পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, সরকার আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাবে, তবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে পর্যবেক্ষণ মিশনের অপব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক থাকবে।

গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা পর্যবেক্ষক হিসেবে আসতে চান, আমরা তাদের অবশ্যই উৎসাহিত করব। কিন্তু আমরা চাই না কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পর্যবেক্ষণের নামে আমাদের সুনাম ক্ষুণœ করতে আসুক। উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে আয়োজনের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং কমনওয়েলথসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনি মূল্যায়ন মিশন পাঠিয়েছে। আমরা মনে করি এটি একটি ইতিবাচক লক্ষণ।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আরও প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আসবে। তিনি বলেন, আমরা চাই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ হোক, যাতে নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ, স্বাধীন ও সুষ্ঠু হয়, তা সবার সামনে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। তৌহিদ হোসেন জোর দিয়ে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ মিশনগুলো নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা ও আস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, যদি তাদের কাজ নিরপেক্ষ এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়।

তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততাকে গুরুত্ব দেয় এবং গণতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে সহায়ক গঠনমূলক সহযোগিতাকে স্বাগত জানায়। এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ আদালতের আদেশ অনুযায়ী এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছে। তবে এখনো ভারতের পক্ষ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আদালতের আদেশ অনুযায়ী তার প্রত্যর্পণ চেয়েছি। তারা বিষয়টি তাদের দিক থেকে পর্যালোচনা করবে। এখনো তারা কোনো জবাব দেয়নি।

বাংলাদেশ গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ভারতকে প্রয়োজনীয় দলিলসহ একটি কূটনৈতিক নোট পাঠায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘তবে আপনারা যাঁরা গিয়েছিলেন (ভারত সফরে), তাঁদের বিষয়ে আমার একটা পর্যবেক্ষণ আছে। যেহেতু আপনি প্রশ্নটি তুললেন, কাজেই আমি বলছি। না হলে হয়তো বলতাম না। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব আপনাদের মুখে একটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন। আপনারা সে প্রশ্নটি করেননি কেউ। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেছিলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, ট্রান্সপারেন্ট ইত্যাদি নির্বাচন তারা চান। আপনার... আপনাদের মুখে প্রশ্নটা তুলে দেওয়া হয়েছিল যে আপনারা এই কথা গত ১৫ বছর বলেননি কেন? আগের নির্বাচনগুলো কি আপনাদের এই ফর্মুলা অনুযায়ী সঠিক ছিল ? আপনারা কেউ এই প্রশ্ন তোলেননি। আমি বড় অবাক হয়েছি যে আপনাদের মধ্যে যথেষ্ট পুরোনো জার্নালিস্ট অনেকে আছেন। আপনাদের উচিত ছিল এই সুযোগটা যখন উনি দিয়েছেনÑআপনারা যদি নিজে থেকে কিছু এমব্রারাস (বিব্রত) করতে না-ও চানÑযখন তিনি সুযোগটা দিয়েছেন, তখন সেই প্রশ্নটা আপনাদের করা উচিত ছিল। সেটা আপনারা করেননি।

চলতি মাসের শুরুর দিকে নয়াদিল্লি সফর করেন বাংলাদেশি একদল সাংবাদিক। তাঁদের সঙ্গে মতবিনিময়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছিলেন, বাংলাদেশে যত দ্রুত সম্ভব একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় নয়াদিল্লি। তিনি আরও বলেছিলেন, নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের রায় নিয়ে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তাদের সঙ্গে কাজ করবে ভারত।