গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গাড়িবহরে ও সমাবেশে হামলার প্রতিবাদে উত্তাল সারাদেশ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে নানা স্থানে ব্লকেডসহ নানা কর্মসূচী পালিত হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেছেন। প্রতিবাদে আজ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করতে বুধবার গোপালগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করেন এনসিপির নেতাকর্মীরা। সমাবেশ শেষ করে ফেরার পথে কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহরে হামলা চালায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে শহরের পৌর পার্কে সমাবেশ মঞ্চে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেখানে চেয়ার ভাঙচুর করে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ কর্মসূচী পালন করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। তারা সেখানে বিভিন্ন স্লোগানে হামলাকারী বুধবার বিকেলে এনসিপির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে অবরোধ শুরু করেন। এছাড়া রাতে বাংলামোটরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মশাল মিছিল বের করে।

হামলার ঘটনায় দলটির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি দেশব্যাপী ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছে। এদিকে হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্নসংগঠনের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। তাৎক্ষনিকভাবে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। এছাড়াও বিবৃতি দিয়ে শাস্তি দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

হামলাকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি চরমোনাই পীরের

এক বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, গোপালগঞ্জ বাংলাদেশের সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধীনে থাকা একটি জেলা। সারাদেশের মানুষ যখন একযোগে স্বৈরাচারী হাসিনাকে উৎখাত করেছে তখন গোপালগঞ্জে হাজার হাজার খুন, গুম ও হাজার কোটি টাকা পাচারকারী শক্তির পক্ষে কেউ প্রকাশ্য অবস্থান নিয়ে দেশপ্রেমিক ছাত্র নেতৃত্বের ওপরে হামলা করবে এবং তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখবে তা মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুততার সঙ্গে অবরুদ্ধ নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং তাদের উদ্ধার করতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতাদের রাজনৈতিক সংগঠন এনসিপি জুলাই জুড়ে দেশব্যাপী পদযাত্রা করছে। সর্বত্র তারা জনগণের উষ্ণ অভিনন্দন ও ভালোবাসা পাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে তারা গোপালগঞ্জে যান। তাদের সঙ্গে আজকে গোপালগঞ্জে যা হয়েছে তা লজ্জাজনক। একই সঙ্গে প্রশাসনের ব্যর্থতাও বটে। অভ্যুত্থানের নেতারা গোপালগঞ্জে আসলে সেখানে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসররা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে এটা তাদের অনুধাবন করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আজকের ঘটনায় পরিষ্কার যে, প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। গোপালগঞ্জের পুলিস সুপারসহ দায়িত্বে নিয়োজিতদের ব্যাপারে তদন্ত করতে হবে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন সহিংসতার সুযোগ করে দিলো কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।

চরমোনাই পীর বলেন, কোনো কোনো মিডিয়া হামলাকারী ফ্যাসিবাদের দোসরদের ‘গ্রামবাসী, এলাকাবাসী’ অভিহিত করেছে। এর পেছনের কারণ সুস্পষ্ট। তারা বিশ্বকে বোঝাতে চায় যে, হাসিনার উৎখাতের আন্দোলন কোনো গণঅভ্যুত্থান ছিল না। গ্রামবাসী এখনো হাসিনার জন্য রাস্তায় নামে। যার পুরোটা মিথ্যা বয়ান। যারা এনসিপির ওপরে হামলা করেছে তারা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের আওয়ামী লীগের পান্ডা হিসেবেই প্রচার করতে হবে। যারা যারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ফ্যাসিবাদের পক্ষ হয়ে এখনো কেউ জুলাই অভ্যুত্থানের নেতাদের ওপরে হামলা করবে তা মেনে নেওয়া যায় না।

চরমোনাইয়ের পীর সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির এ সময়েও স্বৈরাচারের দোসররা যে দুঃসাহস দেখিয়েছে তা সরকারের সামগ্রিক ব্যর্থতার বড় একটি দৃষ্টান্ত। পতিত ফ্যাসিবাদের বিচার এবং এর সঙ্গে জড়িতদের বিচারের ধীরগতির কারণেই তারা আজকে এ সাহস করেছে। তাই বলবো, সারা দেশে স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনুন। এ ধরনের দুঃসাহস জাতি আর দেখতে চায় না।

গোপালগঞ্জে এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে পতিত স্বৈরাচারের দোসর নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রম। সেই সঙ্গে হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

হেফাজতে ইসলাম

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের দফায়-দফায় বর্বর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান।

গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, এই ন্যাক্কারজনক হামলা গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন। এদেশে ফ্যাসিবাদের শেকড় উপড়ে ফেলাই এখন সময়ের দাবি।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পলায়ন করতে বাধ্য হয়। কিন্তু আজ সেই পতিত স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট আওয়ামী ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এনসিপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে দফায় দফায় হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, সরকারি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আহত করার ঘটনা প্রমাণ করে যে তারা আবারও দেশকে অস্থিতিশীল করে তৃতীয়পক্ষের ইশারায় দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ত ও ব্যর্থ ভূমিকা গভীর উদ্বেগজনক এবং প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের দায়িত্ব ছিল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সুরক্ষিত রাখাÑকিন্তু তারা তা করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

নেতৃদ্বয় আরও বলেন, জাতির ভবিষ্যৎ রক্ষায় এখন প্রয়োজন দুর্বার গণপ্রতিরোধ। যারা দেশের মাটি রক্তাক্ত করছে, মানুষের মৌলিক অধিকারকে গলা টিপে হত্যা করছেÑতাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া বিকল্প নেই।

তারা অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের সন্ত্রাস করার সাহস না পায়। একইসঙ্গে গোপালগঞ্জে আহত এনসিপির নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

তারা আরও বলেন, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও শান্তি রক্ষায় দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান রোধে এখনই তাদের মূলোৎপাটন প্রয়োজন।

জাগপা

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেছেন, গোপালগঞ্জে দফায় দফায় সন্ত্রাসী নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ পুলিশ, ইউএনও, এনসিপির নেতাকর্মীদের উপরে হামলা আবারও প্রমাণ করেছে, আওয়ামী লীগের অপরাজনীতি ছিল দেশের মানুষের বিরুদ্ধে। শহীদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাত বার্ষিকীতে আমাদের শপথ গ্রহণ করতে হবে। খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের গণহত্যার বিচার, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার এবং হিন্দুস্তানের আধিপত্যবাদ রুখে দেওয়ার আগে পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলছে চলবে।

খেলাফত মজলিস

গোপালগঞ্জে গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির ’মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি ও সমাবেশে ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা। উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে খেলাফত মজলিস।

গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীদের হামলা ও ভাঙচুর বর্বরতার শামিল। উক্ত হামলায় এনসিপির নেতৃবৃন্দ সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আহত হন। পুলিশের গাড়ী পুড়িয়ে ফেলা হয়, গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ করা হয়। আমরা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।

গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির সুযোগে আবারো সংগঠিত হতে শুরু করেছে। এদেরকে ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। প্রশাসনকে এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। হামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

এই ফ্যাসিবাদী অপশক্তি যাতে দেশের জানমালের আর ক্ষতি করতে না পারে সরকারকে সতর্ক হতে হবে। খেলাফত মজলিস সহ দেশপ্রেমিক জনতা এনসিপির পাশে আছে, ফ্যাসিস্ট খুনীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আছে।

গণতন্ত্র মঞ্চ

গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতৃবৃন্দের উপর নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছেন গনতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এর সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন আজ গণমাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে গোপালগঞ্জে এনসিপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

নেতৃবৃন্দ বলেন বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর আবার গোপালগঞ্জে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গত বছর জুলাই- আগষ্টে হাজারো ছাত্র-জনতা জীবন দিলো, আহত হলো, পঙ্গুত্ব বরণ করলো, সেই জুলাই মাসেই আবার সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ জুলাই আগষ্ট গণ- অভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতৃবৃন্দের উপর এই হামলা সংগঠিত করলো। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।

নেতৃবৃন্দ বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, গত দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে নানা ভাবে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার হুমকি প্রদান করে আসছিলো চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। তারপরও কেন আগাম নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না?

অনতিবিলম্বে হামলাকারী চিহ্নিত( ভিডিও ফুটেজ দেখে) এই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করার দাবী জানান। পাশাপাশি গত জুলাই আগষ্ট ছাত্র শ্রমিক জনতার গণ-অভ্যুত্থানে হাজার হাজার ছাত্র শ্রমিক জনতা হত্যাকরে যারা গণহত্যা সংগঠিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানান।

একই সাথে পলায়ণকারী ফ্যাসিবাদ কোন অবস্থায়ই যাতে আবার ফিরে আসতে না পারেন তার জন্য দেশবাসীকে সোচ্চার থাকারও আহ্বান জানান।

ইসলামী ঐক্যজোট

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোট (আইওজে)-এর মহাসচিব মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী।

গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জ জেলায় এনসিপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসররাই হামলা চালিয়েছে। এই হামলা গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর সরাসরি আঘাত। আমরা এই ন্যক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অতিদ্রুত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টামূলক শাস্তির দাবি জানাই।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীন দেশের প্রতিটি ইঞ্চিতে ‘আমাদের অধিকার’, তাহলে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাধা কেন? এই ঘটনার দায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এড়াতে পারে না। হামলাস্থলে তাদের কার্যকর তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

বিবৃতিতে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের দমন-পীড়ন করে এনসিপি বা ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিতে দমিয়ে রাখা যাবে না। সরকারকে গোপালগঞ্জসহ বাংলাদেশের সর্বত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

লেবার পার্টি

গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্ব ঘোষিত শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশে সন্ত্রাসীরা যেভাবে হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করেছে, যা জনগণের ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ওপর নগ্ন আক্রমণ মন্তব্য করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম।

গতকাল বুধবার লেবার পার্টির দফতর সম্পাদক মোঃ মিরাজ খান সাক্ষরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাইÑ আওয়ামী ফ্যাসিস্ট হাসিনার স্বৈরশাসনের পতন হয়েছে। গনহত্যায় জড়িত হাসিনা রেজিম ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েছে। দেশের জনগণ আর কখনো সেই ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনকে ফিরে আসতে দেবে না। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, গোপালগঞ্জের হামলায় জড়িত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করুন এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন।

ছাত্র শিবির

গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট চক্রের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এ সংক্রান্ত বিবৃতি প্রদান করেন।

এক যৌথ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরও গণহত্যাকারী দলের সন্ত্রাসীরা দেশে নৈরাজ্য ও সহিংসতার মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর পরিকল্পিত হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগÑকোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। অত্যন্ত উদ্বেগজনক হলো, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। এ থেকেই স্পষ্ট হয়, এখনো প্রশাসনের একটি অংশ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর প্রতি আনুগত্যশীল হয়ে কাজ করছে। আমরা এই বর্বর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।”

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, “বিগত সময়ের গণহত্যা, দমন-পীড়ন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিচার না হওয়ায় দুষ্কৃতিকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আর কখনোই ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান দেখতে চায় না। আইনের শাসন ও জুলাই শহীদদের কাক্সিক্ষত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল সন্ত্রাসীদের রুখে দিতে হবে।”

নেতৃবৃন্দ গোপালগঞ্জের ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুষ্কৃতকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তাঁরা আহত পুলিশ সদস্যদের আশু সুস্থতা কামনা করেন। সেই সঙ্গে ফ্যাসিস্ট আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে তাঁদের অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং নতুন প্রশাসন নিয়োগের দাবি জানান।