টানা ৪৩ দিন পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে এসেছেন সংস্থাটির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া। নগর ভবনে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আজ থেকে সব বিভাগের কার্যক্রম শুরু হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে শাহজাহান মিয়া নগর ভবনে আসেন। নগর ভবনে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আর পেছনের দিকে তাকাতে চাই না। আমরা সামনে এগিয়ে যাব। সামনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনেকগুলো কাজ করব। এর মধ্যে বাজেট প্রণয়নের কাজটি দ্রুত শেষ করা হবে।’
এর আগে প্রশাসকের কার্যালয়ের তালা খুলে দেওয়া হয়। এরপর নগর ভবনের নিজ কার্যালয়ে যোগ দেন ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের শপথ পড়ানোর দাবিতে ১৪ মে আন্দোলনে নামেন তার সমর্থকরা। দাবি আদায়ে সেদিনই তারা নগর ভবনে বিভিন্ন দপ্তরের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার পর নগর ভবনে প্রশাসকের কার্যালয়ের তালা খুলে দেন আন্দোলনকারীরা।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ আবদুল কাইয়ুম বলেন, আজ আমরা এবং বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রশাসকের অফিসের তালা খুলে দিয়েছি। তিনি আজ থেকে এখানে অফিস করছেন।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত ১৪ মে থেকে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। ইশরাকের সমর্থকেরা নগর ভবনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছিলেন। ফলে গত ১৪ মে থেকে সংস্থাটি প্রশাসক নগর ভবনে আসতে পারেননি।
গত রোববার ইশরাক সমর্থকেরা তাদের চলমান আন্দোলন কিছতা সীমিত করে দৈনন্দিন সেবা চালুর ঘোষণা দেন। সেদিন তারা বলেছিলেন, নগর ভবনে দৈনন্দিন সেবা চালু হলেও প্রশাসক আসতে পারবেন না। সংস্থাটির প্রকৌশল বিভাগ বন্ধ থাকবে। তবে সংস্থাটির প্রশাসক শাহজাহান মিয়া গতকাল নগর ভবনে এলে তাকে অভ্যর্থনা জানান ইশরাকের পক্ষে আন্দোলনে থাকা সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা। সংস্থাটির প্রকৌশল বিভাগের অনেক কর্মকর্তাকেও গতকাল নগর ভবনে আসতে দেখা গেছে।
ইশরাকের পক্ষে আন্দোলনে থাকা সিটি করপোরেশনের বিএনপিপন্থী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা আরিফ চৌধুরী বলেন, উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে তারা প্রশাসককে এখন থেকে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। কিন্তু শপথ না পড়ানোয় ইশরাকের মেয়রের চেয়ারে বসা হয়নি। আন্দোলন করেও লাভ হয়নি। শেষমেশ ৩ জুন তিনি ঘোষণা দেন, সরকার শপথ না পড়ালে নিজেই শপথ নিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসবেন। ইদুল আজহা সামনে রেখে সেদিন নগর ভবন ঘেরাও ও অবস্থান কর্মসূচি শিথিল করার ঘোষণাও দেন ইশরাক। কুরবানির ঈদের ছুটির পর ‘নিজেই নিজের শপথ’ না নিলেও নগর ভবনে কর্মচারীদের নিয়ে সভা করেন ইশরাক। সভার ব্যানারে তার নামের আগে লেখা ছিল ‘মাননীয় মেয়র’। এরপর গত ১৮ জুন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, মেয়াদ ‘শেষ হয়ে যাওয়ায়’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের আর শপথ নেওয়ার সুযোগ নেই।