যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, চূড়ান্ত আলোচনার শেষ দিনের বৈঠক বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১ টায় শুরু হয়ে রাত ১ টায় শেষ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক কমাতে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে দেশটির সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা আজ বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে। ফলে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশের ওপর শুল্কের হার কতো হবে, শিগগিরই তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যেতে পারে বলে মনে করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, চূড়ান্ত আলোচনার শেষ দিনের বৈঠক বাংলাদেশ সময় রাত ১১:০০ টায় শুরু হয়ে রাত ১ টায় শেষ হয়। তিন দিন ধরে চলমান তৃতীয় রাউন্ডের এই আলোচনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উপর আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক কমাতে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বিভিন্ন শর্ত নিয়ে দরকষাকষি করছে দুই পক্ষ।

বাংলাদেশের পক্ষে আলোচনায় যোগ দিচ্ছেন- বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক ড. নাজনীন কায়সার চৌধুরী ও ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। গত ৭ জুলাই এটি কমিয়ে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করে, আগামীকাল ১ আগস্ট থেকে তা কার্যকর করা হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেশষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

চূড়ান্ত রাউন্ড আলোচনার প্রথম দিনের বৈঠক শেষে গত ৩০ জুলাই সকালে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে জানান, বাংলাদেশের শুল্ক কমার বিষয়ে তাঁরা খুবই আশাবাদী এবং নতুন শুল্কহার যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বি ভিয়েতনাম ও ভারতের চেয়েও কম হবে বলে আশা করেন তিনি।

বুধবার ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পাশাপাশি রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানির কারণে জারিমানা আরোপ করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। আর ভিয়েতনামের ওপর আরোপিত ৪৬ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২০শতাংশ করা হবে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানান, বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বেশিরভাগ বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছে। শেষ দিনের মিটিংয়ে আরও কিছু বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে দুই পক্ষ।

‘’এতে বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্কহার কমবে বলে মনে করছেন তারা। তবে চূড়ান্তভাবে এই হার কতো হবে, তা নির্ধারণ করবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প’’- জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।

চূড়ান্ত রাউন্ডের আলোচনা শুর” করতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার আগে বাণিজ্য সচিব টিবিএসকে জানান, আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে দুইপক্ষ একমত হলেও ১ আগস্টের আগে চুক্তি স্বাক্ষর হবে না। কারণ, চুক্তির চূড়ান্ত খসড়াটি বাংলাদেশের উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন করার পর আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং হবে। তারপর এটি স্বাক্ষর হবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান রপ্তানি বাজার। দেশটিতে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির পরিমাণ ৮ বিলিয়ন ডলার। দেশটি থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। বাড়তি শুল্কে ছাড় পেতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর মাধ্যমে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি অর্ধেকে নামিয়ে আনতে চায় সরকার।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনা, বছরে ৭ লাখ টন গম কেনার পাশাপাশি বেসরকারিখাতের মাধ্যমে তুলা, সয়াবিন, গম ও ডাল আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমদানি বাড়ানোর আলোচনা করার পাশাপাশি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করতে ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন।