অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় পরিশোধ না করে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক খান মো. মীজানুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এভারকেয়ার হাসপাতালের পরিচালক মাহাবুবুল আনামের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছিলেন বলে মীজানুলকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশে বলা হয়েছে।

কমিশনের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমন কমিটির ৪ সেপ্টেম্বরের সভায় এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উপস্থাপনের পর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে গতকাল সোমবার দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়।

এতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মীজানুলের বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর কমিশনের নির্দেশে গোপন অনুসন্ধান চালানো হয়। এতে দেখা যায় তিনি ১৭ অগাস্ট ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। তিন দিন পর চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেন। কিন্তু চিকিৎসা বাবদ বকেয়া দুই লাখ চার হাজার ১৩২ টাকা নিজে পরিশোধ না করে, কমিশনের অনুসন্ধান-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মাহাবুবুল আনামের দেওয়া গ্যারান্টির ভিত্তিতে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেন। এরপর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ অনুসারে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়।

এতে বলা হয়, এ আদেশ জারির তারিখ থেকেই কার্যকর হবে। বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী খোরাকি ভাতা পাবেন।

এর আগে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের গত ২ সেপ্টেম্বর মীজানুল ইসলামের চিকিৎসা খরচ-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ফেইসুবকে পোস্ট দেন। এতে তিনি হাসপাতালের বিল পরিশোধের নথিপত্র জুড়ে দিয়ে লেখেন, প্রশ্ন হলো দুদকের মতো একটি সংস্থার পরিচালক, যার অধীনস্থ বিভাগ অনুসন্ধান করছে এমন এক ব্যক্তির কাছ থেকে এধরনের সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে কি তা কোনোভাবে নৈতিক হতে পারে? আর যদি তা না হয়, তাহলে দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাঁরাই যদি দুর্নীতির সাথে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দোসর হয়ে যায়, তখন কেন এদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না?

সায়েরের ওই পোস্টের পর রোববার ওই পরিচালককে বদলি করে দুদকের এনআইএস এবং উন্নয়ন সহযোগী ও সমন্বয় (দেশীয়) বিভাগের পরিচালক হিসেবে পাঠানো হয়। একদিনের মধ্যেই তাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ এল।

দেশের তিন বিমানবন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২৭ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে আলাদা চারটি মামলা করে দুদক। এর মধ্যে দুটি মামলার আসামীর তালিকায় আছেন মাহাবুবুল আনাম, যিনি এভারকেয়ার হাসপাতালের পরিচালক। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও একজন পরিচালক।

দুদক এর মধ্যে একটি মামলা করে শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (থার্ড টার্মিনাল) প্রকল্পে ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে। আরেকটি মামলা করা হয় একই বিমানবন্দরের সিএনএস-এটিএম সিস্টেম ও রাডার স্থাপন প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে।