মিয়ানমারে সংঘটিত ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সূত্রে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে বিবিসি জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ১,৬৪৪ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া আহত হয়েছেন ৩,৪০৮ জন এবং এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১৩৯ জন। বিবিসি
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় দেশটির জান্তা সরকারের বরাতে বিবিসি এসব তথ্য জানিয়েছে।
শুক্রবার সংঘটিত ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের মান্দালয় শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে, ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। এতে সাগাইং, মান্দালয়, নেইপিদোসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সাগাইংয়ে শত বছরের পুরোনো একটি সেতু ধসে পড়েছে এবং বিভিন্ন স্থানে ভবন ও মসজিদ ধ্বংস হয়েছে।
মিয়ানমারের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত রেডিও এবং টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাজ্য প্রশাসন পরিষদের চেয়ারম্যান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং শনিবার সকালে হেলিকপ্টারযোগে মান্দালয়ে পৌঁছেছেন এবং মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এর আগে শুক্রবার তিনি আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।
ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারের ৬টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। দেশটির সামরিক সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছে এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে তথ্য প্রবাহে সীমাবদ্ধতা থাকায় সঠিক পরিস্থিতি নিরূপণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের এই দুর্যোগে সহানুভূতি প্রকাশ করেছে এবং বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা সহায়তা প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উদ্ধার ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তা করতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ব্যাংককে একাধিক ভবন ধস এখনও নিখোঁজ ১০১
রয়টার্স জানায়, ভূমিকম্পে থাইল্যান্ডে একাধিক ভবন ধসের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ব্যাংককে নির্মাণাধীন একটি ৩০তলা ভবন ধসে ১০১ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। দেশটিতে ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ১৬ জন। ব্যাংককের ডেপুটি গবর্নর তাভিদা কামোলভেজ এ তথ্য জানিয়েছেন।
গতকাল শনিবার ব্যাংকক টাইমসের এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ব্যাংককের চাটুচাক জেলার একটি উচু ভবন ধসে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। একজন শ্রমিক মারা যান ক্রেনের নিচে পড়ে। ব্যাং চ্যান এলাকায় আরেকজন মারা যান ঘরের সিলিংয়ের নিচে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তর–উত্তরপশ্চিমে। ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ১০ কিলোমিটার গভীরে।
ইউএসজিএস জানিয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে আঘাত হানা ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ, ভারত, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং চীনে।
দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রশমন বিভাগের মহাপরিচালক পাসাকর্ন বুনিয়ালাক বলেন, ভূমিকম্পে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক ছাড়াও আরও ১০টি প্রদেশে আঘাত হানে। এর মধ্যে সামুত সাখন, চিয়াং মাই, চিয়াং রাই, ফারে, মাই হোং সন, লাম্পেং, চাই নাট, লাম্ফুন, লোয়েই ও কামফায়েন্ং ফেট।
এদিকে থাইল্যান্ডের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ মাই হং সনে আরও দুটি ভূমিকম্প শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘটে পাই জেলায়। এখানে ৪ দশমিক এক মাত্রার, গভীরতা ৫ কিলোমিটার। স্থানীয় সময় ১১ টা ২১ মিনিটে এটি ঘটে। অন্যটি পাই জেলায় ২ মাত্রার, ভোর ৩টা ২৪ মিনিটে।