খারাপ স্মৃতি না ভেবে ভালো স্মৃতি ভাবার পরামর্শ
রাজধানীর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ট্র্যাজেডিতে দগ্ধদের মধ্যে আরও একজনকে ছাড়পত্র দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তার নাম ফারজানা ইয়াসমিন (৪৫)। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা তিনি। এই ঘটনায় এখনো আইসিইউতে ভর্তি দুজন। গতকাল বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন।
পরিচালক বলেন, মঙ্গলবার আইসিইউতে ছিল তিনজন। তবে তাদের মধ্যে একজনের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় আজ তাকে এইচডিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখন মোট ৩২ জন রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে ২৭ জনই শিশু। যাদের মধ্যে তিনজন ক্রিটিক্যাল ক্যাটাগরিতে আর তাদের চেয়ে কম গুরুতর সাতজন রয়েছে সিভিয়ার ক্যাটাগরিতে। অন্যরা অন্যান্য ওয়ার্ড ও কেবিনে ভর্তি রয়েছে। গত তিন দিনে নতুন করে কোনো মৃত্যু নেই।
তিনি আরও বলেন, ৩২ জনের মধ্যে ১৪ জনের শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। অন্যরা স্ট্যাবল রয়েছে। ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত এসব রোগীকে একেকজনকে একাধিকবারসহ সব মিলিয়ে ১৫৮টি ছোট-বড় অপারেশন করা হয়েছে। পরিচালক জানান, আজকের পর থেকে বার্ন ইনস্টিটিউটে আনুষ্ঠানিক ব্রিফ আর হবে না। প্রেস রিলিজের মাধ্যমে প্রতিদিনের আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ট্রমা (মানসিক আঘাত) কাটিয়ে উঠতে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাউন্সেলিং করাচ্ছে। অন্যদিকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধপত্র। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা কাউন্সেলিং আর চিকিৎসাসেবা নিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ক্যাম্পাসে যাচ্ছেন। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের পাশাপাশি কিছু উৎসুক লোকজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভেতরে যাচ্ছেন। উৎসুক লোকজন মূলত বিমান বিধ্বস্তের জায়গা দেখছেন। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের কাছাকাছি এলাকার শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসটিতে আসছেন। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের আজ ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। দুপুর ১২টার দিকে কথা হয় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোমিনুল ইসলামের সঙ্গে। সে কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসে আসার কারণ জানতে চাইলে মোমিনুল বলে, আজকে শিক্ষকেরা আমাদের ডেকেছেন। জানতে চেয়েছেন, বিমান বিধ্বস্তের পর আমাদের কারও কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না? বিশেষভাবে মানসিক কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না? হয়ে থাকলে কাউন্সেলিং নিতে বলেছেন। মোমিনুল কাউন্সেলিং নিয়েছে জানিয়ে বলে, ‘বিমান বিধ্বস্তের সময় আমি শ্রেণিকক্ষে ছিলাম। বিস্ফোরণের সময় বাইরে বেরিয়ে চোখের সামনে অনেককে আগুনে পুড়ে যেতে দেখেছি। যারা আমাদের জুনিয়র, ছোট ভাইবোন। তখন তাদের বাঁচাতে আমি পারিনি। তাদের আগুনে পুড়তে দেখা, তাদের জন্য কিছু করতে না পারায় আমার এখনো খারাপ লাগে, কষ্ট পাই। ১৫ মিনিটের মতো কাউন্সেলিং পেয়েছে বলে জানায় মোমিনুল। কাউন্সেলিংয়ে পাওয়া পরামর্শ সম্পর্কে সে বলেন, ‘আমাকে বলেছে, যেসব কাজ করতে ভালো লাগে, আমি যেন সেগুলো আরও বেশি বেশি করি। আরও বলেছে, খারাপ স্মৃতি না ভেবে ভালো ভালো স্মৃতিগুলো নিয়ে যেন ভাবি। আর আমার বয়সে আমি সেদিন যেটুকু করতে পেরেছি, সেটা যথেষ্ট বলে জানিয়েছে।