গণভবনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী ৫ আগস্ট উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তবে দর্শনার্থীদের জন্য জাদুঘর উন্মুক্ত করা হবে আরও পরে। গতকাল সোমবার দুপুরে গণভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্কৃতি উপদেষ্টা। তিনি বলেন, জাদুঘরের বেশ কিছু কাজ এখনো বাকি। এ কারণে ৫ আগস্ট জনসাধারণের জন্য জাদুঘর উন্মুক্ত করা হচ্ছে না।

গত বছর ৫ সেপ্টেম্বর গণভবনকে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। জাদুঘর নির্মাণে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জাদুঘর নির্মাণের অগ্রগতি এবং জাদুঘরে কী থাকছে, তা জানতে চান একজন সাংবাদিক। জবাবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, আগামী ৫ আগস্ট জাদুঘর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হবে। জাদুঘরে জুলাই অভ্যুত্থানের নানা স্মৃতি, কেন জুলাই হলো, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের দুঃশাসনের ঘটনা থাকবে। জুলাই আন্দোলনের মূল যে দর্শন, তা স্থান পাবে জাদুঘরে।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, গণভবন একটা ‘ক্রাইম জোন’ (অপরাধের এলাকা)। এখান থেকেই হত্যা–গুম-খুনের পরিকল্পনা করা হয়। ভবনটিকে এমনভাবে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হবে, যাতে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে। গণভবনে জুলাই জাদুঘর তৈরি করলেও গণহত্যার প্রমাণ মুছবে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে অপরাধের মূল উপাদানগুলো জমা দেওয়া হয়েছে। জাদুঘরে গিয়ে জনগণ শেখ হাসিনার শাসনামলের অপরাধ ও নির্যাতনের ‘আজীবনের বিচার’ করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলন ডাকার কারণ হিসেবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শুরুতেই বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মূল অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে আজ ১৪ জুলাই থেকে। এই দিন ‘জুলাই উইমেন্স ডে’। গত বছর আজকের এই দিনে দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে মেয়েরা বের হয়ে আসেন। তাঁরা আওয়ামী লীগ সরকারের ন্যারেটিভ (বয়ান) ভেঙে দেন। মেয়েদের অবদানকে ‘স্যালুট’ জানাতে আজকের দিনটি নানাভাবে উদ্যাপন করছে সরকার। জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এ আয়োজনে সরকারের কত টাকা খরচ হচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, এক টাকাও বাড়তি বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বাজেট থেকেই এই টাকা খরচ হচ্ছে।

নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল সরকার গঠনের পর জুলাই জাদুঘরের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, জাদুঘর নির্মাণের সঙ্গে সব দলের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সবার মতামত ও সম্মতি নিয়ে জাদুঘর করা হচ্ছে। ফলে পরের সরকার এলেও সমস্যা হবে না।

অন্তর্বর্তী সরকার সাধারণত যেকোনো সংবাদ সম্মেলন রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে করে থাকে, আজকে কেন গণভবনে-এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘গত বছর এমন দিনে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন হয়েছিল। আজকে একই দিন সেই গণভবনে আরেকটি সংবাদ সম্মেলন হলো। দিস ইস পোয়েটিক জাস্টিস।’ সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। পরে সাংবাদিকদের গণভবনের চারপাশ ও জাদুঘর নির্মাণের অগ্রগতি ঘুরিয়ে দেখানো হয়।