# এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৬৪৬ জন অপরাধীকে গ্রেফতার
# ৯ হাজার ৬৯২টি অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৪ রাউন্ড গুলী উদ্ধার
সেনাবাহিনীর সদস্যরা অনেকেই বিভিন্ন সংস্থায় ডেপুটেশনে থাকে। তাদের সেনাবাহিনী সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে না। এদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ উঠেছে। সেটার তদন্ত চলছে। তদন্তে যদি গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের (স্টাফ কর্নেল) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান। এসময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ভুক্তভোগী পরিবার যদি নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে সহযোগিতা চান তাদের যথাযথভাবে সহযোগিতা করা হবে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে সেনাবাহিনী এখনো কোনো নির্দেশনা পায়নি। পেলে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী। কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত সম্পর্কে করা আরেক প্রশ্নের জবাবে সেনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত ৪০০ জনের বেশি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। সেনাবাহিনীর পক্ষে অলিতে-গলিতে থাকা সম্ভব না। তবে তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী দ্রুত গিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও অস্ত্র - গোলাবারুদ উদ্ধার অভিযানে গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনী ২৬টি অবৈধ অস্ত্র ও ১০০ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং আগস্ট হতে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৯,৬৯২টি অবৈধ অস্ত্র ও ২,৮৬,৮৫৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত ৫৬২ জনকে এবং এ পর্যন্ত সর্বমোট ১৫,৬৪৬ জনকে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করেছে। যাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, ডাকাতসহ অন্যান্য অপরাধী উল্লেখযোগ্য। সেনাবাহিনী গত ২১ জুন খুলনা জেলার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী বুলবুলকে তার চারজন সহযোগীসহ গ্রেফতার করে। উক্ত অভিযানে ১ টি অত্যাধুনিক বিদেশী পিস্তল, ১ টি দেশীয় পিস্তল, ১ টি শর্টগান এবং ২ রাউন্ড এ্যামোনিশন উদ্ধার করা হয়। উল্লেখ্য যে, সন্ত্রাসী বুলবুল ‘বুলবুল গ্রুপ” নামে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতা। গত ২৯-৩০ জুন মীর হাজিরবাগে আল আমীন সন্ত্রাসী গ্রুপের ২ জন সক্রিয় সদস্য আনিছ ও হাসান’কে গ্রেফতার করা হয়। উক্ত অভিযানে ৩ টি বিদেশী পিস্তল, ১ টি বিদেশী রিভলভার, ৩ টি ম্যাগাজিন ও ১১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
মাদক এর বিরুদ্ধে অভিযানে গত দুই সপ্তাহে ৪৫ জন মাদক ব্যবসায়ী এবং আগস্ট হতে এ পর্যন্ত মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট ৫,৫২১ জন’কে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করেছে। গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনী মাদকের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে সফল অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়াও গত ১৭ জুন টঙ্গি মাজার বস্তি এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মাদক ব্যবসা ও ছিনতাই এর সাথে জড়িত ২৪ জন ও গত ২৬ জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অভিযান পরিচালনা করে ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এরুপ অভিযান চলমান থাকবে। চোরাচালান প্রতিরোধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভিযানের অংশ হিসেবে গত ১৭ জুন সুনামগঞ্জ জেলায় বড় পরিমানে গলদা চিংড়ি উদ্ধার করা হয় এবং ২ জন চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও গত ১৯, ২১ এবং ২৪ জুন সিলেট এর বিভিন্ন স্থানে চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ প্রসাধন সামগ্রী এবং শাড়ী জব্দ করা হয় যার আনুমানিক বাজার মূল্য চার কোটি টাকা। ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনার অংশ হিসেবে গত ২৯ জুন ফরিদপুর জেলায় ভেজাল শিশু খাদ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত ১টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা জরিমানাসহ কারখানাটি সাময়িক বন্ধ এবং মালিককে রহ গ্রেফতার করা হয়।
গত ২২ মে স্থানীয় মাছের ঘেরের আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে অভয়নগরে কিছু সংখ্যক বাড়িতে স্থানীয়রা আগুন ধরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিজস্ব তহবিল হতে বাড়িসমূহ পুনঃ নির্মাণ করে দেয়। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। গত ২২ জুন উত্তরায় নিজ বাসভবনে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব কে এম নুরুল হুদা মব ভায়োলেন্সের স্বীকার হন। এ প্রেক্ষিতেই ২২ জুন তারিখের ঘটনার পর সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মব ভায়োলেন্সের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় র্যাব ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় সেনাবাহিনী গত ২৩ জুন তারিখে উত্তরা থেকে উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত মোঃ হানিফকে গ্রেফতার করে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে কিন্তু ২৫ জুন তারিখে উক্ত ঘটনার মূলহোতা মোজাম্মেল হক ঢালী আদালত হতে অগ্রীম জামিন লাভ করে। গত ২৬ জুন কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে সংঘটিত নারী নির্যাতন ও বর্বরতার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অবিলম্বে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। মূল আসামী ফজর আলী ও আরও চারজন ভিডিও ধারণকারীদের’কে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ভূক্তভোগী পরিবারের সুরক্ষা ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় কার্যক্রমে পূর্ণ সহযোগিতা করছে।
জুলাই অভ্যুত্থ্যানে আহতদের সুচিকিৎসা প্রদানে সেনাবাহিনী অদ্যাবধি ৪,৭৯০ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, যার মধ্যে সিএমএইচ ঢাকাতে ২২ জন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যগণ গত ২৭ জুন তারিখে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রথযাত্রা উৎসবে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছে। সেনাবাহিনী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ বিদেশী কুটনৈতিক ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনাকে অনুসরণ করে সেনাসদস্যরা আইন-শৃংখলা রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইন- শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। ভবিষ্যতে দিনগুলোতে জানমালের ক্ষতিসাধন, মব ভায়োলেন্স এবং জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করতে পারে এমন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা ও দূর্ভোগ লাঘবে সেনাবাহিনী সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একতাবদ্ধ হয়ে সর্বদা দেশের জনসাধারণের পাশে থেকে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রন ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে বদ্ধপরিকর।