গতকাল সোমবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু পণ্যের শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। বাজেটে যেসব শুল্ক-কর প্রস্তাব করা হয়, তা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়। ফলে শুল্ককর বাড়লে দাম বেড়ে যেতে পারে। সাধারণত শুল্ক-কর বৃদ্ধির প্রভাব বাজারে দ্রুত পড়ে। কমানোর প্রভাব পড়তে দেরি হয়। বাজেট বক্তৃতা, অর্থ বিল ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের পাঠানো নির্দেশিকা ঘেঁটে দেখা যায়, বেশ কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক-কর বাড়ানো হয়েছে।
যেসব দাম বাড়তে পারে
মুঠোফোন : দেশে মুঠোফোন উৎপাদন ও সংযোজনে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমানো হয়েছে এবং মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমানোয় মুঠোফোনের দাম বাড়তে পারে।
ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার : ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, আয়রন, রাইস কুকার, প্রেসার কুকার ইত্যাদি উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমানো হয়েছে।
প্লাস্টিকের তৈজসপত্র : থালাবাসনসহ প্লাস্টিকের তৈজসপত্র, গৃহস্থালি সামগ্রী ও সমজাতীয় পণ্যে ভ্যাটের হার দ্বিগুণ, অর্থাৎ ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব তৈজসপত্রে ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডার : তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডারে স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা কিছুটা কমিয়ে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এতে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়তে পারে।
বিদেশি চকলেট : কিছু পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য বাড়ানো হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বিদেশি চকলেট। ইউনিটপ্রতি ৪ ডলারের বদলে এখন ১০ ডলার ধরে শুল্কায়ন হবে। এতে আমদানিতে খরচ বাড়বে।
লিপস্টিক : ঠোঁট, চোখ ও মুখমণ্ডলে ব্যবহৃত প্রসাধন আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্য অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসব পণ্য আমদানি থেকে বাড়তি কর আদায় হবে। দামও বেড়ে যেতে পারে।
ব্লেড : দাঁড়ি কাটার খরচ বাড়বে। কারণ দেশে ব্লেড উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
অনলাইনে পণ্য : নগরের ব্যস্ত জীবনে মানুষের কেনাকাটার অন্যতম উপায় অনলাইন মাধ্যম। মহামারী করোনার সময় অনলাইন মাধ্যম মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যা এখন আরও অনস্বীকার্য হয়ে ওঠেছে। ২০২৫ - ২৬ অর্থবছরের বাজেটে অনলাইনে পণ্য বিক্রয় কমিশনের ওপর ভ্যাটের হার পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে উদ্যোক্তা পর্যায়ে খরচ বাড়লে এটি ক্রেতা ভোক্তার ওপরও প্রভাব ফেলবে।
কটন সুতা, কৃত্রিম আঁশ : কটন সুতার উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ প্রতি কেজি তিন টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া কৃত্রিম আঁশ এবং অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি ইয়ার্নের উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণে প্রতি কেজিতে দাম বাড়ছে। প্রতি কেজিতে তিন টাকা থেকে পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়েছে এ খাতে। অর্থাৎ এর ফলে ভোক্তা পর্যায়ে কাপড়ের দাম বাড়বে।
সাবান ও শ্যাম্পু : সাবান ও শ্যাম্পুর দুইটি কাঁচামালের স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে অব্যাহতির মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩০শে জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে দাম বাড়বে সাবান ও শ্যাম্পুর।
এছাড়া দাম বাড়তে পারে নির্মাণ শিল্পের অন্যতম উপাদান রড, তামাক শিল্পে ব্যবহৃত সিগারেটের পেপার, ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারি, টেবিলওয়্যারদেশে তৈরি সুতা, আমদানিকৃত হেলিকপ্টার, মার্বেল-গ্রানাইট, তারকাঁটা, সব ধরনের স্ক্রু, নাট-বল্টু, ইলেকট্রিক লাইন হার্ডওয়্যার, পোল ফিটিংস, ইলেকট্রিক লাইন হার্ডওয়্যার, পোল ফিটিংস, সেল্ফ কপি পেপার, ডুপ্লেক্স বোর্ড/কোটেড পেপার, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের ফুড সাপ্লিমেন্ট, বেভারেজ আইটেম, দরজার তালা ইত্যাদি।