গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে আজ সোমবার বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছে নিপীড়িত গাজাবাসী। গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সব দেশে একযোগে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা। ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনে চলমান নিষ্ঠুর হামলার প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে এবং অবৈধভাবে নির্যাতিত ফিলিস্তিনীদের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রনেতারা। তারা আগামীকাল সোমবার ফিলিস্তিনী যুবকের আয়োজিত ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি সফল করার জন্য অনুরোধ করেছেন। পাশাপাশি, সারা দেশে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে একযোগে সংহতি ও বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজনের ডাকও দেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার দুপুরে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলনের দুই সংগঠক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ এবং এ বি জোবায়ের এ কর্মসূচি সফল করতে প্রতিটি বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান। পরে এ কর্মসূচি সফলের আহ্বান জানিয়ে নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন ঢাবি ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। পরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও এ কর্মসূচি সফলের আহ্বান জানানো হয়। কর্মসূচি অনুযায়ী আগামীকাল সোমবার বিকাল ৪টায় ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘গঅজঈঐ ঋড়ৎ চধষবংঃরহব’ এর আহ্বানে সংহতি এবং বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে সারা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়।

গাজাবাসীর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ইংরেজি অক্ষরে ছবিতে লেখা রয়েছে, ‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল আনটিল জেনোসাইড স্টপস’ অর্থাৎ গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কাজ ও স্কুল বন্ধ। ’ ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাঁ, সংহতি জানাই। আজ ৭ এপ্রিল ইসরাইলী দখলদারিত্ব এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটে যোগ দিন। ফেসবুক পোস্টে ছাত্রনেতা এবি জোবায়ের বলেন, আজ সোমবার বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছে আমাদের মজলুম গাজাবাসী ভাইবোনেরা। গণহত্যা বন্ধ করার দাবিতে বিশ্বের সব দেশে একযোগে স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, অফিস, আদালত সব বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আগামীকাল ৭ এপ্রিল সারাদিন বাংলাদেশেও জেনারেল স্ট্রাইক পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। আগামীকাল আপনারা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, অফিস-আদালত বন্ধ রাখুন। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করুন। চলুন বৈশ্বিকভাবে একযোগে দাবি জানাই, ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন।

জুলাই বিপ্লবের নায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম বলেন, ইয়া গাযযাহ! তোমাদের শাহাদাত ও লড়াইয়ের প্রতি আমাদের সংহতি। বি-ইযনিল্লাহ, অচিরেই আমরা তোমাদের লড়াইয়ে শামিল হবো। গাজার প্রতি বৈশ্বিক সংহতির অংশ হোন। আগামীকাল সোমবার, ৭ এপ্রিল ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’- এই কর্মসূচি সফল করুন। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক রেজওয়ান আহমেদ রিফাত বলেন, ‘গঅজঈঐ ঋড়ৎ চধষবংঃরহব’ এর আহ্বানে আগামীকাল ৭ এপ্রিল বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে সংহতি সমাবেশ করার আহ্বান। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে বিকাল ৪টায় সংহতি এবং বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে আগামীকাল সারা বিশ্বব্যাপী হরতাল পালন করা হবে। একই সঙ্গে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের এই প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান রইল।

আজ বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনে আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। এক ফেসবুক পোস্টে এ তরুণ নেতা লিখেছেন, মানুষ ও মুসলিম হিসেবে এসব (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-অফিস-আদালত) বন্ধ রাখাতেই আমাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত নয় বরং দলমত নির্বিশেষে সারাদেশের ছাত্র-জনতা একসঙ্গে রাজপথে নেমে ইসরাইলী খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত। আমরা হয়তো এই মুহূর্তে আমাদের গাজার ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে পারবো না। কিন্তু তাদের লড়াইয়ের সঙ্গে একত্বতা ঘোষণা করতে নিজ ভূমির রাজপথে অন্তত নামতে পারবে। তিনি বলেন, এনসিপি, বিএনপি জামায়াত বা কোনো (রাজনৈতিক) দলের ব্যানারে নয় বরং দল-মত নির্বিশেষে ‘বাংলাদেশ’ ব্যানারে আগামীকাল আমরা রাজপথে নেমে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি। খুনি, রক্তপিপাসু নেতানিয়াহুর বিপক্ষে স্লোগান দিতে পারি। প্রত্যেক জেলায় ছাত্রজনতার প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকজন মিলে দায়িত্ব নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এই কর্মসূচি পালিত হোক। ৭ এপ্রিল কোনো দল, মত, পক্ষের হয়ে নয় বরং বাংলাদেশের পক্ষ হতে গাজার মজলুম মানুষের পক্ষে হোক।

প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। সর্বশেষ হামলায় দক্ষিণের খান ইউনিসে এক সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উত্তরের গাজা সিটিতে দুই শিশুও নিহত হয়েছে। গাজার খান ইউনিসে এক ভবনে ইসরাইলী বাহিনীর চালানো বোমা হামলায় কমপক্ষে আটজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরাইলী বাহিনী প্রতিদিন গড়ে ১০০ ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা বা আহত করছে। এ সংখ্যা বিশ্বব্যাপী গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।