বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাবেক উমেদার আব্দুল মান্নান তালুকদারসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২৪৫ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। বুধবার বাগেরহাট সদর থানায় মামলাটি করার কথা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। মামলার বাকি আসামিরা হলেন, আনিসুর রহমান, সালেহা বেগম ও জেসমিন নাহার। এর মধ্যে জেসমিন সাবেক উমেদার আব্দুল মান্নান তালুকদারের স্ত্রী।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে কোম্পানির জন্য উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে ১৯ হাজার ৯৬৭ জন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ২৪৫ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আমানত নিয়ে তা অন্যত্র স্থানান্তর করেন।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর সাবেক কর্মচারী আব্দুল মান্নান তালুকদার ১৯৮৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এমএলএসএস পদে চাকরি করেন। ২০১০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে যান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চাকরি অবস্থাতেই জমি কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মান্নান। ডিসি অফিসে চাকরির সুবাদে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। অবসরের পর তিনি ‘মানুষ মানুষের জন্য’ স্লোগানে ‘নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট’ নামে একটি আর্থিক লেনদেন প্রতিষ্ঠান চালু করেন। প্রতিষ্ঠানটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অ্যান্ড ফার্মস থেকে নিবন্ধিত হয়। যেটির ব্যবসার ধরণ ছিল রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ও জমি ক্রয়-বিক্রয়। এর মালিকানা ছিল কয়েকজনের। তবে ওই কোম্পানির ৯৫ ভাগ শেয়ারের মালিক আব্দুল মান্নান তালুকদার ও তার পরিবার। মাত্র ৫ ভাগ শেয়ারের মালিক ছিলেন মামলার ২ নম্বর আসামী মো. আনিসুর রহমান।
প্রাথমিক অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে সিআইডি বলেছে, নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে আমানতকারীদের অর্থের নিশ্চয়তাসহ সুদমুক্ত হালাল ব্যবসায় লাভবান হওয়ার বিষয়ে প্রচারণা চালানো হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের ৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ যেকোন পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করার মাধ্যমে ৪ থেকে ৫ বছরে বিনিয়োগকৃত অর্থ দ্বিগুণ করার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
সিআইডি বলছে, কোম্পানির শর্ত অনুযায়ী শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করার কথা ছিল। কিন্তু কোম্পানিটি উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে ১৯ হাজার ৯৬৭ জন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২৪৫ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আমানত গ্রহণ করে।
সিআইডি আরও জানিয়েছে, আব্দুল মান্নান সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগৃহ করা অর্থ থেকে ৬৬ কোটি ২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা নিজের মালিকানাধীন সাবিল গ্রুপের ছয়টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, অ্যাজাক্স জুট মিলস লিমিটেড, সাবিল ড্রেজিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, সাবিল জেনারেল হাসপাতাল, সাবিল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প, সাবিল ল প্লাজা ও সাবিল মৎস্য প্রকল্প। বাকি অর্থও নামে-বেনামে অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করার অভিযোগ এনে সিআইডি বলছে, প্রতারণার ঘটনা প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় মামলা করা হয়েছে।