নিজের ৬১তম জন্মদিনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও একমাত্র কন্যা জাইমা রহমানের সঙ্গে একটি ছবি ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে পোস্ট করেছেন। দীর্ঘ পোস্টে তিনি নারীদের সুরক্ষা ও অগ্রগতির লক্ষ্যে নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান ফেসবুকে এই পোস্ট করেন। তিনি নারীদের নিয়ে পাঁচটি প্রতিশ্রুতি ও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।
ফেসবুক পোস্টে তারেক রহমান লিখেছেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, প্রযুক্তির বিশ্ব এখন আমাদের জীবনের প্রতিটি অংশকে প্রভাবিত করছে। আমাদের দৈনন্দিন রুটিন থেকে শুরু করে বৈশ্বিক মঞ্চে রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক সবই প্রযুক্তির গতির সঙ্গে বদলে যাচ্ছে। প্রযুক্তি যে গতিতে বিশ্বকে এবং বাংলাদেশকে পাল্টে দিয়েছে, এটি আমরা কেউই অস্বীকার করতে পারি না।
তারেক রহমান বলেন, কখনো কখনো আমার স্ত্রী আর আমি ভাবিÑআমরা যে প্রজন্মে বড় হয়েছি, তার তুলনায় আমাদের কন্যার জন্য আজকের পৃথিবী কতটা ভিন্ন। বেশিরভাগ অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকের মতো আমাদের মনেও একইসঙ্গে আশা ও উদ্বেগ দুটোই কাজ করে। কারণ আজ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সুযোগ যেমন বেশিÑএকই সঙ্গে হুমকিও তত বেড়েছে। তারেক রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশ যদি সামনে এগিয়ে যেতে চায় তাহলে আমাদের মেয়েরা, মায়েরা, বোনেরা, সহকর্মীরা কেউই যেন ভয়ের মধ্যে আর বাঁচতে না হয়। প্রতিদিনই অসংখ্য নারী হয়রানি, হুমকি, বুলিং এবং সহিংসতার শিকার হন।শুধু কথা বলার জন্য, কাজ করার জন্য, পড়াশোনা করার জন্য বা মুক্তভাবে বাঁচার জন্য। নারী নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিএনপি যে পাঁচটি জরুরি অগ্রাধিকার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে, তা তুলে ধরেন তারেক রহমান।
১. ন্যাশনাল অনলাইন সেফটি সিস্টেম- যেখানে নারীরা দ্রুত ও সহজে সাইবার বুলিং, হুমকি, প্রতারণা, ভুয়া পরিচয় ব্যবহার বা ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের অভিযোগ জানাতে পারবেন। এর জন্য ২৪/৭ হটলাইন, অনলাইন পোর্টাল ও প্রশিক্ষিত রেসপন্ডার রাখা হবে। বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলা ভাষার কনটেন্ট দ্রুত মডারেশনের ব্যবস্থা করা হবে।
২. পাবলিক লাইফে নারীর সুরক্ষা প্রোটোকল-সাংবাদিক, কর্মী, শিক্ষার্থী বা কমিউনিটি নেত্রী হিসেবে যারা আক্রমণ বা হয়রানির মুখোমুখি হনÑতাদের জন্য জাতীয় নির্দেশিকা, দ্রুত আইনি ও ডিজিটাল সহায়তা এবং গোপনীয় রিপোর্টিং চ্যানেল ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। কোনো নারীকে জনজীবনে অংশগ্রহণের কারণে নীরব হয়ে থাকতে হবে, এটা মেনে নেয়া যাবে না।
৩. ডিজিটাল সেফটি শিক্ষা-স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অরিয়েন্টেশনের সময় বাস্তবসম্মত ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষিত শিক্ষকরা ‘সেফটি ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে কাজ করবেন এবং বার্ষিক সচেতনতা কার্যক্রম তরুণদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ডিজিটাল জগতে চলতে সাহায্য করবে।
৪. সহিংসতা ও হয়রানির বিরুদ্ধে শক্তিশালী কমিউনিটি পর্যায়ের প্রতিক্রিয়া-কমিউনিটি হেল্প ডেস্ক, নিরাপদ যাতায়াত, উন্নত রাস্তার আলো, এবং ট্রমা-সেনসিটিভ রেসপন্ডার নিয়োগের মাধ্যমে নারীদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও নিরাপদ ও সুনিশ্চিত করা হবে।
৫. নারীর নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণে জাতীয় উদ্যোগ-লিডারশিপ ট্রেনিং, মেন্টরিং নেটওয়ার্ক এবং স্কুল-অফিস-কারখানায় শিশু যতœ সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে নারীরা নেতৃত্ব দিতে, সাফল্য অর্জন করতে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে অবদান রাখতে পারবেন। ‘নারী উন্নত হলে, জাতি উন্নত হয়।
তারেক রহমান বলেন, আমাদের রাজনীতি, ধর্ম, জাতিসত্তা বা লিঙ্গ যাই হোক, একটি সত্য আমাদের এক করতে পারে: নারীরা যত বেশি নিরাপদ, সমর্থিত ও ক্ষমতায়িত, বাংলাদেশ ততই অপ্রতিরোধ্য।