মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে সিন্ডিকেট করে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে চারটি রিক্রুটিং এজেন্সির পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। চার মামলায় ৩১০ কোটি ৯৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হচ্ছে বলে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেছেন। গতকাল মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এসব এজেন্সি ১৮ হাজার ৫৬৩ জন কর্মীর কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার পরিবর্তে ৫ গুণ বেশি অর্থ আদায় করেছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাগুলো দায়ের করবেন বলে সংস্থার পরিচালক আক্তার হোসেন বলেছেন। চার মামলায় আসামি যারা : ৩৪৮৬ জন কর্মীর কাছ থেকে ৫৮ কোটি ৩৯ লাখ ৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগে সেলিব্রেটি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের কর্ণধার ফারিদা বানু এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল হাইকে আসামি করা হচ্ছে একটি মামলায়। এটি হবে তাদের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা।
অদিতী ইন্টারন্যাশনাল মাধ্যমে ৩৮৫২ জন কর্মী মালয়েশিয়া গেছেন, যাদের কাছ থেকে ৬৪ কোটি ৫২ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকা বেশি আদায়ের অভিযোগ আনা হচ্ছে এজেন্সির স্বত্বাধিকারী বিশ্বজিৎ সাহার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে এটি হবে দ্বিতীয় মামলা। মালয়েশিয়ায় পাঠানো ৩১৪৮ জন কর্মীর কাছ থেকে ৫২ কোটি ৭২ লাখ ৯০ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগে রাব্বি ইন্টারন্যাশনালেল মালিক মোহাম্মদ বশিরের বিরুদ্ধে এটি হবে তৃতীয় মামলা।
সবচেয়ে বেশি ৮০৭৭ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠানো আর্ভিং এন্টারপ্রাইজ ১৩৫ কোটি ২৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে অভিযোগ এনে এটির স্বত্ত্বাধিকারী হেফজুল বারী মোহাম্মদ লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধ আরেকটি মামলা হচ্ছে। এর আগে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছে দুদক। গেল ৬ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে ৫২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১ জনের নামে মামলা করে দুদক। তারও আগে, ১১ মার্চ, একই ধরনের সিন্ডিকেট করে ১১২৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামালের প্রতিষ্ঠানসহ ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। তার পরে ১৪ সেপ্টেম্বর, একইভাবে ১১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৩টি রিক্রুটিং এজেন্সির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের হয়।
বিভিন্ন অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের কারণে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেওয়া বন্ধ করেছিল মালয়েশিয়া৷ ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর আবার বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রমিক নেওয়ার চুক্তি করে দেশটি। ওই সময় শ্রমিক ভিসায় দেশটিতে যেতে সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার ৫৪০ টাকা ফি নির্ধারণ করে সরকার। ২০২২ সালে এক অফিস আদেশে এ খরচ নির্ধারণ করেছিল প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়া সরকারের চুক্তির আওতায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১০টি নির্ধারিত রিক্রুটিং এজেন্সি দেশটিতে শ্রমিক পাঠাত। পরে ২০২১ সালে নতুন একটি সমঝোতা স্মারকে সই করে দুই দেশ। এতে রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০টি করা হয়। তবে সেখানেও নতুন ‘সিন্ডিকেট’ তৈরি হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ১০০ এজেন্সির মধ্যে ২০-২৫টি এজেন্সির সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে মালয়েশিয়ার কর্মী পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়া।