ভারতের বীরভূমের অন্তঃসত্ত্বা নারী সোনালি বিবি ও তার পরিবারকে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করেছিল বিএসএফ। বাংলাদেশে ঢোকার পর ২৯ বছরের সেই নারী, তার স্বামী এবং তাদের আট বছরের পুত্রসন্তানকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবি ও তার পরিবারকে কেন্দ্র করে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে।

এদিকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ‘ভাষাগত বিদ্বেষ’ুুুুুুুুুুুুুুুুুু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষীদের বিরুদ্ধে যাদের অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী বলে সন্দেহ করার বিষয়ে তিনি এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি মজা করে বলেন, আমাকেও ঢাকায় ফেরত পাঠানো হতে পারে, সেখানে আমার পরিবারের শিকড় রয়েছে। শান্তিনিকেতনে জন্মগ্রহণকারী সেন বলেন, আমার পৈতৃক নিবাস ঢাকায় হওয়ায় আমাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা রয়ে গেছে। এতে আমার খুব বেশি আপত্তি নেই। এছাড়াও অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেপ্তারকৃত ৬ ভারতীয় নাগরিককে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত। তাদের মধ্যে একজন চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীও আছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ এন এম ওয়াসিম ফিরোজ। গত শুক্রবার (২২ আগস্ট) বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আমলী আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। কারাগারে প্রেরণকৃতরা হলেন- ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার মুরারই থানার বাসিন্দা মো. মন্নু শেখের ছেলে মো. দানেশ (২৮), মো. ভোদু শেখের মেয়ে সোনালী বেগম (২৬), সেরাজুল শেখের মেয়ে সুইটি বিবি (৩৩), আজিজুল দেওয়ানের ছেলে কুরবান দেওয়ান (১৬), ইমাম দেওয়ান (৬) এবং মো. দানেশের ছেলে মো. সাব্বির (৮)। তাদের মধ্যে সোনালী বেগম চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে জানা যায়।

বাংলাদেশ পুলিশের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার লিখেছে, কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে পুশব্যাকের পর তারা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। সর্বশেষ তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থান করছিলেন। তাদের কাছ থেকে ভারতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। আনন্দবাজারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনালি বিবি, তার স্বামী দানিশ শেখ ও আট বছরের ছেলে দীর্ঘদিন দিল্লির রোহিণীতে বসবাস করছিলেন। কাগজ কুড়ানো ও গৃহকর্মীর কাজ করে সংসার চালাতেন তারা। পরিবারের দাবি, গত ১৮ জুন তাদের দিল্লি পুলিশ আটক করে। একই সময়ে আটক হন সুইটি বিবি ও তার সন্তানরাও। তারাও বীরভূম জেলার বাসিন্দা। জুন মাসে আটক হওয়ার পর দিল্লি আদালতে মামলা হলেও পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের সহায়তায় কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়, যা এখনো বিচারাধীন।

বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সোনালির গ্রেপ্তারের খবর আমরা পেয়েছি। কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। আমরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। আইনি প্রক্রিয়া জটিল হলেও ওদের ফেরানোর চেষ্টা চলবে। গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ইতোমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন। হাইকোর্টের পরবর্তী শুনানি হবে ১০ সেপ্টেম্বর।

হাইকোর্টে শুনানি পিছিয়ে যাওয়ার কথা জেনে মন ভেঙেছে সোনালি এবং সুইটির পরিবারের। সবচেয়ে চিন্তায় সোনালির পরিবার। সোনালির মামাতো ভাই রকি শেখ বলেন, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় দিদিকে বিদেশে আটক রাখা সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়। যদি ওখানেই শিশুর জন্ম হয়, আইনি জটিলতা আরও বেড়ে যাবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের আলীনগর এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়েছে। তারা সবাই ভারতীয় নাগরিক। কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেন, বাংলাভাষীদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ৯১ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ী গত শুক্রবার কলকাতায় ভারতীয় তরুণদের সামাজিক সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জনসভায় আলোচনার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সেন বলেন, আমি সংবাদপত্রে দেখেছি যে একজনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে কারণ সে বাংলায় কথা বলছিল। এটা আমাকে কিছুটা চিন্তিত করে তুলেছে। পরে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলাভাষী ব্যক্তিদের ওপর হয়রানির অভিযোগ সম্পর্কে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে, তিনি ভারতীয় সভ্যতার বৈচিত্র্যের ওপর জোর দিয়ে বলেন, বাঙালি এবং পাঞ্জাবিসহ প্রতিটি সাংস্কৃতিক পরিচয়েরই উদযাপনের কারণ রয়েছে।

নাগরিককে ফেরত নেয়নি ভারত, অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ ৬ জন এখন কারাগারে: আদালত সূত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে ৬ ভারতীয় নাগরিককে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার আলীনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ। পরে সদর মডেল থানার এসআই এনামুল বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে মামলা দায়ের করেন এবং শুক্রবার (২২ আগস্ট) চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমলি আদালতের বিচারক তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

পুলিশ সূত্র থেকে জানা যায়, ভারতের দিল্লীতে ইটভাটায় কাজ করার সময় গত ২৬ জুন নারী ও শিশুসহ এই ছয়জনকে ‘বাংলাদেশি’ দেখিয়ে ভারতীয় পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ তাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়। এরপর তারা প্রায় দুই মাস ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের আলীনগর এলাকায় অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন। পরে বুধবার (২০ আগস্ট) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাদের আটক করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের একটি দল। এরপরে নিজ দেশে ফেরত নেওয়ার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং এজন্য তাদেরকে এক দিন পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে না পারার কারণে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারীর বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে সোনালী বেগম নামে একজন চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার বিষয়ে জেল কর্তৃপক্ষ বিস্তারিত বলতে পারবেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. আমজাদ আলী বলেন, গত সন্ধ্যার দিকে ছয় ভারতীয় নাগরিককে কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীকে জেল কোড অনুযায়ী চিকিৎসা সেবাসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।