বাংলাদেশ জেলের নাম পরিবর্তন করে ‘কারেকশন সার্ভিসেস বাংলাদেশ’ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কারা সদরদপ্তরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।
আইজি প্রিজন বলেন, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দীদের স্থান সংকুলানের জন্য নতুন করে দুটি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং চারটি জেলা কারাগার চালু করা হয়েছে। এছাড়া অধিকতর সমন্বয়ের জন্য ঢাকা বিভাগকে ভেঙে দুটি বিভাগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, কারাগারে অপরাধমূলক কার্যক্রম রোধে কঠোর হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। গত এক বছরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রায় ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে, যা কারাগারগুলোকে নগদ টাকা মুক্ত করার চলমান প্রচেষ্টারই অংশ। কারাগারে মাদক বিস্তার রোধ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা মাদকের বিষয়ে অনেক কঠোর। মাদক মামলায় যারা গ্রেফতার তাদের কারাগারে আনার পর বিশেষ সেলে রাখা হয়। যাতে সে মাদক ছড়িয়ে দিতে না পারে। এমনও বন্দী এসেছে যার পেটে ১২০০ ইয়াবা পেয়েছি। আমরা এখনো শতভাগ সফল না, তবে আমরা উন্নতি করেছি। এছাড়া মাদকের সঙ্গে জড়িত কারারক্ষীদের চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারাগারে বাসা থেকে রান্না করা খাবার দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তত এক হাজারের বেশি অভিযান চালিয়ে বিপুলসংখ্যক ছোট সাইজের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এখন অনেকটা কমেছে, তবে বন্ধ হয়েছে বলা যাবে না।
পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের বিষয়ে তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট বিভিন্ন কারাগার থেকে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি বন্দী পালিয়ে গিয়েছিল। পরে গ্রেফতার ও ফিরে আসেন অনেকে। এখনো ৭০০ এর বেশি বন্দী পলাতক। এরমধ্যে জঙ্গি ৯ জন এবং মৃতদ-, যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত বন্দী ৬০ জন। তিনি আরও বলেন, এখনো ২৯টি অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। আরও কিছু গোলা-বারুদ বাকি। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অস্ত্র ফেরত দিলে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে নারী বন্দীদের আনা-নেওয়ার পথে অনেকে গরমসহ নানান কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সমস্যা সমাধানে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে আইজি প্রিজন বলেন, কেরানীগঞ্জে আরও একটি কারাগার প্রতিস্থাপন করার কাজ চলমান। এর মাধ্যমে নারী বন্দীদের এই সমস্যা সমাধান করতে পারবো। পাশাপাশি আমাদের বিশেষ কারাগারেও একটি সেল নারী বন্দীদের জন্য খোলা হবে। যাতে নারী বন্দীদের যাতায়াত সমস্যার সমাধান হয়।
বন্দীদের ল্যান্ডফোনে যোগাযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে একবার ৫ মিনিটের জন্য কথা বলার ব্যবস্থা থাকলেও এর অপব্যবহার হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যা কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে শুরু হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে সন্দেহজনক কথোপকথন শনাক্ত করারও পরিকল্পনা রয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, কারাগারগুলোতে ধীরে ধীরে কম্প্রিহেন্সিভ জ্যামিং সিস্টেম চালুর চেষ্টা চলছে। প্রথমে স্পেশাল জেল ও কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে এটি প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া পাইপলাইনে। কারাগারে কতজন রাজবন্দী আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কাছে রাজনৈতিক বা ভিআইপি বন্দী বলে কিছু নেই। এখানে রাজনৈতিক কোনো মামলা নেই। কারাগারে যারা আছেন তারা মারামারি, গণহত্যা, হত্যা মামলার আসামী। আমার জায়গা থেকে রাজনৈতিক আইডেন্টিফিকেশন দিয়ে আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা মামলার গুরুত্ব বা ধারা অনুসারে আলাদা করছি। কারাগারে ভিআইপি বন্দী বলে কিছু নেই। এটা হচ্ছে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী। বর্তমানে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী আছেন ১৬৩ জন। এছাড়া ডিভিশন আবেদন করে পাননি এমন বন্দী আছেন ২৮ জন।
সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, কারাগারে খাবারের মান উন্নত করতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন খাবারের পরিমাণ নিয়ে তেমন অভিযোগ নেই, তবে রান্নার মান নিয়ে কিছু অভিযোগ থাকতে পারে, কারণ বন্দীরাই রান্না করেন। বন্দীদের জন্য প্রোটিনের পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে। কারাগারে চিকিৎসার অপ্রতুলতা নিয়ে আইজি প্রিজন বলেন, কারা অধিদপ্তরে ১৪১ জন তালিকাভুক্ত ডাক্তারের মধ্যে মাত্র দু’জন কর্মরত। এছাড়া ১০৩ জন সিভিল সার্জন রয়েছেন। কিন্তু সংখ্যাটা পর্যাপ্ত নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা হয়েছে এবং দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।