ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজিত সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন, প্রার্থী ও ভোটারদের ভূমিকা শীর্ষক ছায়া সংসদে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিলে জনরোষ তৈরি হবে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে । পতিত আওয়ামী লীগের অনেক নেতা গণহত্যা ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। নির্বাচনে তারা অংশ নিলে জনআক্রোশ সৃষ্টি হবে।”
গতকাল শনিবার এফডিসিতে এ ছায়া সংসদ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ । বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, কাজী জেবেল, সাইদুর রহমান ও শিরিনা খাতুন বীথি। বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় আসনভিত্তিক ভোট পদ্ধতি দুর্নীতিগ্রস্ত। পিআর (প্রতিনিধিত্ব আনুপাতিক) পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের আশঙ্কা থাকলেও সেটি গ্রহণযোগ্য। তাই মিশ্র পদ্ধতির কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।”
তিনি বলেন, পতিত আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাই গণহত্যা-লুটপাটের সাথে যুক্ত ও গণধিকৃত। তারা নির্বাচনে এলে গণরোষের মুখোমুখি হতে হবে। এতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। কাজেই তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্ভব নয়।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকলে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন অনিয়ম ঠেকাতে ব্যর্থ হলে, কমিশনের অস্তিত্ব অর্থহীন হয়ে পড়বে।”
তিনি দাবি করেন, আগামীতে সরকার ও বিরোধী দল মিলে নির্বাচন কমিশন গঠনের যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে, সেটিই হবে গণতন্ত্রের অগ্রগতির ভিত্তি।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে আগামী রমযানের আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, পরাজিত ফ্যাসিবাদীগোষ্ঠী দেশের বাইরে বসে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার ১/১১ বা গৃহযুদ্ধের ভয় দেখিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তিনি সবাইকে রাজনৈতিক পরিপক্বতা দেখিয়ে ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর করতে আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা না গেলে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। ১৫ বছর ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত মানুষ যেন এবার উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারে, সেটাই নিশ্চিত করতে হবে।”
কিরণ বলেন, ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার আশঙ্কা দূর করতে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত আগামী রোজার আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। পরাজিত ফ্যাসিবাদীগোষ্ঠী পার্শ্ববর্তী দেশে অফিস খুলে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচন বানচাল করতে গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে ফাটল ধরানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। কেউ কেউ ১/১১ সৃষ্টির বা গৃহযুদ্ধের জুজু’র ভয় দেখাচ্ছে এটা অমূলক।
তিনি বলেন, এজন্য অবশ্যই ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য জরুরি। কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে তা নিয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে আসতে পারেনি। শিগগিরই জুলাই সনদে সব দলগুলোর স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। কিন্তু এখনো যে অনৈক্য বিরাজ করছে তাতে আমি শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে শঙ্কিত হচ্ছি। তবে গণতন্ত্র, দেশ ও জাতির স্বার্থে সব পক্ষকে যার যার অবস্থান থেকে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা উচিত।