বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুর্নবহাল করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে তা আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে কার্যকর হবে না। পরবর্তী চর্তুদশ সংসদ নির্বাচন থেকে কার্যকর হবে। এখন আলোচনার মূল বিষয় এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি কী আগের কাঠামোতেই বহাল থাকবে নাকি কোন পরিবর্তন আসবে? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন? এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি যেহেতু ফিরে এসেছে এখন তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এর ত্রুটিগুলো দূর করে আরো আধুনিক ও সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য কাঠামো তৈরি করা সম্ভব হবে।

সূত্রমতে, ১৯৯৬ সালের ত্রয়োদশ সংশোধন আইনের ধারা ৩ দিয়ে সংবিধানের চতুর্থ ভাগের ‘২ক পরিচ্ছেদ-নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ সম্পর্কিত বিধানাবলি ৫৮ক, ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ, ৫৮ঙ সংযুক্ত হয়। বুধবারের আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে এ পরিচ্ছেদের সবগুলো বিধান পুনরুজ্জীবিত ও সক্রিয় করা হয়।

রায়ে আরও বলা হয়, এরূপ পুনরুজ্জীবন ‘পরিচ্ছেদ ২ক’এ উল্লেখিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত বিধানাবলির স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বহাল নিশ্চিত করে। তবে পুনরুজ্জীবিত অনুচ্ছেদ ৫৮খ(১) এবং অনুচ্ছেদ ৫৮গ(২) এর বিধানের প্রয়োগ সাপেক্ষে তা কার্যকর হবে। পুনর্বহাল ও পুনরুজ্জীবিত ‘পরিচ্ছেদ ২ক’এ উল্লেখিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত বিধানাবলি কেবল ভবিষ্যৎ প্রয়োগযোগ্যতার ভিত্তিতে কার্যকর হবে।

বিগত ১৯৯৬ইং সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংযুক্ত হয়। সেখানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত ৫৮খ(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর বা মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে যে তারিখে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কার্যভার গ্রহণ করেন, সেই তারিখ থেকে সংসদ গঠিত হওয়ার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী তার পদের কার্যভার গ্রহণ করার তারিখ পর্যন্ত মেয়াদে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, উপদেষ্টা নিয়োগ ইত্যাদি সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৫৮গ(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, সংসদ ভেঙে দেওয়ার বা ভঙ্গ হওয়ার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্য উপদেষ্টারা নিযুক্ত হবেন। আর প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার বিধানে বলা হয়েছিল, সর্বশেষ বিদায়ী প্রধান বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা কী হুবহু আগের কাঠামোতে থাকবে নাকি নতুন কাঠামো তৈরি হবে? এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, রায়ে আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হলো। এটা কার্যকর হবে পরবর্তী সংসদ ভাঙার পরের ১৫ দিনের মধ্যে। তবে এ বিষয়ে পার্লামেন্টের কিছু ডিসকাশন থাকবে। ২০ বছর পরে জনগণ যদি মনে করে এই ব্যবস্থা পচে গলে গেছে, এর থেকেও ভালো কোনো ব্যবস্থা গণতন্ত্র সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন, তাহলে অবশ্যই পার্লামেন্টের ডিসকাশন থাকবে।

এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, জুলাই সনদ চারটি বিকল্প দিয়ে গণভোটে পাঠানো হচ্ছে। এগুলো গণভোটে পাস হলে এবং নতুন সংসদের সংবিধান সংস্কার সভায় গৃহীত হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামোয় আমূল পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এটা নির্ভর করবে জুলাই সনদ গণভোটে পাস হলো কি না আর পাস হওয়ার পর সংবিধান সংস্কার পরিষদ তা গ্রহণ করবে কি না তার ওপর।

এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো সর্ম্পকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ত্রয়োদশ সংশোধনীর মতো করে হবে, নাকি জুলাই সনদে যেভাবে বলা হয়েছে, সেভাবে গঠিত হবেÑতত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায়ের পর এই প্রশ্ন সামনে এসেছে।

তিনি বলেন, এই অস্পষ্টতা সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা হচ্ছে না। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, জুলাই সনদে যেভাবে বলা হয়েছে, সেভাবে হবে। কিন্তু বিভিন্ন দল, বিশেষ করে বিএনপি ত্রয়োদশ সংশোধনীতেই ফিরে যাওয়ার কথা বলছে। কিন্তু সেখানে যেভাবে এটা আছে, সেটা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নানা ধরনের সংকট তৈরি করেছে, এক-এগারোর মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সেই জায়গায় শুধু বিচার বিভাগের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে জুলাই সনদে যেভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে, সেভাবে গঠন করাই দেশে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সবচেয়ে উপযোগী পদ্ধতি। এর ব্যত্যয় করার কোনো সুযোগ নেই।

আপিল বিভাগের রায়ের আগেই সংবিধান সংস্কার কমিশন নির্বাচনকালীন একটি সরকারের রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন। যা জুলাই সনদে রয়েছে। পরবর্তী সংসদে আলোচনা। মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নতুন কাঠামো প্রণয়ন করা যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জুলাই সনদে উল্লেখিত তত্ত্বাবধায়ক ফর্মুলায় সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে।

জুলাই সনদে তত্ত্বাবধায়কের ফর্মুলা

জুলাই সনদে বলা হয়েছে, “সংবিধান সংশোধন করে নিম্নরূপ বিধান সংযুক্ত করা হবে। (১). মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। (২) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮খ সংশোধনপূর্বক সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ১৫ দিন পূর্বে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙ্গে গেলে ভঙ্গ হওয়ার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। (৩) মেয়াদ অবসানের ক্ষেত্রে সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ৩০ দিন পূর্বে আইনসভার নিম্নকক্ষের স্পিকারের তত্ত্বাবধানে এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) এবং সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি; যদি একাধিক দল দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের অবস্থানে থাকে তাহলে সেসব দলের মধ্য (যদি সংসদে আসন সংখ্যার থেকে নির্বাচনে সর্বোচ্চ পরিমাণে ভোটপ্রাপ্ত দলটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে বিবেচিত হবে) মোট ৫ সদস্য সমন্বয়ে একটি ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে। কমিটির যেকোনো বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জাতীয় সংসদের স্পিকার সভাপতিত্ব করবেন।”

এতে বলা হয়, “(৪) কমিটি গঠিত হওয়ার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহ, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলসমূহ এবং জাতীয় সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের নিকট হতে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮গ (৭)-এ বর্ণিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির নাম প্রস্তাবের আহ্বান করবে এবং এক্ষেত্রে প্রতিটি দল ১ জন এবং একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ১ জন মাত্র ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। (৫) রাজনৈতিক দলসমূহ এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যগণ পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে তাদের প্রস্তাবিত নাম দাখিল করবে। কমিটি নিজ উদ্যোগেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তির নাম অনুসন্ধান ও অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। (৬) পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কমিটির সদস্যগণ সভায় মিলিত হয়ে নিজেদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত এবং রাজনৈতিক দলসমূহ ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের নিকট হতে প্রস্তাবিত নামসমূহ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করত বাংলাদেশের যে সকল নাগরিক সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮গ(৭)-এর অধীনে উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্য তাদের মধ্য হতে একজনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নিবেন এবং তিনি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। (৭) বাছাই কমিটি গঠিত হওয়ার পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার মধ্যে এ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কোনো ব্যক্তিকে চূড়ান্ত করা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য অনুচ্ছেদ ৫৮গ-এ বর্ণিত শর্ত অনুসরণপূর্বক সংসদের সরকারি দল/জোট ৫ জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে এবং প্রধান বিরোধী দল/জোট ৫ জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। এছাড়া, সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল ২ জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। যদি সংসদে আসন সংখ্যার বিবেচনায় একাধিক দল দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের অবস্থানে থাকে তাহলে সেসব দলের মধ্যে নির্বাচনে সর্বোচ্চ পরিমাণ ভোটপ্রাপ্ত দলটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে বিবেচিত হবে। উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত নামসমূহ স্পিকার জনসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ করবেন।”

ফর্মুলায় বলা হয়, “(৮) উপর্যুক্ত দফা (৭)-এ বর্ণিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি দল/জোটের প্রস্তাবিত ৫ জন ব্যক্তির নামের তালিকা হতে প্রধান বিরোধী দল/জোট যেকোনো ১ জনকে বেছে নিবে; অনুরূপভাবে প্রধান বিরোধী দল প্রস্তাবিত ৫ জন ব্যক্তির নামের তালিকা হতে সরকারি দল যেকোনো ১ জনকে বেছে নিবে। দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের প্রস্তাবিত মোট ২ জনের নামের তালিকা হতে সরকারি দল/জোট যেকোনো একজনকে বেছে নিবে এবং প্রধান বিরোধী দল/জোট যেকোনো ১ জনকে বেছে নিবে। এই পদ্ধতিতে প্রাপ্ত নামসমূহের মধ্য হতে যেকোনো একজনের ব্যাপারে যদি প্রস্তাবকারী দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তিনিই পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত হবেন। অথবা কোনো একজনের ব্যাপারে কমিটির ৫ জন সদস্যের মধ্যে যদি ৪ জন সদস্য একমত হন তাহলে তিনিই পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত হবেন।”

“(৯) যদি উপযুক্ত পদ্ধতিতে কোনো একজনের বিষয়ে প্রস্তাবকারী পক্ষসমূহ একমত হতে না পারে তাহলে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার বিভাগের দুইজন প্রতিনিধি বাছাই কমিটিতে সদস্য হিসেবে যুক্ত হবেন; তবে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কারো নাম প্রস্তাব করতে পারবেন না। উক্ত দুইজন প্রতিনিধির মধ্যে ১ জন আপীল বিভাগের বিচারপতি হবেন এবং ১ জন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হবেন। উক্ত ২ জন বিচার বিভাগীয় প্রতিনিধিকে মনোনীত করার জন্য- (১) সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, (২) কর্মরত প্রধান বিচারপতি এবং (৩) আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতির সমন্বয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হবে। (১০). এই পর্যায়ে ৭ সদস্য বিশিষ্ট উক্ত বাছাই কমিটির সদস্যগণ পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্পিকারের তত্ত্বাবধানে গোপন ব্যালটে ‘র‌্যাংকড চয়েজ’ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে উক্ত সংক্ষিপ্ত তালিকা হতে যেকোনো ১ জনকে পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নিবেন।”

ফর্মুলায় বলা হয়, “(১১) উপযুক্ত যেকোনো পদ্ধতিতে মনোনীত ব্যক্তিকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি পরবর্তী ৯০ দিনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগদান করবেন; তবে শর্ত থাকে যে, সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় তিনি শপথ গ্রহণ করবেন না। (১২) উপযুক্ত পদ্ধতিসমূহের মাধ্যমেও যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বেছে নেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুসরণ করতে হবে; তবে শর্ত থাকে যে, এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বেছে নেওয়া যাবে না। (১৩) কোনো কারণে প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে রাষ্ট্রপতি অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য পূর্ববর্তী র‌্যাংকড চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতিতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বয়সে জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগদান করবেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বয়সে জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তি দায়িত্ব গ্রহণে অসম্মতি জানালে অথবা দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে র‌্যাংকড চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতিতে পরবর্তী স্থানে থাকা ব্যক্তি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নিযুক্ত হবেন। এই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা পদে পরিবর্তন হলেও উপদেষ্টা পরিষদ বহাল থাকবে। তবে উপদেষ্টা পরিষদের কোনো পদ শূন্য হলে নবনিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা সেই শূন্য পদ পূরণের অধিকার রাখবেন।”

“(১৪) নিয়োগলাভের পর প্রধান উপদেষ্টা উপযুক্ত বাছাই কমিটির সঙ্গে পরামর্শক্রমে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮গ(৭)-এ বর্ণিত উপযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্য হতে অনধিক ১৫ জন ব্যক্তিকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের জন্য বেছে নিবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ প্রদান করবেন। (১৫) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙ্গে গেলে, ভঙ্গ হওয়ার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় বিলুপ্ত সংসদের একই ধরনের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে এবং উক্ত কমিটি পরবর্তী ১৪ দিন তথা ৩৩৬ ঘণ্টার মধ্যে উক্তরূপ অভিন্ন পদ্ধতিতে ১ জন ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নিবে এবং তিনি অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হবেন।”

সনদে বলা হয়, “(১৬) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮গ(৭)(ঘ) সংশোধনপূর্বক ‘বাহাত্তর বত্সরের অধিক বয়স্ক নহেন’ শব্দসমূহের পরিবর্তে ‘পঁচাত্তর বৎসরের অধিক বয়স্ক নহেন’ শব্দসমূহ প্রতিস্থাপিত হবে। (১৭) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন এবং উপদেষ্টাগণ মন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। (১৮) সংবিধানে বর্ণিত বিধানাবালী সাপেক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব, কর্তব্য, এখতিয়ার ও অবসানের সময়সীমা নির্ধারিত হবে। (১৯) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ হবে অনধিক ৯০ দিন। তবে, দৈব দুর্বিপাকজনিত কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে নির্বাচকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আরো সর্বোচ্চ ৩০ দিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে। (২০) নতুন সংসদ গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তার পদের কার্যভার গ্রহণ করবেন সেই তারিখে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হবে। (২১) ত্রয়োদশ সংশোধনীর অনুচ্ছেদ ৫৮গ (২) এর বিধানে উল্লেখিত ব্যবস্থা বহাল থাকবে।”