গতকাল রোববার মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে, আজ সোমবার মহাসপ্তমী আগামীকাল মঙ্গলবার মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা এবং বুধবার মহানবমী শেষে বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসব।

দুর্গোৎসব চলাকালে পূজার প্রতিদিনই অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগআরতির আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া দেশজুড়ে দুর্গোৎসব চলাকালে ম-পে ম-পে আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, নাটক, নৃত্যনাট্যসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হবে।

ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনি, ভক্তকুলের আবহনের মন্ত্রোচ্চারণে দেবী দুর্গার স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আগমন ঘটেছে। পূজার মন্ত্রোচ্চারণ, মন্দিরে মন্দিরে ধূপ-ধুনোয় ভক্তদের নৃত্য আরতি, আর ঢাক-ঢোল, কাঁসর-মন্দিরার পাশাপাশি মাইকের আওয়াজ আর বর্ণাঢ্য আলোকচ্ছটায় সারাদেশের পূজাম-পগুলো উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে।

দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে দুর্গতিনাশিনীর আগমন আনন্দে বিহ্বল বিশ্বের কোটি হিন্দু সম্প্রদায়। প্রতিমা তৈরি শেষ। বাহারি রং চড়েছে প্রতিমার গায়। নিপুণ শিল্পী তার তুলির আলতো ছোঁয়ায় জাগিয়ে তুলেছেন মা দুর্গাকে। জেগে উঠবেন সরস্বতী। গণেশের গায় উঠেছে নকশীদার কুচির দুধসাদা ধুতি। মা লক্ষ্মীর হাসি ঝরে পড়ছে ম-পগুলোতে। আজ ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে খুলে যাবে মা দুর্গার সিগ্ধ শান্ত চোখ। জেগে উঠবেন দশভুজা। আশীর্বাদ দেবেন মনোবাঞ্ছা নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পূজারীকে।

পূজাকে আনন্দমুখর মন্ডবগুলো। সারাদেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল কাঁসর এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ম-প। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার সারাদেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি ম-প ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর সারাদেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি দুর্গাপূজা হয়েছিল। সেই হিসেবে এবার ১ হাজার ৮৯৪টি দুর্গাপূজা বেশি হচ্ছে।

পূরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে লঙ্কা যাত্রার আগে শ্রী রামচন্দ্র দেবীর পূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবস্যা তিথিতে, যা শারদীয় দুর্গোৎসব নামে পরিচিত। দেবীর শরৎকালের পূজাকে এ জন্যই হিন্দুমতে অকাল বোধনও বলা হয়।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজাম-পের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি ম-পে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হবে।

র‌্যাবের মিডিয়া শাখা থেকে জানানো হয়েছে, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকেই দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও নাশকতা প্রতিরোধে রাজধানীতে র‌্যাবের ৯৪টি টহল দল এবং সারাদেশে ২৮১টি টহল দল কাজ করছে। অন্যদিকে, বিজিবির সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সীমান্তবর্তী এলাকা এবং রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের পূজাম-পের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৪৩০ প্লাটুন সদস্য। সীমান্তবর্তী এলাকাসহ সারাদেশে ২ হাজার ৮৫৭টি পূজাম-পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবির ২৪টি বেইজ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।

রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ম-পে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছা রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।