, ইসরাইল যে গণহত্যা চালাচ্ছে, তা মানবতার চরম লঙ্ঘন। এ অবস্থায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হলে তাদের সব পণ্য বয়কট করতে হবে। দেশের যেসব ব্যবসায়ী ইসরাইলী পণ্য আমদানি করছেন, তাদের অনুরোধ করব-এই ব্যবসা থেকে দ্রুত সরে আসুন। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা সবসময় ফিলিস্তিনের পাশে থাকবে।
তারা আরও বলেন, বিশ্ব সন্ত্রাসী আমেরিকা ও ইসরাইলের মদদে গাজায় যে গণহত্যা চলছে, তা আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতির পরিপন্থি। হামাসের সঙ্গে পারছে না বলে নিরীহ শিশু, নারী, সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। অথচ জাতিসংঘসহ কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না। ওআইসিসহ সব সংস্থাকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ তিসরি ইনসাফ দলের বিক্ষোভ থেকে বলা হয়, গাজায় শিশুসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করে ইসরাইল মানবতাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। ইসরাইলী পণ্য বর্জন করতে হবে এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তুলতে হবে।
জাতীয় ইমাম সমাজ বাংলাদেশের নেতারা বলেন, ইসরাইলের বর্বর হামলা দাজ্জালের আবির্ভাবের ইঙ্গিত দেয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী আজ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। এখন মুসলমান হিসেবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ফরজ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোর আন্দোলনে আমরা পূর্ণ সমর্থন জানাই। বাংলাদেশের মতো অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোও যেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ইসরাইলী পণ্যের তালিকা করে বর্জন নিশ্চিত করতে হবে।
বিক্ষোভ শেষে কয়েকটি মিছিলে বিভিন্ন সংগঠন থেকে ইসরাইলের প্রতি ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ফিলিস্তিনের পাশে থাকার অঙ্গীকার করা হয়। বলা হয় আমাদের উচিত ইসরাইলী সব পণ্য তালিকা করে বয়কট করা।
নির্যাতিত মজলুম মুসলমানদের জাতিগত নিপীড়ন থেকে রক্ষায় ফিলিস্তিন, আরাকান ও কাশ্মীরকে স্বাধীন করার দাবিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভে তারা ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘ফ্রি ফ্রি আরাকান’, ‘ফ্রি ফ্রি কাশ্মীর’, ‘বিশ্ববাসী এক হ ‘, ‘গাজা দখল রুখে দাও’, ‘দুনিয়ার মুসলিম এক হও’, লড়াই করো’, ‘ইসরাইলের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ভারতের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘মিয়ানমারের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের সভাপতিত্বে বিক্ষোভে অংশ নেন যুগ্ম আহবায়ক সাইয়েদ কুতুব, সহকারী সদস্য সচিব আব্দুস সালাম ও গালীব ইহসান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তোফায়েল আহমেদ ও ওয়াসিম আহমদ; বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহবায়ক আবদুল ওয়াহেদ, সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহবায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ ও সহকারী সদস্য সচিব ফারজায়ান আহসান কৃতিত্ব প্রমুখ।
বিক্ষোভে মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের মুসলমানরা গাজায় দখলদার ইসরাইলী বাহিনীর ঘৃণ্য গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। আমরা সবাই দাবি জানাচ্ছি, মজলুম ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় অবিলম্বে গাজায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ইসরাইলী সরকার ও সেনা সদস্যদের বিচার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ফিলিস্তিনের মজলুমদের পাশাপাশি আমাদের এ অঞ্চলের দুই মজলুম মুসলিম জাতি ভারতের দখলকৃত কাশ্মীরের মুসলমানদের ও মিয়ানমারের দখলকৃত আরাকানের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিপীড়নের প্রতিবাদ জানাই। আমরা চাই বাংলাদেশ সরকার আমাদের প্রতিবেশী মুসলিম ভাইদের রক্ষায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে নিয়মিত তৎপরতা চালাবে।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের এ সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক বিশ্ববাসীকে ইসরাইলী মালিকানাধীন ও ইসরাইল সমর্থক সব ব্র্যান্ডের পণ্য বর্জন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইসরাইলী পণ্য কিনলে সেই টাকা দিয়ে বোমা বানিয়ে তারা ফিলিস্তিনের মুসলমানদের হত্যা করে। তাই ইসরাইলী পণ্য বর্জন চালিয়ে যেতে হবে।