চূড়ান্ত জুলাই সনদ দলগুলোর কাছে পাঠানো হচ্ছে : আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর চূড়ান্ত ভাষ্য আজই (বৃহস্পতিবার) রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হচ্ছে। এ সময় সনদে স্বাক্ষরের জন্য দলগুলোর কাছে কমিশন দুই ব্যক্তির নাম চেয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। একই সাথে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে প্রতিনিধিদের নাম পাঠানোরও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এদিকে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরি করতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের বিরতিতে দলটির পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পাঁচটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেখানে জামায়াতের একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আছে। আশা করি এই ৫টি প্রস্তাবের মধ্যে আমরা কাছাকাছি আসতে পারব এবং জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি হবে। জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গণঅভ্যুত্থানের পর সরকার ব্যবস্থায় সাংবিধানিক ব্যবস্থা অনুসরণ করার সুযোগ না থাকায় সংবিধানের ১৫৩ অনুচ্ছেদের মধ্যে ৫৭টি অনুচ্ছেদ ইতোমধ্যে অকার্যকর হয়ে গেছে। এজন্য আমরা বলেছি, একটি নতুন সাংবিধানিক আদেশ জারি করার জন্য। একটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে আগামীতে সংবিধানের উপরে বিশেষ সাংবিধানিক আইনকে প্রাধান্য দিয়ে ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর দেখাতে। এক প্রশ্নের জবাবে তাহের বলেন, গণভোটের প্রস্তাবকে বিকল্প হিসাবে রেখেছি। বিশেষ সাংবিধানিক আইন জারির প্রস্তাবের ভিত্তিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে গণভোটের মাধ্যমে হবে।

জামায়াতের দেওয়া প্রস্তাবের প্রসঙ্গে দলটির নেতা ও আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আমরা একটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কথা বলেছি। অর্থাৎ ঐকমত্য কমিশন যেসব বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন, এর মধ্যে যে বিষয়গুলো সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সেগুলোকে একটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে সংবিধানের উপরে প্রাধান্য দেওয়া। বাকি ক্ষেত্রে সংবিধান যেমন আছে তেমনি থাকবে। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট জনগণের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। জনগণের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ বাস্তবায়ন করার জন্যই সকল আলোচনা চলছে। গণঅভ্যুত্থানের পর যখন কোনো সংবিধান ছিল না, যখন দেশে কোনো সরকার ছিল না, বিচার বিভাগ ছিল না- সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী এই সময়য়ে জনগণের ইচ্ছা কার্যকর ছিল। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী জনগণের ইচ্ছার যে চরম বহিঃপ্রকাশ, এই বহিঃপ্রকাশকে একটি বিশেষ আদেশের মাধ্যমে প্রাধান্য দেওয়া হলে আগামী নির্বাচন এর অধীনে হওয়ার পথে কোনো বাধা থাকবে না বলে মনে করেন শিশির মনির।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এ সনদে সকলের মতের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। এ সময় কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আজকের আলোচনায় দু’টি বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।তিনি জানান, সুপারিশের যেসব বিষয় সংবিধানসংশ্লিষ্ট নয়, সেসব বিষয় বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করতে পারে। আর সুপারিশের যেসব বিষয় সরকারি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশ ও বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করতে পারে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইতোমধ্যে অধ্যাদেশ জারি ও যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক আগামী রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আবারো অনুষ্ঠিত হবে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি-সহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। আগামী রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসবে কমিশন।