অভিযান শুরুর পর এক মাসে ধরা ৬২৯, মামলা ৩৫৮
মোবাইল কোর্টে সাজা ৫ জন
খাতভিত্তিক চাদাঁবাজদের তালিকা ও অভিযান চালানোর তাগিদ
চাদাঁবাজ-অবৈধ দখলদারদের পেছনে ছুটছে পুলিশ। তবে হাতেনাতে ধরা পড়ছেনা কেউ। দেশজুড়ে এই দুধরনের অপরাধীদের ধরতে সাড়াশিঁ অভিযান শুরু হয় ১৫ জুলাই রাত থেকে। অভিযানে একমাসে ধরা পড়েছে ৬২৯ জন, আর মামলা হয়েছে ৩৫৮ টি। এরমধ্যে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা পেয়েছেন ৫ জন। এ যাবৎ ধরা পড়াদের ঠিকানা এখন কারাগার। অভিযান শুরুর দিন থেকে হাতেনাতে চাদাঁবাজ ধরে ডিটেনশন দিয়ে কারাগারে পাঠানোর যে পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিল পুলিশ, তার কোন সুফল এতোদিনের অভিযানেও পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সদর দফতরের একাধিক সূত্র জানায়, গত কয়েকমাস ধরে দেশজুড়ে চাদাঁবাজী ও অবৈধ দখলদারীর ঘটনায় বেশ আলোচনা সমালোচনা শুরু হলে নানা প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিশসহ আইনশৃংখলারক্ষাকারী বাহিনী। এ অবস্থায় পুলিশ সদর দফতরে জরুরি এক বৈঠকে ১৫ জুলাই রাত থেকেই দেশজুড়ে চাদাঁবাজ-অবৈধ দখলদার ধরতে, তাদের লাগাম টানতে সাড়াশিঁ অভিযান শুরু করা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, হাতেনাতে কোন চাদাঁবাজকে ধরতে পারলেই তাৎক্ষণিকভাবে ডিটেনশন দিয়ে কারাগারে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা দায়ের করে সেই মামলার তদন্ত পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত করে পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর আদালত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ওই মামলার রায় প্রদান করবে। এজন্য সকল আইনী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। সে মতেই পুলিশ অভিযান শুরু করে। পুলিশের সকল ইউনিটকে অভিযান পরিচালনাসহ তালিকা তৈরির নির্দেশ প্রদান করে পুলিশ সদর দফতর।
এদিকে, পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের নতুন-পুরাতন চাদাঁবাজদের তালিকা প্রনয়ন করবে। আগের তালিকা প্রনয়ন করা থাকলে সেটি হালনাগাদসহ প্রয়োজনে নতুনভাবে তালিকা তৈরি করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্রে জানা গেছে। সুত্র মতে, সে অনুসারেই দেশের সকল থানায় থানা ভিত্তিক চাদাঁবাজ-অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রনয়নের কাজ চলছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযানও পরিচালনা করা হচ্ছে নিয়মিতভাবেই বলে সুত্রের দাবি।
সূত্রে জানা গেছে, চাঁদাবাজদের ধরতে অভিযান শুরুর নির্দেশ পাওয়ার পর হাটে মাঠে ঘাটে, বাস, ট্রাক, টেম্পু স্ট্যান্ড, ফুটপাত, রেল-নৌ-বাস টার্মিনালসহ সকল স্থানেই সাঁড়াশী অভিযান শুরু করে পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা। গত ১৫ জুলাই রাতে শুরু হওয়া এ অভিযানে চলতি মাসের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত একমাসে ৬২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৩৫৮ টি। এরপরের তিনদিনে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত আরও ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সবমিলে গ্রেফতারের সংখ্যা দাড়াঁয় ৬৫০ জন। আর এ সময় পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৩৭১ টি।
পুলিশ সদর দফতরের সুত্রমতে, ১৭ আগস্ট পর্যন্ত অভিযানের ৩৩ দিনে ৬৫০ জনকে গ্রেফতারের পরিসংখ্যানে দেখা যায় ঢাকা মহানগর এলাকায় ১০৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ৪ জনকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়। আর একজনকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয় ভোলা জেলায়। চট্টগ্রাম মহানগরীতে গ্রেফতার করা হয় ২৫ জন, রাজশাহী মহানগরীতে ১৭ জন, খুলনা মহানগরীতে ৩ জন, সিলেট মহানগরীতে ৩ জন, গাজীপুর মহানগরীতে ১৩ জন ও রংপুর মহানগরীতে ৩ জন। বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে ২০২ জন, ময়মনসিংহে ২৮ জন, চট্টগ্রামে ১০১ জন, রাজশাহীতে ১৯ জন, খুলনায় ৮৭ জন, বরিশালে ২৫ জন, সিলেটে ১১ জন ও রংপুরে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে পুরাতন মামলায় ২৭৪ জন ও নতুন মামলায় ৩৭১ জনকে গ্রেফতার করা হয় ।
পুলিশ সদর দফতর সুত্র জানায়, গত বছরের জুলাই আগষ্টের তীব্র গনআন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকারের অকল্পনীয় পতনের পর দেশজুড়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনা বেড়ে যায়। দেশে কিছুটা অস্থিরতা দেখা দেয়। আইন-শৃংখলাবাহিনীর প্রতি সাধারন জনগনের ব্যাপক ক্ষোভ এবং থানার অপারেশনাল কার্যক্রমে ধীর গতির সুযোগে আওয়ামীলীগ ও একটি স্বার্থান্বেষী মহল এ অপরাধমূলক কাজ শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দফতর থেকে বিশেষ শাখার (এসবি) অ্যাডিশনাল আইজির কাছে গত বছরের ১৬ অক্টোবর একটি জরুরী পত্র পাঠিয়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়। এই চিঠি পাওয়ার পর পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে বিদ্যমান ৭২ টি ইউনিটের কাছে তালিকা চেয়ে গোপনীয় পত্র পাঠানো হয়। ওই ইউনিটগুলোকে ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়। এর মধ্যে ২৯ টি ইউনিট বাদে ৪৩ টি ইউনিট চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের তালিকা করে বিশেষ শাখায় পাঠায়। বিশেষ শাখা থেকে ওই বছরের ৬ নবেম্বর ৪৫৭ পৃষ্ঠার গোপনীয় প্রতিবেদনটি পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়। প্রতিবেদনে সারা দেশের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সবিস্তার তুলে ধরা হয়। তাতে ২০৩১ চাদাঁবাজ-সন্ত্রাসীদের নাম উঠে আসে বলে সুত্রটি জানায়।
পুলিশ সদর দফতরের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ১৫ জুলাই অভিযান শুরুর পর থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত ৫ দিনে ২৭১ চাদাঁবাজকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। এ সময়ের মধ্যে মামলা হয় ১৭১ টি। এই গ্রেফতার ও মামলার পরিসংখ্যানকে অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে প্রকৃত চাদাঁবাজদের পরিসংখ্যান পাঠাতে নির্দেশ দেয় পুলিশ সদর দফতর। একই সময়ে বিভিন্ন ইউনিট থেকে পাওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অবৈধ দখলদারীর ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৪ টি, আর এসব মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ১৭ জন। ২০ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত ৯০ জন চাদাঁবাজকে গ্রেফতার করা হয়, মামলা হয় ৮২ টি। এ সময়ের মধ্যে অবৈধ দখলদার গ্রেফতার করা হয় ৪ জন, মামলা হয় ৩ টি।
পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশের বিভিন্ন খাতেই চাদাঁবাজীর ঘটনা ঘটে। প্রতিটি খাতেই এ ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য খাত ভিত্তিক চাদাঁবাজদের পৃথক তালিকা করে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করা হলে সফলতা আসবে বেশি। তারা খাত ভিত্তিক তালিকা তৈরি করে অভিযান পরিচালনার কথা বলেন।